Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাজির আগুনে শুরুর আগেই চাপে খাট্টার

হরিয়ানায় জাঠেদের আধিপত্য ভাঙতে অ-জাঠ নেতা মনোহরলাল খাট্টারকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বেছে নিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। বংশীলালের পর প্রায় আঠারো বছর বাদে কোনও অ-জাঠ নেতা হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। আরএসএসের প্রচারক হিসেবে এক সময়ে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করেছেন খাট্টার। তাঁর মন্ত্রিসভা আগামী সপ্তাহের শুরুতে শপথ নেবে।

সাংবাদিক বৈঠকে মনোহরলাল খাট্টার। মঙ্গলবার চণ্ডীগড়ে পিটিআইয়ের ছবি।

সাংবাদিক বৈঠকে মনোহরলাল খাট্টার। মঙ্গলবার চণ্ডীগড়ে পিটিআইয়ের ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৩৪
Share: Save:

হরিয়ানায় জাঠেদের আধিপত্য ভাঙতে অ-জাঠ নেতা মনোহরলাল খাট্টারকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বেছে নিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। বংশীলালের পর প্রায় আঠারো বছর বাদে কোনও অ-জাঠ নেতা হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। আরএসএসের প্রচারক হিসেবে এক সময়ে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করেছেন খাট্টার। তাঁর মন্ত্রিসভা আগামী সপ্তাহের শুরুতে শপথ নেবে।

আজ সন্ধ্যায় ফরিদাবাদে বাজির বাজারে আগুন লাগায় আনুষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই খাট্টার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেন বলে মনে করা হচ্ছে। দীপাবলির আগে ফরিদাবাদের দশেরা ময়দানে বাজির বাজারের আয়োজন করা হয়। সেই বাজারেই আগুন লাগে আজ। ২৩০টি দোকান পুড়ে যায়। আহত হন ৫ জন। আগুন সামলাতে যায় দমকলের বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন।

খাট্টারের দফতর থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আগুনে ২০টি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকার বাজি। ফরিদাবাদের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কৃষ্ণগোপাল গুজ্জর জানান, বিষয়টি নিয়ে ফরিদাবাদের ডেপুটি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন খাট্টার। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ভাবী মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি ভাবে আগুন লাগার কারণ নিয়ে কোনও কথা বলা হয়নি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে।

মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে আজ সকালে চণ্ডীগড়ে বৈঠকে বসে বিজেপির বিধায়ক দল। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হরিয়ানার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। বৈঠকের শুরুতেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য অ-জাঠ কোনও নেতাকেই বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে জাঠ নেতা ক্যাপ্টেন অভিমন্যু প্রথমেই দৌড় থেকে বাদ পড়ে যান। দলীয় সূত্রের খবর, তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় লড়াইটি হতে চলেছে দুই অ-জাঠ নেতা মনোহরলাল খাট্টার ও রামবিলাস শর্মার মধ্যে। প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও সঙ্ঘ পরিবারের সমর্থন পাওয়া খাট্টারের নামেই শেষ পর্যন্ত সমর্থন জানান অধিকাংশ বিধায়ক। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্ভবত আগামী ২৬ অক্টোবর শপথ নিতে চলেছে খাট্টারের মন্ত্রিসভা। প্রথম বার বিধায়ক হিসেবে জিতেই মুখ্যমন্ত্রী হলেন তিনি।

অবিবাহিত খাট্টার হরিয়ানা রাজনীতিতে শুরু থেকেই কৌশলী নেতা হিসাবে পরিচিত। প্রথম জীবনে সঙ্ঘ পরিবারের হয়ে প্রচারকের কাজে হিমাচলপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন খাট্টার। সেখানেই তাঁর পরিচয় হয় সহ-প্রচারক নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। সেই ঘনিষ্ঠতা এখনও অটুট। প্রথম বার বিধায়ক হয়েও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে বেছে নেওয়ার পিছনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও একটি বড় কারণ বলেই মনে করেছে বিজেপি শিবির। দ্বিতীয় কারণটি হল, ওই রাজ্যে দীর্ঘ দিন ধরে জাঠদের যে প্রাধান্য রয়েছে তা ভাঙার পরিকল্পনা নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। যে ভাবে তাঁরা লোকসভায় উত্তরপ্রদেশে যাদব ভোটব্যাঙ্কের সমীকরণ ভেস্তে দেন, ঠিক সে ভাবেই বিধানসভা নির্বাচনে মোদীর লক্ষ্য ছিল হরিয়ানায় জাঠেদের আধিপত্যকে ভেঙে অ-জাঠ ভোটকে একত্রিত করা। যার জোরে প্রথম বার একক ভাবে হরিয়ানায় ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি।

যে ভাবে অ-জাঠ শ্রেণি এবার একজোট হয়ে বিজেপির পাশে দাঁড়িয়েছে তার পর কোনও জাঠ নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া কার্যত অসম্ভব ছিল দলের কাছে। তাই একজন অ-জাঠকেই মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ঠিক হয় মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসানো হবে পঞ্জাবি কোনও নেতাকেই। কারণ, হরিয়ানার রাজনীতিতে পঞ্জাবি ও জাঠেদের বিরোধ দীর্ঘদিনের। রাজনীতি থেকে প্রশাসন-সব ক্ষেত্রেই কর্তৃত্বের প্রশ্নে সংঘাত রয়েছে দু’পক্ষে। তাই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার নীতি মেনে প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন তথা পঞ্জাবি নেতা খাট্টারের নামেই সম্মতি দেয় দল।

কিন্তু প্রশ্ন হল, মোদী তথা সঙ্ঘ পরিবার খাট্টারের উপরে ভরসা রাখলেও প্রশাসন চালানোর প্রশ্নে একেবারে অনভিজ্ঞ ওই নেতা পারবেন কি জাঠেদের বিরোধিতা সামলাতে? দল মনে করছে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় আশু কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে রাজনীতি ও প্রশাসন-দু’টি ক্ষেত্রেই জাঠেদের বিরোধের সম্মুখীন হতে হবে আনকোরা খাট্টারকে। তা ছাড়া এ বার ওই রাজ্যে সর্বস্তরেই বিজেপির বিরুদ্ধে জাঠেদের সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

এমনকী বিজেপির জাঠ নেতাদের একাংশ ঘরোয়া ভাবে ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত অ-জাঠ নেতাকে বেছে নেওয়ায় প্রকাশ্যে কোনও নেতা বিরূপ মন্তব্য না করলেও ঘরোয়া ভাবে নিজেদের অস্বস্তি তাঁরা চেপে রাখেননি। প্রশাসনে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে এখন ওই জাঠ নেতাদের একাংশ অর্থ বা স্বরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব অভিমন্যুর হাতে দেওয়ার জন্য দলে তদ্বির করা শুরু করেছেন। বিজেপি সূত্রের খবর, খাট্টার স্বরাষ্ট্র দফতর নিজের হাতে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও, জাঠেদের শান্ত করতে অর্থ দফতরের দায়িত্ব সম্ভবত দেওয়া হবে অভিমন্যুকে। হরিয়ানার প্রশাসনে জাঠ আমলারা শক্তিশালী। তাঁদের বিরোধিতাও সামলাতে হতে পারে নয়া মুখ্যমন্ত্রীকে।

তাই খাট্টারের সামনে যে এখন বড় চ্যালেঞ্জ তা মেনে নিচ্ছেন বিজেপি নেতারাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE