লে-তে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ওমর আবদুল্লা। মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নওয়াজ শরিফকে ডেকে সুম্পর্কের বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু দু’মাস পরেই জম্মু ও কাশ্মীরে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
লে ও কার্গিলে কয়েকটি অনুষ্ঠানে আজ মোদী যেমন পাকিস্তানকে লক্ষ্য করেছেন, তেমনই রাজ্যে সন্ত্রাসের শিকার হওয়া মানুষগুলির পুনর্বাসনের প্রসঙ্গও উঠেছে তাঁর কথায়। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের পরে এই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রী সেখানে গেলেন। আর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটা ছিল কাশ্মীরে মোদীর দ্বিতীয় সফর।
বেশ কিছু দিন ধরে পুঞ্চের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাকিস্তান সংষর্ঘ বিরতি লঙ্ঘন করছিল। যার জবাবও দিতে হচ্ছিল ভারতীয় সেনাকেও। এর সঙ্গেই চলছিল জঙ্গি কার্যকলাপ। গত কাল রাতেই পুলওয়ামা জেলায় বিএসএফের গাড়ি নিশানা করে আক্রমণ হয়েছে। যাতে সাত জওয়ান সহ- আহত হয়েছেন আট জন। তার পরেই আজ মোদীর বক্তব্যে ছিল চড়া সুর। সেনা ও বায়ুসেনার জওয়ানদের উদ্দেশে মোদী বলেন, “আমাদের প্রতিবেশী দেশ প্রচলিত যুদ্ধে লড়ার শক্তি হারিয়েছে। তাই আমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তারা।” প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ, ভারতের সেনাবাহিনী যুদ্ধের থেকে সন্ত্রাসবাদের বলি হচ্ছে বেশি। সন্ত্রাসবাদকে আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে তুলে ধরে গোটা বিশ্বে এর বিরুদ্ধে প্রচারে যাওয়ার কথাও বলেছেন মোদী।
কিছু দিন আগেই পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে নতুন সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ মন্তব্য করেছিলেন, ভারতীয় সেনার মুণ্ডচ্ছেদের মতো কোনও ঘটনা যদি আর কখনও ঘটে, তা হলে পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দেওয়া হবে। আজ মোদীর কথাতেও ছিল চড়া সুর। এ মাসের শেষ সপ্তাহে ইসলামাবাদে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সচিব পর্যায়ের বৈঠক নির্ধারিত রয়েছে। তার আগে মোদীর এই বক্তব্য যদিও শান্তি প্রক্রিয়াকে কোনও ভাবেই প্রভাবিত করবে না বলেই দিল্লির কূটনৈতিক শিবিরের মত। তাঁদের অনেকেরই ব্যাখ্যা, নিয়ন্ত্রণরেখায় এবং কাশ্মীরের ভিতরে একের পর এক ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ঠিকই, তবে জম্মু ও কাশ্মীরের সঙ্গে জুড়ে থাকা অন্যান্য দিকগুলিও চড়া বার্তার পিছনে অতিরিক্ত কারণ। কাশ্মীরের মাটিতে দাঁড়িয়ে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের বার্তা দিতে চেয়েছেন মোদী। পাশাপাশি, ভোটের আগে রাজ্যের বিজেপি কর্মীদের ভাবনার কাছেও পৌঁছতে চেয়েছেন তিনি।
কাশ্মীরে সন্ত্রাসের শিকার হয়ে দীর্ঘ দিন থেকেই জম্মু ও দিল্লির মতো এলাকায় বসবাস করতে হচ্ছে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের। এঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে দাবি করে আসছিল বিজেপি। এ দিন মোদী জানান, এ রাজ্যের জনসংখ্যার ২০% উদ্বাস্তু। কাশ্মীরি পণ্ডিতরা ছাড়াও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তু, সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছেন এমন পরিবারগুলিকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন মোদী। এঁদের প্রতি ‘অবজ্ঞার দিন’ শেষ হয়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদী জম্মু ও কাশ্মীরের সামগ্রিক উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ করছেন। এর আগে জম্মুকে দেশের অন্য প্রান্তের সঙ্গে জুড়তে রেল পথের উদ্বোধনও করেছেন। এ বার তিনি ‘নিমো-বাজগো’ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং লে, কার্গিল, শ্রীনগর বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থারও উদ্বোধন করেছেন। রাজ্যের সড়ক উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র অতিরিক্ত আট হাজার কোটি টাকা দেবে। জম্মু ও কাশ্মীরের মতো রাজ্যে বিকাশের জন্য বিরাট সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে গিয়ে মোদীর মন্তব্য, তিন ‘পি’ এ রাজ্যের সম্পদ। এইগুলি হল, প্রকাশ (সূর্যালোক), পর্যাবরণ (প্রকৃতি), পর্যটন। এগুলিকে সামনে রেখে রাজ্যের বিকাশ ঘটাতে হবে বলে মন্তব্য করেন মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy