কেতন ছোড়ভাদিয়া
শুক্রবার দুপুরে তখন দাউদাউ করে জ্বলছে সুরাতের সারতানা এলাকার তক্ষশীলা কমপ্লেক্সের উপরের দু’টো তলা। ব্যবসার কাজ সেরে ঠিক ওই সময় বাড়ি ফিরছিলেন এলাকার যুবক কেতন ছোড়ভাদিয়া। ওই বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের পিছনের এলাকায় তাঁর বাড়ি। কিন্তু আগুন লাগার খবর পেয়ে বাড়ি না গিয়ে কেতন সটান হাজির হন তক্ষশীলার সামনে। নীচের তলায় আটকে পড়া বেশ কিছু শিশুকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যান। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই চলে যান ওই বহুতলের পিছনের দিকে। সেখান থেকে তখন একের পর এক পড়ুয়া প্রাণ বাঁচাতে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দোতলার উপরে একটা সরু কার্নিশের উপরে উঠে পড়েন কেতন। কয়েক জনকে সুরক্ষিত অবস্থায় নেমে আসতে সাহায্যে করেন। স্থানীয় কাগজ আর সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর কথা ছড়িয়ে পড়তেই নেটিজেনদের অনেকেই কেতনের ছবি শেয়ার করে তাঁর বীরত্বকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। এক নেটিজেন লিখেছেন, ‘‘এ ভাবেই সাধারণ মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে অসাধারণ নায়ক হয়ে ওঠে...।’’
এত জনের প্রাণ বাঁচিয়েও কেতনের অবশ্য তেমন হেলদোল নেই। জানালেন, রাত দশটার পরে বাড়ির মূল দরজা বন্ধ করে দেন তাঁর বাবা। ফলে কোথাও থেকে ফিরতে বেশি রাত হলে পাঁচিল টপকে, পাইপ বেয়ে দোতলা বাড়িতে উঠতে হয় তাঁকে। আর সেখান থেকেই উঁচু জায়গায় ওঠা রপ্ত করে ফেলেছেন তিনি। তবে এতগুলো জীবন বাঁচিয়েও একটা আফসোস যাচ্ছে না কেতনের। বললেন, ‘‘আমার চোখের সামনে একটি মেয়ে উপর থেকে ঝাঁপ দিল। আমি চেষ্টা করেও ওকে লুফতে পারিনি। রাস্তায় ওর অসাড় দেহ পড়ে থাকার দৃশ্যটা আমি কোনও দিন ভুলব না। তবে হ্যাঁ, যে ক’জনকে বাঁচাতে পেরেছি, সেটাই আমার কাছে বড় তৃপ্তি।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে দমকলের দফতর হলেও উদ্ধারকারীদের আসতে আসতে লেগে যায় প্রায় ৪৫ মিনিট। ততক্ষণে অনেকেই ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন, অথবা আগুনের তাপ সহ্য করতে না পেরে ঝাঁপ দিয়েছেন। মৃতদের মধ্যে বেশির ভাগের বয়স ১৭ থেকে ২২-এর মধ্যে। একটি তিন বছরের শিশুও কাল গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আজই সুরাতের ওই বহুতল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন পুলিশ কমিশনার। মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী ইতিমধ্যেই রাজ্যের সব স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টার এবং শপিং মলগুলির অগ্নি নিবার্পণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ। কালকের ঘটনার তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন রূপাণী। পুলিশ জানিয়েছে, যে কোচিং সেন্টারে কাল প্রাথমিক ভাবে আগুন লেগেছিল, তার মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় আরও দুই অভিযুক্ত এখনও পলাতক।
পুলিশ জানিয়েছে, কালকের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২২। মৃতের মধ্যে ১৬ জনই ছাত্রী। তাঁদের মধ্যে তিন জনের উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হয়েছে আজ। তিন জনেই পাশ করেছেন ভাল ভাবে। আহতদের মধ্যে দুই ছাত্রের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। আইসিউতে রাখা হয়েছে আরও কয়েক জন অগ্নিদগ্ধকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy