Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মদত দিচ্ছে পাক সেনা, এ দেশে অনুপ্রবেশে ও-পারে অপেক্ষায় ১০০ জঙ্গি

যুদ্ধে যাবে না জানিয়েও ছায়াযুদ্ধে ক্ষান্তি দিচ্ছে না পাকিস্তান। বরং নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে কাশ্মীরের জঙ্গিদের উস্কানি দেওয়া আরও বাড়িয়েছে তারা, এমনটাই দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:৪২
Share: Save:

যুদ্ধে যাবে না জানিয়েও ছায়াযুদ্ধে ক্ষান্তি দিচ্ছে না পাকিস্তান। বরং নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে কাশ্মীরের জঙ্গিদের উস্কানি দেওয়া আরও বাড়িয়েছে তারা, এমনটাই দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের।

গোয়েন্দাদের খবর অনুযায়ী, ভারতে অন্তত শ’খানেক জঙ্গির অনুপ্রবেশ ঘটাতে উঠে পড়ে লেগেছে পাক সেনা। আর এই প্রস্তুতির বহর দেখে আগামী দিনে কাশ্মীর-সহ দেশের নানা প্রান্তে বড় ধরনের জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করছে কেন্দ্র।

ভারতীয় গোয়েন্দারা বলছেন, এই মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণরেখায় হাজির হয়েছে অন্তত একশো জঙ্গি। ইতিমধ্যে কাশ্মীরে ঢুকে পড়েও থাকতে পারে বেশ কয়েক জন। সব মিলিয়ে আসন্ন শীতে ভূস্বর্গকে নাশকতায় তাতিয়ে রাখতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে জঙ্গিরা। এবং তাদের মদত দেওয়া চতুর্গুণ করেছে পাকিস্তানি সেনা ও সে দেশের গুপ্তচর বাহিনী আইএসআই।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকে এই গোয়েন্দা রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন— আগামী ছ’মাসে কাশ্মীরে উরি-বারামুলার ধাঁচে জঙ্গি হামলা আরও হতে পারে। পাক সেনার সক্রিয়তার মাত্রা বোঝাতে তিনি বলেন, ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর জঙ্গিদের নিরাপত্তা দিতে এখন বাহিনী পর্যন্ত মোতায়েন করেছে পাক সেনা। জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণরেখা পেরোতেও সাহায্য করা হচ্ছে।

নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে সেনা অভিযানের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখনও প্রকাশ্যে একটি শব্দও খরচ করেননি। উল্টে যত বারই মুখ খুলেছেন তত বারই বুঝিয়েছেন ভারত কখনওই যুদ্ধ চায় না। এ দিনও তিনি অন্য মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেছেন— সেনা অভিযানের সাফল্য নিয়ে ছাতি চাপড়ানো বন্ধ করুন। পাকিস্তানের দিক থেকেও সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনের বার্তা দেওয়া হয়। পাক প্রধানমন্ত্রীর বিদেশনীতি উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ জানান, সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা কথা বলেছেন। এমনকী আজও পাকিস্তানের পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেছেন, ‘‘যুদ্ধ পথ নয়। সে পথে যেতেও চায় না ইসলামাবাদ।’’

তা হলে ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশ করাতে পাকিস্তান এত তৎপর কেন, স্বাভাবিক ভাবেই সে প্রশ্ন উঠেছে। মনে করা হচ্ছে, এ-ও সেই দু’মুখো নীতি, এ যাবৎ কাল যা অনুসরণ করে চলেছে পাকিস্তান। পার্লামেন্টে এক দিকে যুদ্ধ-বিরোধী বার্তা দিলেও হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি বুরহান ওয়ানির প্রশস্তি গাইতে ছাড়েননি নওয়াজ। বলেছেন, ‘‘শহিদ বুরহানের মৃত্যু কাশ্মীর পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।’’ ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এর জবাবে বলেছে, সন্ত্রাসের সঙ্গে পাকিস্তানের আত্মীয়তা যে কত গভীর, শরিফের এই মন্তব্য থেকেই তা স্পষ্ট। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে ধাক্কা খেলেও পাকিস্তান যে সন্ত্রাস রফতানির পথ থেকে সরবে না, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে ভারত।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের কথায়, এই দু’মুখো নীতির জন্যই লাহৌর বাসযাত্রার সূচনা আর কার্গিলে হানা একসঙ্গে হয়েছিল। সে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব মুখে শান্তির
কথা বললেও, পাক সেনা, আইএসআই বা হাফিজ সইদের মতো জঙ্গিরা মুখ বুজে বসে নেই। হামলার পরের দিনই হাফিজ সইদ প্রকাশ্যে বদলা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। পাক সেনাপ্রধান রাহিল শরিফও
অবসরের আগে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ‘কলঙ্ক’ মুছে জবাব দিতে মরিয়া। আর এঁদের কারও উপরেই নওয়াজের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।

ঠিক এক সপ্তাহ আগে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে ভারত। এই অপ্রত্যাশিত আক্রমণে যেমন হতচকিত হয়ে পড়েছিল জঙ্গিরা। আচমকা এই পাল্টা মারে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় তারা।

ভারতীয় গোয়েন্দারা বলছেন, সাত দিন পর এখন ভাঙা ঘর গোছানো শুরু হয়েছে। ‘লঞ্চিং প্যাড’গুলিতে বাড়ছে জঙ্গিদের ভিড়। আজ
মন্ত্রিসভার বৈঠকে অজিত ডোভাল এ নিয়ে তথ্য হাজির করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, অন্তত ১০০ জন জঙ্গি এই মুহূর্তে ভারতে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তারা যাতে বিনা বাধায় নিয়ন্ত্রণরেখা পেরোতে পারে, সে জন্য মাঝে মাঝেই গোলা-গুলি ছুড়ছে পাক সেনা। ডোভালের
দাবি, গত ছ’দিনে অন্তত আট থেকে দশটি অনুপ্রবেশ রুখতে সক্ষম হয়েছে সেনা।

গোয়েন্দারা বলছেন, তবে হামলা এড়াতে জঙ্গিরা এখন তাদের কৌশলও বদলাচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে দুধনিয়াল, লিপা, টংধার এলাকায় হামলা চালিয়ে জঙ্গি নিকেশ করা হয়েছিল। শিবিরগুলি জনবসতি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় সহজেই সেগুলিকে চিহ্নিত করে হামলা করে ভারত। প্রবল ক্ষতি হয় জঙ্গিদের। তার পর থেকেই জঙ্গি শিবিরগুলিকে নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে পিছিয়ে জনবসতির মধ্যে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। উদ্দেশ্য যাতে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কায় হামলা চালাতে দ্বিধায় পড়ে ভারতীয় সেনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

LOC pakistan india
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE