আলোচনার পথে শান্তি ফেরানোর পথ খুঁজতে রবিবার শ্রীনগরে যাচ্ছেন সব দলের প্রতিনিধিরা। কিন্তু তার ৪৮ ঘণ্টা আগেও কাশ্মীর নিয়ে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে কেন্দ্র।
শরদ যাদব, সীতারাম ইয়েচুরির মতো বিরোধী নেতারা বলছেন, বৈঠক চাই হুরিয়ত নেতৃত্বের সঙ্গে। নয়তো ভূস্বর্গ সফরে যাওয়া অর্থহীন। অথচ হুরিয়ত আজও ফের জানিয়েছে, কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের কোনও প্রশ্নই নেই। কাশ্মীরের অন্য সব পক্ষকেও সর্বদলীয় প্রতিনিধিমণ্ডলীর সঙ্গে কথা না বলার ডাক দিয়েছে হুরিয়ত। নয়াদিল্লিকে চাপে রাখছে নিয়ন্ত্রণরেখার অশান্তিও। আজ দিনভর কাশ্মীরের আখনুরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতীয় সেনাছাউনিকে নিশানা গুলি চালিয়েছে পাক রেঞ্জাররা। জবাব দিয়েছে ভারতও। দু’পক্ষের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
এর মধ্যেও কেন্দ্র ও রাজ্যের মেহবুবা মুফতি সরকার চাইছে, কথা হোক কাশ্মীরের সব পক্ষের সঙ্গে। সে জন্য ছোট-ছোট দলে ভাগ হয়ে প্রায় তিরিশ জন প্রতিনিধি যাচ্ছেন কাশ্মীরে। কে কোন দলে থাকবেন, কেন্দ্র কী প্রস্তাব দেবে— এ সব ঠিক করতে কাল দুপুরে সব দলের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিরা।
হিজবুল জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকে টানা ৫১ কার্ফু ঘেরাটোপে ছিল অশান্ত উপত্যকা। কার্ফু তোলার পরেও শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা বারবারই উড়িয়ে দিয়েছেন হুরিয়ত নেতারা। বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি আজ ফের বলেছেন, ‘‘যাঁরা আসছেন, তাঁরা মনে করেন কাশ্মীর ভারতের অঙ্গ। ফলে এই প্রতিনিধি দলের না আছে কোনও অধিকার, না এঁরা আন্তরিক ভাবে চান কাশ্মীরের সমস্যা মিটুক।’’ নিজেরা তো যাবেনই না, কাশ্মীরের অন্য সব পক্ষকেও আলোচনা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন গিলানি। আর এক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা জেকেএলএফ-এর চেয়ারম্যান মহম্মদ ইয়াসিন মালিক অনড় গণভোটের দাবিতেই। ইয়াসিনের মতে, ‘‘আসলে বিশ্বের কাছে ‘লগবুক’ ঠিক রাখতেই আসছেন সর্বদলীয় প্রতিনিধিরা। যাতে দেখানো যায়, কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে ভারত কী কী চেষ্টা চালিয়েছে।’’ হুরিয়তের সুরেই কাশ্মীরের ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ আজ জানিয়েছে, তারা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে যাবে না। কারণ এতে সমস্যা মেটার কোনও সম্ভাবনা নেই।
কাশ্মীরে বিভিন্ন পক্ষ আলোচনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তবু কেন্দ্রকে চাপে রাখতে বিরোধী দলগুলির সম্মিলিত দাবি, আলোচনা চাই হুরিয়তের সঙ্গে। কাশ্মীরে অশান্তি শুরু হওয়ার পর থেকেই কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার উপর জোর দিচ্ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে একসুর হয়ে সিপিএমের দাবি, সরকার যদি সত্যিই কাশ্মীরে শান্তি চায়, তবে হুরিয়তকেও আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। ছ’বছর আগের সর্বদলীয় প্রতিনিধিমণ্ডলীর অভিজ্ঞতা থেকে সীতারাম বলেন, ‘‘সে বার আমরা হুরিয়তদের সঙ্গে বৈঠক করার পরেই পাথর ছোড়ার ঘটনা কমে আসে।’’ জেডিইউ-এর শরদ যাদব, সিপিআইয়ের ডি রাজা, এমআইএম-র আসাউদ্দিন ওয়াইসিরও বক্তব্য, হুরিয়ত আলোচনায় না এলে প্রতিনিধিদের সফরই অর্থহীন।
সরকারও যে তা বুঝছে না, এমন নয়। তাই গিলানি বা ইয়াসিন মালিকদের মতো কট্টরপন্থীরা না এলেও মিরওয়াইজ ফারুকের মতো নরমপন্থীরা যাতে বৈঠকে আসেন, তার জন্য সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাতে সরকারের মুখরক্ষাও হবে, আবার ভাঙন ধরানো যাবে হুরিয়ত ঐক্যে। প্রকাশ্যে না হলে গোপনেও যাতে বৈঠক সম্ভব হয়, চলছে তার চেষ্টা।
কিন্তু শেষ পর্ষন্ত এই অঙ্ক মিলবে তো? ঘোর সংশয় শাসক শিবিরেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy