বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্র।
শুধু ইষ্টদেবতা নন! রাষ্ট্রদেবতাও তিনি। তাই তাঁর আশীর্বাদ শিরোধার্য হলেও ভোটপ্রচারে তাঁকে নিয়ে টানাটানি নৈব নৈব চ!
জগন্নাথদেবের খাসতালুক পুরীতে এ হেন পরম্পরা এ বার ক্ষুণ্ণ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তির, বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্রের বিরুদ্ধে। এ যাবৎ, টিভি চ্যানেলে বা সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্ষুরধার বাক্যবাণে আসর মাতালেও প্রথমবার প্রার্থী হয়েই সম্বিৎ কিছুটা কাঁচা কাজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার ভুবনেশ্বর থেকে পুরী রোড শোয়ে জগন্নাথমূর্তি সামনে রেখে যাত্রা করেছিলেন সম্বিৎ।
তাতেই চোখ কপালে উঠেছে, পুরীর মন্দিরের পূজ্য সেবায়েতকুল থেকে উৎকলদেশের জগন্নাথ ভক্তদের বড় অংশের। প্রতিবাদে সরব বিজেপির বিরোধীরাও। নির্বাচন কমিশনের কাছে বিধিভঙ্গের অভিযোগও উঠেছে। বেগতিক দেখে, পুরী কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী সম্বিৎ কার্যত ক্ষমা প্রার্থনা করে তাঁর এই ভুল অনিচ্ছাকৃত বলে ব্যাখ্যা দেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তাতে অবশ্য রাগ পড়ছে না পুরীর মন্দিরের বিদগ্ধজনের। জগন্নাথ মন্দিরের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য তথা অন্যতম বর্ষীয়ান সেবায়েত রামচন্দ্র দয়িতাপতি বুধবারও পুরী থেকে আনন্দবাজারকে ফোনে বললেন, ‘‘যা হয়েছে, তা স্পষ্ট জগন্নাথ সংস্কৃতির অবমাননা। জগন্নাথদেব মন্দির থেকে বেরোলে রথে আসীন হন। পায়ে জুতো পরে গাড়িতে বা জিপে প্রভু (জগন্নাথ)-কে নিয়ে রাস্তায় নামা কি শোভন ব্যবহার!’’ সম্বিৎ অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রোডশোয়ে বেরনোর পরে দলীয় সমর্থকেরা তাঁর হাতে জগন্নাথদেবের বিগ্রহ তুলে দিয়েছিলেন! তাঁদেরই বা কী করে বিমুখ করেন! তবু জগন্নাথদেবকে রাজনীতির ময়দানে কার্যত টেনে নামানো নিয়ে সমালোচনার সুর কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে।
ওড়িশার মানুষের মুখে মুখে ঘোরা দু’ছত্র কবিতার লাইন, এমনিতে উৎকল ও প্রভু জগন্নাথের সম্পর্কের গভীরতাই মেলে ধরে। ‘উৎকলর বিশেষে নাহি প্রয়োজন/উৎকলর নেতা নিজ নারায়ণ!’ অর্থাৎ, ওড়িশার নেতা একমেবাদ্বিতীয়ম নারায়ণ বা জগন্নাথদেব। এই বিশ্বাস মাথায় রেখেই দলমত নির্বিশেষে জগন্নাথদেবকে দলীয় পতাকার সভা-মিছিলে টেনে আনাটা গর্হিত বলে মনে করতেন ওড়িশার রাজনীতিবিদেরা। সম্বিৎ সেই রীতি ভঙ্গ করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। জগন্নাথ মন্দিরের দয়িতাপতিদের নিজোগ বা সমিতির প্রধান তথা বিজেডি-ঘনিষ্ঠ রাজেশ দয়িতাপতিও বলছেন, ‘‘সব নেতাই মন্দিরে জগন্নাথদেবের আশীর্বাদ চাইতে আসেন। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জগন্নাথদেবের বিগ্রহ ব্যবহার করাটা উচিত কাজ নয়।’’
এই পরিস্থিতিতে ওড়িশার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুরেন্দ্র কুমারের দ্বারস্থ হয়েছে কংগ্রেস-শিবির। কংগ্রেসের তরফে অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘ধর্ম, জাত বা সংস্কৃতির নামে ভোটপ্রচার করাটাও আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় জগন্নাথের ছবি ব্যবহার করেও প্রার্থী (সম্বিৎ) আচরণ-বিধি লঙ্ঘন করেছেন।’ আগামী ২৩ এপ্রিল পুরীতে সম্বিৎের ভাগ্যপরীক্ষা। তবে তাঁর প্রতিপক্ষ বিজেডি বা কংগ্রেস এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি। পুরীতে মোটরবাইক-মিছিল করে মন্দিরে ঢুকে প্রভুর দর্শন করেন সম্বিৎ। এই মোটরবাক-মিছিলেরও অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে পুরীর কালেক্টর বিজেপি-প্রার্থীকে নোটিস দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy