Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
এল শহিদের দেহ, আক্ষেপ মায়ের

আমার সব গেল! অশান্তি থামুক কাশ্মীরে

জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, খবর এসেছিল স্বাধীনতা দিবসের দুপুরে। শোকস্তব্ধ এলাকায় বাতিল হয়ে গিয়েছিল সমস্ত অনুষ্ঠান। শ্রীনগরে সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষে নিহত সিআরপি-র কম্যান্ডিং অফিসার প্রমোদ কুমারের (৪৪) দেহ ঝাড়খণ্ডের মিহিজামে পৌঁছনোর পরে ভিড় ভেঙে পড়ল তাঁর বাড়ির সামনে। বাড়ি থেকে শ্মশান পর্যন্ত দেহ কাঁধে করে নিয়ে গেল জনতাই।

শেষযাত্রায় সামিল জনতা।

শেষযাত্রায় সামিল জনতা।

সুশান্ত বণিক
মিহিজাম শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৭
Share: Save:

জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, খবর এসেছিল স্বাধীনতা দিবসের দুপুরে। শোকস্তব্ধ এলাকায় বাতিল হয়ে গিয়েছিল সমস্ত অনুষ্ঠান। শ্রীনগরে সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষে নিহত সিআরপি-র কম্যান্ডিং অফিসার প্রমোদ কুমারের (৪৪) দেহ ঝাড়খণ্ডের মিহিজামে পৌঁছনোর পরে ভিড় ভেঙে পড়ল তাঁর বাড়ির সামনে। বাড়ি থেকে শ্মশান পর্যন্ত দেহ কাঁধে করে নিয়ে গেল জনতাই।

১৯৯৮ সালে সিআরপিতে যোগ দেন প্রমোদ কুমার। আঠেরো বছরের কর্মজীবনে কাজ করেছেন দেশের নানা প্রান্তে। ২০১১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষায় নিযুক্ত বিশেষ দলেও। তার পরেই শ্রীনগরে যান। স্বাধীনতা দিবসের সকালে সেখানে নওহাট্টায় জঙ্গি হামলার মোকাবিলা করার সময়ে গুলি লাগে সিআরপিএফের ৪৯ ব্যাটেলিয়নের এই অফিসারের মাথায়।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রত্যেক স্বাধীনতা দিবসে সকালে বাড়িতে ফোন করতেন প্রমোদ। কিন্তু এ বার সেই ফোন না আসায় পরিজনেরা খানিকটা চিন্তায় ছিলেন। সকাল ১১টা নাগাদ স্ত্রী নেহা দেবী ফোনে প্রথম খবর পান, জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে স্বামী জখম হয়েছেন। তখনই প্রমাদ গোনেন। ঘণ্টাখানেক পরেই ফোনে দুঃসংবাদটা আসে। তবে সে দিন বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে তা জানাননি তিনি। যদিও এলাকার লোকজন খবর পেয়ে যান। এলাকায় ঘুরে যায় পুলিশের গাড়িও। স্থানীয় বাসিন্দা বিক্রম ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘সারা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি। দেহ আসার পরে কী ভাবে পরিবারের লোকজনকে সামলাব, সেই চিন্তা হচ্ছিল।’’

এ দিন সকাল থেকেই মিহিজামের জামতাড়া রোডের দোতলা বাড়িটার সামনে ছিল থিকথিকে ভিড়। জাতীয় পতাকা হাতে জড়ো হয়েছিলেন আশপাশের এলাকার বহু মানুষ। সকালে ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে বাকরুদ্ধ প্রমোদের বাবা প্রভু মিস্ত্রি ও মা কুসুম দেবী। কুসুম দেবী বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন আর মাঝেমাঝেই বলে উঠছিলেন, ‘‘আমার সব চলে গেল! কাশ্মীরে এ বার অশান্তি থামুক।’’ প্রমোদ-নেহার ছ’বছরের মেয়ে অনন্যা অবশ্য বিশেষ কিছু বুঝতে পারছিল না বলে জানান পরিবারের আত্মীয় অরুণকুমার পাণ্ডে।

বাবাকে স্যালুট মেয়ের। মঙ্গলবার শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।

সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ কফিনবন্দি দেহ এসে পৌঁছয় বাড়িতে। স্বামীর গলায় মালা দিয়েই জ্ঞান হারান নেহাদেবী। কপালে হাত ঠেকিয়ে বাবাকে শেষ স্যালুট জানায় অনন্যা। এর পরেই দেহ রওনা দেয় চিত্তরঞ্জন শ্মশানের দিকে। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক হাজার মানুষ কাঁধে তুলে নেন শহিদের দেহ। শেষযাত্রায় ছিলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি তথা রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী রনধীর সিংহ, জামতাড়ার বিধায়ক ইরফান আনসারি, ঝাড়খণ্ড পুলিশের কর্তা রমেশকুমার দুবে, সিআরপিএফের ডিজি নীতিশ কুমার, এ রাজ্যের তরফে বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়, পুলিশ কমিশনার লক্ষীনারায়ণ মিনা। দুপুর ১টা নাগাদ শ্মশানে পুলিশ এবং সিআরপিএফের তরফে ৬৩টি গান স্যালুট দেওয়া হয় নিহত অফিসারকে। প্রমোদের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস।

প্রমোদের সহকর্মী সিআরপিএফের এক অফিসার জানান, স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে স্ত্রী নেহা তাঁকে মেয়ের নাচের একটি ভিডিও পাঠান। সেটি দেখিয়ে মেয়ে কত বড় হয়ে গিয়েছে, তা বন্ধুদের দেখাচ্ছিলেন প্রমোদ। পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাবা কবে আসবে, তা জানতে চেয়ে অনন্যা একটি চিঠি লিখেছিল বাবাকে। এ দিন সেটি বাবার কফিনের উপরে রেখে দেয় সে।

(সহ-প্রতিবেদন: আর্যভট্ট খান)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Martyr Independence day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE