Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
উদ্দেশ্য কী, কংগ্রেস-বিজেপি দ্বৈরথ

নেহরুর নজরবন্দি নেতাজি পরিবার

লোকমুখে কখনও শোনা যেত, তিনি সাধু হয়ে গিয়েছেন। কখনও শোনা যেত তাঁর খোঁজ মিলেছে রাশিয়ায়। কখনও আবার চিনে। স্বাধীনতার পরের দশকগুলো জুড়ে সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে যখন জল্পনা-রটনা-কিংবদন্তির জন্ম হচ্ছে নিত্যনতুন, সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকারের গোয়েন্দারা বসু পরিবারের প্রতিটি পদক্ষেপ নজর করছিলেন।

নেতাজি ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে কৃষ্ণা বসু ও সুগত বসু।—নিজস্ব চিত্র।

নেতাজি ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে কৃষ্ণা বসু ও সুগত বসু।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

লোকমুখে কখনও শোনা যেত, তিনি সাধু হয়ে গিয়েছেন। কখনও শোনা যেত তাঁর খোঁজ মিলেছে রাশিয়ায়। কখনও আবার চিনে। স্বাধীনতার পরের দশকগুলো জুড়ে সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে যখন জল্পনা-রটনা-কিংবদন্তির জন্ম হচ্ছে নিত্যনতুন, সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকারের গোয়েন্দারা বসু পরিবারের প্রতিটি পদক্ষেপ নজর করছিলেন। বিশেষ করে নেতাজির দুই ভ্রাতুষ্পুত্র অমিয়নাথ বসু এবং শিশিরকুমার বসু কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন, কাকে কী চিঠি লিখছেন— তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ কলকাতা থেকে দিল্লিতে পাঠানো হতো।

সম্প্রতি ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের তৈরি দু’টি গোপন ফাইল প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানেই দেখা গিয়েছে, ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত নেতাজির পরিবারের উপরে নিয়মিত এই নজরদারি চলেছিল। বিষয়টা জানাজানি হওয়াতে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে পড়েছে কংগ্রেস। কারণ এই দু’টি দশক কেন্দ্রে কংগ্রেসেরই সরকার ছিল। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খোদ জওহরলাল নেহরু। এবং দেশের একটা বড় অংশের মানুষের অন্য রকম ধারণা থাকলেও তাঁর আমলে তৈরি শাহনওয়াজ কমিশন (১৯৫৬) নেতাজির মৃত্যু বিমান দুর্ঘটনায় হয়েছে বলেই জানিয়েছিল। সরকার সেই রিপোর্টই গ্রহণ করেছিল। তার পরেও কেন অমিয়-শিশিরের উপরে নজরদারি চলেছিল, সেই প্রশ্ন আজ উঠছে। বিশেষত যখন এঁদের কেউই খুব বড়সড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। তা হলে তাঁদের গতিবিধি-ফোনালাপ-চিঠিচাপাটি নিয়ে কীসের এত উদ্বেগ ছিল সরকারের, সেটাই বড় ধাঁধাঁ হয়ে দেখা দিচ্ছে। কেন্দ্রের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত নাগাড়ে কংগ্রেস শাসনই চলেছে। ফলে নজরদারির দায় সর্বতো ভাবেই কংগ্রেসের উপর গিয়ে পড়ছে। কিছু দিন আগেই নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিরুদ্ধে আড়ি পাতার অভিযোগে সরব হয়েছিল তারা। এখন বিজেপি পাল্টা বলতে শুরু করেছে, নজরদারিটা আসলে কংগ্রেসের ডিএনএ-তেই রয়েছে! কংগ্রেসের যদিও দাবি, মোদী সরকারের ব্যর্থতা থেকে নজর ঘুরিয়ে দিয়ে নেহরু-গাঁধী পরিবারের বদনাম করার জন্যই বাছাই করা কিছু গোপন ফাইল প্রকাশ করে দেওয়া হচ্ছে।

গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত বসু পরিবার। প্রয়াত শিশিরবাবুর স্ত্রী কৃষ্ণা বসু বলেন, ‘‘আমি গভীর ভাবে আহত, আবার বেশ মজাও লাগছে। আমাদের নিয়ে যে এত ভয় ছিল, তা তো কখনও বুঝিনি!’’ শিশির-পুত্র সুগত বলেন, ‘‘এ তো ব্যক্তিগত জীবনে চূড়ান্ত হানাদারি। ১৯৬১-তে নেহরু নিজে এসে বাবার সঙ্গে নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর কাজকর্ম ঘুরে দেখেছিলেন। আমি তখন খুবই ছোট, তাঁর পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়িয়েছি। তা হলে কেন এই নজরদারি, সেটা আমি ঠিক মেলাতে পারছি না।’’

সুতরাং মূল প্রশ্ন একটাই, নজরদারির উদ্দেশ্য কী ছিল? প্রশাসনিক কর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, সরকারি গোয়েন্দাদের আতসকাচের তলায় যে কেউ হুট করে এসে পড়েন না। অমিয়নাথ বসু ও শিশিরকুমার বসু কেউই ওই সময় রাজনৈতিক ভাবে তেমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ বা বিতর্কিত ব্যক্তি ছিলেন না। অমিয় পেশায় আইনজীবী ছিলেন। তিনি ব্রিটেন, জার্মানি, ইতালি ও জাপানে নেতাজির কাজকর্ম সম্পর্কে ছবি ও নথি সংগ্রহের কাজ করেছিলেন। পেশায় চিকিৎসক শিশির ১৯৫৭ সালে নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো গঠন করেছিলেন। অনেক পরে, আটের দশকে তিনি কংগ্রেসেরই বিধায়ক হয়েছিলেন। তা হলে পঞ্চাশ-ষাটের দশকে কেন সরকার তাঁদের গতিবিধির উপরে নজর রাখতে যাবে?

অথচ আইবি-র ফাইলই বলছে, ১ নম্বর উডবার্ন পার্ক এবং ৩৮/২ এলগিন রোডে বসু পরিবারের দু’টি বাড়ির উপর রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখা নিয়মিত নজর রাখত। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান ছাড়াও আর এন কাও, এম এম এল হুজার মতো তৎকালীন গোয়েন্দা কর্তাদের এ বিষয়ে সব তথ্য জানানো হতো। অমিয়নাথ বসুর টেলিফোনে আড়ি পাতা হতো। কলকাতার বাইরে গেলেই, দিল্লি হোক বা টোকিও, তাঁকে ‘শ্যাডো’ করতেন গোয়েন্দারা। অমিয়-শিশিরের ব্যক্তিগত চিঠি গোপনে পড়ে দেখা হতো। নেতাজির স্ত্রী এমিলি শেঙ্কেলকে লেখা এবং শেঙ্কেলের নিজের লেখা চিঠিপত্রও খোলা হয়েছিল। কলকাতার লর্ড সিন্হা রোডের অফিস থেকে সেই সব চিঠির নকল পাঠানো হয় দিল্লিতে, আইবি-র সদর দফতরে। আইবি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করত। যদিও নেহরু নিজে এই গোয়েন্দাগিরির নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে বিশ্বাস করতে পারছেন না সুগত। তিনি নিজে ওই দলিল দেখেছেন। তাতে কোথাও সরাসরি নেহরুর নির্দেশের কথা উল্লেখ করা নেই। বর্তমান তৃণমূল সাংসদ মনে করিয়ে দিয়েছেন, সে সময় রাজ্যে বিধানচন্দ্র রায়, প্রফুল্ল সেনের সরকার ছিল। সেই সরকারেরই গোয়েন্দা শাখা কেন্দ্রীয় সরকারের গোয়েন্দা বাহিনীকে রিপোর্ট পাঠিয়েছে। সুগত বলছেন, ‘‘নেহরু সরকারকে দোষ দেওয়া হচ্ছে বটে। কিন্তু বাঙালিরাও এর দায় এড়াতে পারেন না।’’

১৯৪৫ সালের ১৮ অগস্ট তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে, সেটা এ দেশের অনেকেই মানেননি। স্বাভাবিক ভাবে সংশয় ছিল সরকারের মধ্যেও। সেই কারণে ফিগেস কমিশন (১৯৪৬) তৈরি করেছিল ব্রিটিশ সরকার। তারা নেতাজি মারা গিয়েছেন বলেই রায় দেয়। তার পর স্বাধীন ভারতে তৈরি হয় শাহনওয়াজ কমিশন। তারাও একই কথা বলে। সেই রায় মেনে নেয় ভারত সরকারও। সরকার যদি মনে করে থাকে যে নেতাজি আর জীবিত নেই, তা হলে তাঁর পরিবার নিয়ে কীসের এত মাথাব্যথা, সেটাই স্পষ্ট নয় ইতিহাসবিদদের একাংশের কাছেও। ‘নেহরু অ্যান্ড বোস: প্যারালাল লাইভস’, বইটির লেখক ইতিহাসবিদ রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘যে নেহরু কয়েক বছর আগেই আজাদ হিন্দ ফৌজের হয়ে লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে সওয়াল করছেন, তিনি হঠাৎ সুভাষের ভাইপোদের ওপর বা নেতাজি ভবনের ওপর নজর রাখতে বলবেন কেন? পূর্ণাঙ্গ নথি না দেখে এটা কিছুতেই বলা সম্ভব নয়।’’

বিশেষ়জ্ঞদের কেউ কেউ অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সরকারি কমিশন যা-ই বলুক, সে সময় দেশবাসীর একটা বড় অংশ বিশ্বাস করতে পারেননি নেতাজি বিমান দুর্ঘটনায় মৃত। শাহনওয়াজ কমিশনের সদস্য নেতাজির ভাই সুরেশচন্দ্র বসুও ওই তত্ত্ব মানেননি। কমিশনের রিপোর্টে সইও করেননি। নেতাজি বেঁচে আছেন এবং যে কোনও দিন ফিরে আসবেন, এমন একটা জল্পনা তখন খুবই জোরালো ছিল। নেতাজিকে নিয়ে প্রায়ই নানা রকম রটনা লোকমুখে ছড়াত। কংগ্রেসে থাকাকালীন নেহরুর সঙ্গে নেতাজি ও শরৎচন্দ্র বসুর মতান্তরের বিষয়টিও জনস্মৃতিতে ছিল। এই আবহে গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে কী বুঝতে চাইছিল সরকার? কারও কারও অনুমান, নেতাজি জীবিত এমন একটা সন্দেহ সরকারের অন্দরেও ছিল। আর একটি অংশের

দাবি, নেতাজি সংক্রান্ত কোনও স্পর্শকাতর তথ্য নেতাজি পরিবারের হাতে আসছে কি না, সেটা জানাই ছিল নজরদারির উদ্দেশ্য। নথি বলছে, রিসার্চ ব্যুরো খুলে নেতাজির অন্তর্ধান সম্পর্কে তথ্য জোগাড় শুরুর পরেই শিশিরের উপর নজরদারি শুরু হয়। নেতাজি-কন্যা অনিতা বসু-পাফও এ দিন বলেন, ‘‘সরকার বোধহয় বিশ্বাস করত যে আমার বাবা জীবিত এবং তিনি ভারতে ফিরতে চাইবেন। সে ক্ষেত্রে তিনি তাঁর ভাইপোদের সঙ্গেই যোগাযোগ করবেন। তাই ভেবেই হয়তো নজরদারি।’’


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

দিল্লির ন্যাশনাল আর্কাইভ থেকে আইবি-র ফাইল দু’টি উদ্ধার করেছেন যে গবেষক, সেই অনুজ ধর দাবি করছেন, ‘‘নেতাজির পরিবারের সদস্যরা যে সব চিঠিতে তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে কথা বলেছেন, সেগুলিতে গোয়েন্দাদের বাড়তি উৎসাহ ছিল। চিঠির ওই সব অংশে পেনের দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট, সুভাষচন্দ্র জীবিত না মৃত, তিনি আবার স্বাধীন ভারতে ফিরে আসবেন কি না, এ সব নিয়েই চিন্তিত ছিলেন নেহরু।’’ এই বক্তব্যকে সমর্থন জানাচ্ছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নেহরুর সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলির চিঠিপত্র পড়লেই বোঝা যায়, নেহরু চাইতেন না যে নেতাজি স্বাধীন ভারতে ফিরে আসুন।’’ বিজেপির সিদ্ধার্থনাথ সিংহ অভিযোগ করছেন, ‘‘নেহরু জানতেন, সুভাষচন্দ্র দেশে ফিরে এলে তাঁর নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই তিনি ওই পথ নিয়েছিলেন।’’

এর উত্তরে কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির পাল্টা প্রশ্ন, ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত নেহরু ছাড়াও লালবাহাদুর শাস্ত্রী, গুলজারিলাল নন্দ ও ইন্দিরা গাঁধী প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন। এঁরা কি সকলেই নেতাজিকে ভয় পাচ্ছিলেন? ইতিহাসবিদ মৃদুলা মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, এক জন মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে নেহরু খামোখা দুশ্চিন্তা করবেন কেন?

কিন্তু সে ক্ষেত্রে আবার স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, দুশ্চিন্তা না থাকলে নজরদারি চলবেই বা কেন? কংগ্রেসের নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, ব্রিটিশ সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী সুভাষচন্দ্রের উপরে নজর রেখেছিল। হতে পারে, পরবর্তী কালে সেই রুটিন প্রক্রিয়াই জারি থেকে গিয়েছে। সুগত নিজে সুভাষকে নিয়ে ‘হিজ ম্যাজেস্টিজ অপোনেন্ট’ বই লিখেছেন। তিনিও এই সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিতে পারছেন না। তাঁর অনুমান, সন্দেহভাজনের ওপর গোয়েন্দাগিরি চালানো পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র দফতরের ঔপনিবেশিক অভ্যাস। স্বাধীনতার পরেও সেই অভ্যাস বন্ধ হয়নি। আরও একটি সন্দেহ দানা বাঁধছে সুগতর মনে। ‘‘হতে পারে, কংগ্রেস সরকারের সন্দেহ ছিল, নেতাজি ব্যুরোর নাম নিয়ে নতুন করে কোনও দল তৈরির চেষ্টা হচ্ছে কি না! অ্যাকাডেমিক আগ্রহের আড়ালে রাজনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে কি না!’’ অমিয়-শিশির দু’জনেই নেতাজির অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন। নেতাজিকে নিয়ে জনমানসে আবেগও তখন তীব্র ছিল। সুতরাং নেতাজির নাম করে নতুন করে কোনও রাজনৈতিক শক্তি জন্ম নিচ্ছে কি না, এ ভাবনা সরকারের পক্ষে অস্বাভাবিক ছিল না। আইবি-র নথি নজর করেছে, ফরওয়ার্ড ব্লকের সমর্থন নিয়ে অমিয়নাথ ১৯৬৭ সালে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। আজাদ হিন্দের প্রাক্তনীদের নিয়ে তিনি ‘আজাদ হিন্দ দল’ গড়ছেন কি না, সেটাও তারা গুরুত্ব দিয়ে লক্ষ করেছে। অর্থাৎ নেতাজির নাম-মাহাত্ম্য নিয়ে দুশ্চিন্তা নেহরু-উত্তর পর্বেও কাটেনি।

নেতাজি পরিবারের উপরে এই গোয়েন্দাগিরির ইতিহাসকে এখন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাইছে বিজেপি। এর আগে গুজরাতে থাকার সময় মোদী-অমিত শাহর বিরুদ্ধে নজরদারির অভিযোগ তুলেছিল কংগ্রেস। সম্প্রতি রাহুল গাঁধীর উপরেও নজরদারির অভিযোগ উঠেছিল। সে সময় বিরোধীরা সংসদে সরব হয়ে বলেছিলেন, মোদী নিজের মন্ত্রীদের উপরেও নজরদারি করেন। এর মোক্ষম জবাব হিসেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এ দিন বলেন, ‘‘জওহরলাল নেহরুর সময় থেকে গোয়েন্দাগিরির রেওয়াজ শুরু করেছিল কংগ্রেসই। ইন্দিরা নিজের পুত্রবধূ (মানেকা)-র উপর নজরদারি করতেন। সম্প্রতি মনমোহন জমানাতেও কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রীর দফতরে চ্যুইংগাম লাগিয়ে গোয়েন্দাগিরি করা হয়েছে। ফলে এ’টি কংগ্রেসের ডিএনএ-তেই রয়েছে।’’

কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হচ্ছে, বিজেপি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অর্ধসত্য সামনে আনছে। তেমন হলে সরকার নেতাজি সংক্রান্ত সব ফাইলই প্রকাশ করুক। বস্তুত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় বিজেপি নেতাজি সম্পর্কে সব গোপন ফাইল প্রকাশ করে দেওয়ার কথাই বলেছিল। কিন্তু শীতকালীন অধিবেশনে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হরিভাই চৌধুরী সংসদে জানান, বিদেশ মন্ত্রকের কাছে এখনও ২৯টি গোপন ফাইল রয়েছে। এগুলি প্রকাশ হলে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে আঘাত আসতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ৬০টি গোপন ফাইল রয়েছে। তারই দু’টি ফাইল প্রকাশ করে ন্যাশনাল আর্কাইভে পাঠানো হয়েছে।

কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আজ দিনভর যে শোরগোল চলল, তাতে সব তথ্য সামনে আনার দাবিই জোরালো হয়েছে। অমিয়নাথের পুত্র চন্দ্র বসু বলেন, ‘‘মোদী সরকার স্বচ্ছ প্রশাসনের কথা বলেন। আমরা চাই সব ফাইল শীঘ্রই প্রকাশ করা হোক।’’ সুগতর বক্তব্য, ‘‘আমি ইতিহাসবিদ হিসেবেই মনে করি, ৩০ বছরের পুরনো সব গোপন নথি প্রকাশ করে দেওয়া উচিত। খুব স্পর্শকাতর নথি হলে বড়জোর ৫০ বছর অবধি তা গোপন রাখা যেতে পারে।’’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উদ্দেশে তিনি এ নিয়ে প্রশ্ন জমা দিয়েছেন। সংসদের আগামী অধিবেশনে সেগুলি উঠতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE