Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হামলার আগুনে পুড়ছে মোদীর আফ্রিকা-নীতি

এগারো দিন আগে শুরু। গভীর রাতে দিল্লির বসন্তকুঞ্জে বচসার জেরে কঙ্গোর নাগরিক এম কে ওলিভারকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় কিছু যুবকের বিরুদ্ধে। পরের কয়েক দিন জুড়ে রাজধানীতে আফ্রিকার নাগরিকদের উপরে একাধিক হামলার ঘটনা। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কখনও নাইজেরীয় নাগরিকদের হাতাহাতি।

আফ্রিকার ছাত্রদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে বৈঠকে বিদেশ সচিব এস জয়শঙ্কর। সোমবার। — পিটিআই

আফ্রিকার ছাত্রদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে বৈঠকে বিদেশ সচিব এস জয়শঙ্কর। সোমবার। — পিটিআই

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০৪:৫০
Share: Save:

এগারো দিন আগে শুরু। গভীর রাতে দিল্লির বসন্তকুঞ্জে বচসার জেরে কঙ্গোর নাগরিক এম কে ওলিভারকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় কিছু যুবকের বিরুদ্ধে। পরের কয়েক দিন জুড়ে রাজধানীতে আফ্রিকার নাগরিকদের উপরে একাধিক হামলার ঘটনা। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কখনও নাইজেরীয় নাগরিকদের হাতাহাতি। কখনও ক্রিকেট ব্যাট, লাঠি হাতে উগান্ডার পরিবারের গাড়ি ভাঙচুর। এমন সব ঘটনার মধ্যেই সোমবার ভোররাতে দিল্লির মেহরৌলি এলাকায় ছয় আফ্রিকাবাসী যুবকের হাতে আক্রান্ত ওলা ক্যাবের চালক নুরউদ্দিন। ট্যাক্সি চালকের অভিযোগ, ভোরবেলা গাড়িতে তুলতে অস্বীকার করায় আফ্রিকার যুবকেরা তাকে মারধর করে। ১০হাজার টাকাও তারা লুঠ করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই চালক।

রাজধানীতে এই উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেই আজ ওলিভারের আত্মীয়রা নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন তাঁর দেহ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। এগারো দিন আগে ২৯ বছরের কঙ্গোর যুবকটির উপর চড়াও হয়েছিল স্থানীয় তিন যুবক। অভিযোগ, একটি অটো রিক্শা ভাড়া করা নিয়ে বচসার শুরু। তার পর পাথর দিয়ে বারবার আঘাত করে ওলিভারকে মারা হয় বলে স্বীকার করেছে তিন জনের মধ্যে এক ধৃত ব্যক্তি। আজ ওলিভারের আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করেন বিদেশ মন্ত্রকে পশ্চিম আফ্রিকার দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব বীরেন্দ্র যাদব। সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি দোষীদের দ্রুত শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

তবে একের পর এক ঘটনায় থমকে গিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সাধের আফ্রিকা নীতি। সরকারে আসার পরে গুরুত্বের শীর্ষ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল যা, এখন তাকে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরিয়ে নিতেই নাজেহাল অবস্থা। কী ভাবে পরিস্থিতি সামলানো যায়, তা নিয়ে আজ দিনভর ব্যস্ততা ছিল বিদেশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। আফ্রিকার নাগরিকরা রাজধানীর যে এলাকাগুলিতে থাকেন, সেখানে নিরাপত্তার যাবতীয় ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেছে পুলিশ। গোটা বিষয়টি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে ঘরেবাইরে শুধু মুখই পুড়ছে না, আরও বৃহত্তর অস্বস্তি তৈরি হতে পারে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল শিবির। অবস্থা সামলাতে মাঠে নেমেছেন সরকারের কর্তারা। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় আজ রাষ্ট্রদূতদের সম্মেলনে ভারত-আফ্রিকার ঐতিহাসিক সংযোগের কথা তুলে ধরে বলেছেন, এই ঘটনায় তিনি মর্মাহত। স্বরাষ্ট্র ও বিদেশ মন্ত্রক ভারতে পড়তে আসা আফ্রিকার ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে— সেই আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। আগামী মাসে রাষ্ট্রপতি যাচ্ছেন আফ্রিকার তিনটি দেশে। সেই সফরটিকেও ক্ষত মেরামতির কাজে ব্যবহার করার ভাবনাচিন্তা চলছে।

জখম গাড়িচালক নুরউদ্দিন

সরকারে আসার পর নতুন আফ্রিকা নীতি নিয়ে ঝাঁপিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। স্বাধীনতার পর গত বছরেই প্রথম বার আফ্রিকার সবক’টি দেশ (৫৪)-কে দিল্লিতে আমন্ত্রণ করে একটি মহামঞ্চ তৈরি করার কাজ শুরু করেন তিনি। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘আফ্রিকার সঙ্গে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে দিকগুলি আমরা বিজ্ঞাপিত করেছি, তার মধ্যে অন্যতম হল মানুষের সমানাধিকার, ন্যায়বিচার এবং সম্মান পাওয়ার লড়াইকে যৌথ ভাবে প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু ভারতের মাটিতে পর পর আফ্রিকাবাসীর উপর হামলার ঘটনা মাথা হেঁট করে দিল।’’ কয়েক মাস আগেই নয়াদিল্লিতে আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনে এই মহাদেশের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছিলেন মোদী। মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘শিল্প ও বাণিজ্যে ভারত এবং আফ্রিকার বাজার একে অপরের পরিপূরক। আফ্রিকার সঙ্গে অংশীদারির ফলে ওই মহাদেশে ভারতের বিনিয়োগ বাড়বে। আফ্রিকাও ভারতীয় বাজার ধরতে পারবে।’’

মনমোহন সরকারের সময় থেকেই আফ্রিকার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া শুরু করেছিল নয়াদিল্লি। ২০০৮-এ আফ্রিকার ৩৪টি দেশকে ভারতীয় বাজারে নিঃশুল্ক প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। যার ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়। সব চেয়ে বড় কথা, চিন যখন চতুর্দিক থেকে ভারতকে ঘিরছে, তখন আফ্রিকায় ভারতীয় বিনিয়োগ চিনের থেকেও বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে।

তবে আজকের যা পরিস্থিতি, তা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে নয়াদিল্লির। বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্রের বক্তব্য, বিদেশনীতির প্রশ্নে বহু প্রয়াসে তৈরি করা সম্পর্ক অনেক সময়েই আপাত ভাবে ক্ষুদ্র অথচ স্পর্শকাতর কোনও কারণে ধাক্কা খেয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে বর্ণবৈষম্যের যে প্রশ্ন উঠছে, তা আফ্রিকার দেশগুলির আবেগের কাছে অত্যন্ত গুরত্বের। এই ঘটনায় ভারত সম্পর্কে যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে, তা পরে দু’দেশের বাণিজ্য সম্পর্কেও বড় ছাপ ফেলতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Africa Nerendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE