Advertisement
১৬ জানুয়ারি ২০২৫

চিনকে টক্কর দিতে নরেন্দ্র মোদীর নীল নকশা

হিসেব বলছে, গত দু’দশকে ভারতে চিনা পণ্যের আমদানি বেড়েছে প্রায় আশি গুণ। এ দেশের বাজার জুড়ে চিনের দাপট। প্রতি বছর আমদানি বাড়ছে, তার থেকেও বেশি লাফিয়ে কমছে চিনে রফতানি। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে হু-হু করে।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৭ ০৪:২৬
Share: Save:

সঙ্ঘের স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ বলছে, চিনা পণ্য বয়কট করো। সরকার বলছে, সম্ভব নয়। ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা’-র বিধি মানতে হয়। অথচ চিনা পণ্যে ছেয়ে যাচ্ছে ভারতের বাজার। আর চিন তাদের দেশে সে ভাবে ঢুকতেও দিচ্ছে না ভারতকে।

এই জাঁতাকলে পড়ে চিনের উপর আর্থিক নির্ভরশীলতা কমানোর দীর্ঘমেয়াদি নকশা বানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

হিসেব বলছে, গত দু’দশকে ভারতে চিনা পণ্যের আমদানি বেড়েছে প্রায় আশি গুণ। এ দেশের বাজার জুড়ে চিনের দাপট। প্রতি বছর আমদানি বাড়ছে, তার থেকেও বেশি লাফিয়ে কমছে চিনে রফতানি। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে হু-হু করে। বারবার বলা সত্ত্বেও ভারতের পণ্যকে সে দেশে ঢুকতে দেওয়া নিয়ে গড়িমসি করে যাচ্ছে বেজিং। তিন বছর ধরে নরেন্দ্র মোদী ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ স্লোগান দিয়ে আসছেন। কিন্তু চিনের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছেন কই?

এ বারে তাই চিনকে টক্কর দেওয়ার নকশা তৈরি করেছে মোদী সরকার। চিনের বাজার বুঝে ভারতকে আরও সক্ষম করার পাঁচ দফা সূত্র। ‘কাজহীন বৃদ্ধি’র অভিযোগের মুখে জবাব দেওয়ার চেষ্টা। সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, রোজগারও বাড়বে তাতে।

কী সেই দাওয়াই?

এক, বিশ্বের বাজার ধরতে ভারতের পণ্যকে প্রতিযোগিতায় নামানো। বিশেষ নজর ইলেকট্রনিকস, গয়না, ফুটওয়্যার, জামাকাপড়ের মতো পণ্যে— যেখানে চিন মাত দেয়। সরকারি নোট বলছে, তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের বাজার ধরতে পারলে এ সব ক্ষেত্রে পারবে না কেন?

দুই, ভারতের ছোট-মাঝারি শিল্পগুলিকে একটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা। বিশ্ব বাজারের নিরিখে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের সক্ষম করে তোলা।

তিন, চিনের ধাঁচে ভারতে কমপক্ষে দু’টি বড় ‘উপকূল রোজগার অঞ্চল’ গড়ে তোলা। একটি পূর্ব ও অন্যটি পশ্চিম উপকূলে। যেগুলি হবে কমপক্ষে ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে। এখানে কম করে দশ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা রয়েছে। এখানকার কাজে উৎসাহ দিতে নানা ধরনের ছাড়ের ব্যবস্থা করবে সরকার।

চার, এই বিশেষ রোজগার অঞ্চলের সঙ্গেই যোগ থাকবে গভীর সমুদ্র বন্দরের। যেখান থেকে বড় জাহাজে ভারতীয় পণ্য রফতানি করা হবে। আর চিনা পণ্য হঠিয়ে দেশের বাজারের চাহিদাও মিটবে।

পাঁচ, চিনের কিছু সংস্থা ইতিমধ্যেই ব্যবসার জন্য সস্তার বাজার খুঁজছে। কারণ, চিনে এখন ভাতা বেশি দিতে হচ্ছে তাদের। চিনের পাট চুকিয়ে অনেকে চলে গিয়েছে বাংলাদেশে। চিন থেকে সে সব সংস্থাকে নিয়ে আসতে হবে ভারতে। ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্র, গুজরাত সরকারের সঙ্গে কিছু সংস্থার সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু চিনা সংস্থার সঙ্গে কোনও সমঝোতা চাইছে না সঙ্ঘ ও তার বেশ কিছু শাখা সংগঠন। তারা মনে করছে, সম্প্রতি চিনা-পণ্য বয়কট অভিযানের ফলে বেজিং-এর হাজার কোটি টাকার লোকসান করানো সম্ভব হয়েছে।

কিন্তু মোদী সরকারের এই নতুন রোডম্যাপে সমস্যাও অনেক। বাণিজ্য মন্ত্রকের একটি সূত্রের মতে, এই বড় কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি শ্রম আইনও শিথিল করতে হবে। ফলে এগিয়ে আসতে হবে রাজ্যগুলিকেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi blue revolution China
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy