Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সৌগতের সুরে সুষমাকে তির, অস্বস্তি তৃণমূলে

একা সৌগতে রক্ষা নেই! উজ্জ্বল, অসীমা, মালা, বেচারামেরা দোসর! টেলিভিশন চ্যানেলে প্রশ্নের জবাবে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের পদত্যাগ দাবি করে ফেলেছিলেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৫ ০৩:৩৪
Share: Save:

একা সৌগতে রক্ষা নেই! উজ্জ্বল, অসীমা, মালা, বেচারামেরা দোসর!

টেলিভিশন চ্যানেলে প্রশ্নের জবাবে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের পদত্যাগ দাবি করে ফেলেছিলেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়। পরের দিনই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে তাঁর বক্তব্য নস্যাৎ করে দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেছিলেন, সৌগতবাবুর বক্তব্য তাঁর ‘ব্যক্তিগত মত’ হতে পারে। দলের বক্তব্য নয়। কিন্তু এ বার বিধানসভাতেই দলের সেই ‘লাইন’ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন তৃণমূলের একাধিক বিধায়ক! বিজেপি-র একমাত্র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যকে থামাতে গিয়ে বিধানসভার মধ্যেই সোৎসাহে বিদেশমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে গেলেন! যার প্রেক্ষিতে তৃণমূলেরই একাংশ বলছে, উপর তলায় যা-ই সমঝোতার বার্তা থাকুক, দলের সাধারণ নেতা-কর্মী মহলের প্রকৃত মনোভাব এই ঘটনাতেই স্পষ্ট!

বেসরকারি লগ্নিসংস্থায় আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বৃহস্পতিবার বিধানসভায় সংশোধনী বিল পাশের সময়কার ঘটনা। বিলের উপরে বলতে উঠে বিজেপি-র শমীক প্রশ্ন তুলছিলেন, ওই ধরনের সংস্থার কাজকর্ম থামাতে তৃণমূল সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে। রাজ্য সরকারের গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) কী কাজের কাজ (সারদা-কাণ্ডে) করেছিল, সরব হয়েছিলেন তা নিয়েও। আর তাতেই ক্ষিপ্ত শাসক দলের বিধায়কেরা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তাঁকে পাল্টা টিপ্পনি করতে। শাসক বেঞ্চ থেকে প্রথম শোনা গেল উজ্জ্বল প্রামাণিকের গলা, ‘‘দিল্লিতে ললিত মোদীর কী হল?’’ তাঁর দেখাদেখি সুর চড়িয়ে ফেললেন অন্য বিধায়কেরাও। মালা সাহা জানতে চাইলেন, সুষমা স্বরাজ কী করেছেন? ক্রিকেট-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ললিত মোদীর পাশে দাঁড়িয়ে সুষমা বিজেপি-র স্বচ্ছ সরকারের দাবি ভেঙে দিয়েছেন, এমনটাই বোঝাতে চাইছিলেন তৃণমূল বিধায়কেরা। সদ্য পরিষদীয় সচিবের পদ হারানো অসীমা পাত্র তো শমীকের উদ্দেশে সরাসরি মন্তব্য ছু়ড়লেন, সুষমা ইস্তফা দিচ্ছেন না কেন? তাঁদের বিরুদ্ধে বিজেপি বিধায়ক দুর্নীতির অভিযোগ করছেন দেখে উত্তেজিত মন্ত্রী বেচারাম মান্নাও একই মন্তব্য করলেন কেন্দ্রের সুষমাকে জড়িয়ে!

বিধানসভায় বর্ধমানের উজ্জ্বলবাবুর সামনের সারিতে আসন বৌবাজারের বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দলীয় সতীর্থেরা বিদেশমন্ত্রীকে নিয়ে হইচই করছেন দেখে নয়নাকে আবার উজ্জ্বলবাবুর কানে তুলে দিতে শোনা যায়, শুধু সুষমা কেন? রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজেও তো অন্যায় করেছেন! তৃণমূল বিধায়কেরা বসুন্ধরা-প্রসঙ্গ তোলার আগেই অবশ্য শমীকের বক্তব্য শেষ হয়ে যায়। তাই সেই অস্ত্র ব্যবহারের আর দরকার পড়েনি!

ঘটনাচক্রে, তৃণমূল বিধায়কদের আগেই নাম না করে সৌগত-পর্ব নিয়ে এ দিন খোঁচা দিয়েছিলেন কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব। দুর্নীতির ঘটনার সঙ্গে এ রাজ্যের শাসক দলের আপসের মনোভাব বোঝাতে গিয়ে সোহরাব বলেন, ক্রিকেট-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত এক জনের পাশে বিদেশমন্ত্রী কেন দাঁড়িয়েছেন, প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান সাংসদ। কিন্তু তাঁর মুখ বন্ধ করে দেওয়া হল! তখনও অবশ্য তিনি জানতেন না, সেই পর্ব ভুলে সুষমা নিয়ে মুখ খুলে ফেলবেন তৃণমূল বিধায়কেরাই!

বিধানসভায় দলের বিধায়কেরা কী বলবেন, ঠিক করে দেন পরিষদীয় নেতৃত্বই। প্রতিপক্ষকে থামাতে কটাক্ষ করতে গিয়ে দলের লাইন ভাঙা চলবে না, এই পরামর্শ কি তবে বিধায়কদের দেওয়া হয়নি? মুখ্য সরকারি সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে ঘটনাপ্রবাহ যে তাঁদের যথেষ্ট বিড়ম্বনায় ফেলেছে, একান্তে মেনে নিচ্ছেন শাসক শিবিরের একাধিক নেতাই। এক বিধায়কের কথায়, ‘‘বিজেপি-কে পাল্টা আক্রমণ করার উত্তেজনায় অনেকেরই মাথায় ছিল না, কোনটায় বারণ আছে দলের!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE