Advertisement
E-Paper

ভাষা-শিকড় বাঁচাতে তৎপর ওরাওঁ কবি

রাঁচীর কোঁকর এলাকার তরুণীকে অনেক চেষ্টায় ফোনে পাওয়া গেল।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০৩:১২
জেসিন্তা কেরকেট্টা। নিজস্ব চিত্র

জেসিন্তা কেরকেট্টা। নিজস্ব চিত্র

মাতৃভাষা কুরুককে বাঁচাতে সঙ্কল্প নিয়েছেন ওরাওঁ কবি জেসিন্তা কেরকেট্টা। তাঁর কবিতার বই গুজরাতি, মরাঠি, এমনকি জার্মান এবং ইটালিয়ান ভাষাতেও অনুবাদ হয়েছে। কিন্তু যাঁদের নিয়ে লেখা, সেই ওরাওঁ জনজাতির বেশির ভাগ মানুষই তো পড়তে পারছেন না তাঁর কবিতার বই। কারণ জেসিন্তা লিখেছেন হিন্দিতে!

রাঁচীর কোঁকর এলাকার তরুণীকে অনেক চেষ্টায় ফোনে পাওয়া গেল। হেসে বললেন, ‘‘আমি তো বেশির ভাগ সময়েই ‘নট রিচেবল’। ঝাড়খণ্ডের যে সব প্রত্যন্ত গ্রামে ঘুরি, সেখানে নেটওয়ার্ক থাকে না।’’

আদিবাসী বাচ্চাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়া নিয়ে কাজ করে এ রকম কয়েকটি সংস্থা সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রের আয়োজন করেছিল। বেঙ্গালুরুর আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই আলোচনা চক্রে আমন্ত্রিত ছিলেন জেসিন্তাও। বললেন, ‘‘ওখানে গিয়ে বুঝলাম সমস্যাটা সারা বিশ্বেই এক। আদিবাসীরা তাঁদের শিকড় হারাচ্ছেন। কারণ, তাঁদের ভাষা ও সংস্কৃতিটাই হারিয়ে যাচ্ছে। মাতৃভাষার চর্চা নেই, তাই শিকড়ও নেই। তাই মাতৃভাষায় পড়তে ও লিখতে পারা জরুরি।’’ ওরাওঁদের কুরুক ভাষা শেখাতে ঝাড়খণ্ডের খুঁটি, লোহারদাগা, সিমডেগা, গুমলা জেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন এই তরুণ কবি।

নিজে পশ্চিম সিংভূম জেলার ওরাওঁ জনজাতির হলেও জেসিন্তা ভাল করে কুরুক ভাষায় লিখতে ও পড়তে জানেন না। ছোটবেলা থেকে হিন্দি মাধ্যমেই পড়াশোনা করেছেন। তাই তিনি শিক্ষক রেখে এই ভাষা ভাল করে শিখছেন। বললেন, ‘‘কুরুক ভাষায় এখন একটু একটু করে কবিতা লিখতে পারছি। এটা খুব আনন্দের। আমার কবিতা আদিবাসীদের সমাজ বদলানোর, আদিবাসী মেয়েদের অধিকার নিয়ে কথা বলে। এ বার কুরুক ভাষায় যদি কবিতা লিখতে পারি, তা হলে ওরাওঁ জনজাতির মানুষেরা সহজেই আমার কবিতা পড়তে পারবেন। সারা দেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন ওরাওঁরা।’’

বেঙ্গালুরু থেকে ফিরে জেসিন্তা ফের বেরিয়ে পড়েছেন রাঁচী থেকে পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে খুঁটির কাররা ব্লকে। জানালেন, খুঁটিতে বেশ কয়েকটা কুরুক ভাষার ক্লাস হওয়ার কথা। সেখানে তিনি কবিতাও পাঠ করবেন। জেসিন্তা বলেন, ‘‘বড় বড় আসরে কবিতা পাঠ নয়, বরং ভাল লাগে এ সব আদিবাসী গ্রামে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কবিতা পড়ে শোনাতে। ওদের মধ্যে সংবেদনশীল মন তৈরি করতে চাই।’’

এখনও পর্যন্ত দু’টি কবিতার বই বেরিয়েছে তাঁর— ‘অঙ্গোর’ ও ‘জড়ো কি জমিন’। দু’টিই হিন্দিতে। পেশা শুরু করেছিলেন সাংবাদিক হিসেবে। জেসিন্তা বলেন, ‘‘সাংবাদিক হিসেবেও আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করতাম। তবে কবিতা লিখে আমি এখন ওঁদের আরও কাছে আসতে পেরেছি।’’

Oraon Poet Language Movement
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy