Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জমি ফিরে পেতে রাজনীতিই শিকেয়

ছোঁয়াছুঁয়ির সমস্যা এড়াতে এ বার অ-রাজনীতির কৌশল নিচ্ছে কেন্দ্রের বিরোধী দলগুলি। আর পতাকা গুটিয়ে রেখে এই তথাকথিত অরাজনৈতিক মঞ্চে সামিল হচ্ছে কংগ্রেস থেকে বাম-তৃণমূল— বিজেপি-বিরোধী প্রায় সব প্রধান রাজনৈতিক দলই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪২
Share: Save:

ছোঁয়াছুঁয়ির সমস্যা এড়াতে এ বার অ-রাজনীতির কৌশল নিচ্ছে কেন্দ্রের বিরোধী দলগুলি। আর পতাকা গুটিয়ে রেখে এই তথাকথিত অরাজনৈতিক মঞ্চে সামিল হচ্ছে কংগ্রেস থেকে বাম-তৃণমূল— বিজেপি-বিরোধী প্রায় সব প্রধান রাজনৈতিক দলই।

সংসদে জমি অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে কংগ্রেস, তৃণমূল ও বামেরা এককাট্টা। কিন্তু সংসদের বাইরে আন্দোলন হলে একে অন্যের মঞ্চে যেতে তাদের বেজায় অসুবিধে। কংগ্রেসের সঙ্গে এক মঞ্চে উঠতেই পারে না তৃণমূল। আবার বামেরা তৃণমূলের সঙ্গে মঞ্চ ভাগাভাগি করলে নবান্নের ফিসফ্রাইয়ের গন্ধ ফের তাড়া করতে পারে তাদের। কিম্বা বিক্ষোভ মিছিলে কংগ্রেস নেতাদের পাশে হাঁটলে ‘সমদূরত্বের নীতি’ লঙ্ঘন হল কি না, তা নিয়ে কূটতর্ক বেধে যেতে সিপিএমের পলিটব্যুরোয়।

সুতরাং হ্যাপা অনেক। তার চেয়ে পতাকা ছেড়ে ‘অরাজনৈতিক মঞ্চ’ গড়লে অনেক সুবিধে।

কেন্দ্র বিরোধী আন্দোলনে জমি ফিরে পেতে এ বার তাই এই কৌশলেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের জমি অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছে বিরোধী দলগুলি। আজ দিল্লিতে তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, সংসদে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব চলাকালীন ৫ মে দিল্লিতে এই অরাজনৈতিক মঞ্চের সমাবেশ হবে।

বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে ২০ এপ্রিল। তার আগের দিন, ১৯ এপ্রিল দিল্লিতে কিষাণ সভার ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু কংগ্রেস ও বাম নেতারা জমি অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে অন্যান্য সব দল ও নাগরিক সংগঠনকেও এক ছাতায় তলায় আনতে চাইছে। আজ সেই রণকৌশল ঠিক করতেই দিল্লিতে সম্মেলন
করেন জয়রাম রমেশ, সীতারাম ইয়েচুরি, জেডি(ইউ)-র কে সি ত্যাগীরা। সিপিআই (এমএল)-এর কবিতা কৃষ্ণন, মেধা পাটকরের মতো নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও ছিলেন বৈঠকে। তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদীকেও সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি আসতে না পারলেও চিঠি লিখে দলের পক্ষে এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন। জমি অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে আদালতে জনস্বার্থ মামলা করারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

সিপিএমের কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, “সম্মেলনে ঠিক হয়েছে, জমির অধিকারের দাবিতে এই আন্দোলনের নাম হবে ভূমি অধিকার সংঘর্ষ আন্দোলন। এই মঞ্চ থেকেই ৫ মে সংসদ মার্গে জনসভা হবে।” সিপিএম-সহ চার বাম দল ও কংগ্রেস ছাড়াও এই আন্দোলনে রয়েছে জেডি (এস), জেডি (ইউ)-র মতো দলগুলি। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ ঘোষণা করেন, “কোনও ভাবেই কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যসভায় জমি অধিগ্রহণ বিল পাশ করাতে পারবে না।” বাজেট অধিবেশনের প্রথমার্ধে প্রথম দিকে বিমায় বিদেশি লগ্নির বিলের বিরোধিতা করলেও কংগ্রেস পরে এই বিলকে সমর্থন করে মোদী সরকারকে সাহায্য করেছিল। আজ তা নিয়ে কটাক্ষ করে ইয়েচুরি বলেন, “আমরা আশা করব, জমির প্রশ্নে সব দল একেবারে শেষ পর্যন্ত আমাদের পাশে থাকবে। অবশ্য যাওয়ার জায়গাই বা কোথায়? জয়রাম রমেশ গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে যে জমি অধিগ্রহণ বিলটি এনেছিলেন, সেটাই এখন পাল্টে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে।”

আজ অবশ্য সনিয়া গাঁধী নিজেও জানিয়েছেন, জমি বিলে কংগ্রেস কিছুতেই আপস করবে না। আজ মধ্যপ্রদেশে অতিবর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে দেখা করেন সনিয়া। সেখানেই তিনি বলেন, “নতুন বিল পুরোপুরি কৃষক-বিরোধী। ইউপিএ-সরকার যে বিল পাশ করেছে, আমরা তাতে অনড়। ওই বিলে বিজেপিও সমর্থন করেছিল। কোথায় ভুল রয়েছে ওই বিলে? নতুন বিলে কৃষকদের স্বার্থের কথা ভাবা হয়নি। তাই আমরা তাকে সমর্থন করব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE