Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ভারতকেই দুষলেন পাক দূত

গুলি থামছে না নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পার থেকে

স্বাধীনতা দিবসে নরেন্দ্র মোদীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বন্ধুত্বের বার্তা দিয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পার থেকে উড়ে আসছে পাক সেনার গোলা।

পাক সেনার মর্টার-হামলা। রবিবার জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চে। ছবি: পিটিআই।

পাক সেনার মর্টার-হামলা। রবিবার জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৫
Share: Save:

স্বাধীনতা দিবসে নরেন্দ্র মোদীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বন্ধুত্বের বার্তা দিয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পার থেকে উড়ে আসছে পাক সেনার গোলা। নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬। আজ বিদেশ মন্ত্রকের তরফে পাক হাই-কমিশনারের কাছে প্রতিবাদ জানানো হলেও তিনি গোটা দায় ভারতের উপরেই চাপিয়েছেন। ফলে দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের নির্ধারিত বৈঠকের ঠিক এক সপ্তাহ আগেও চড়ছে উত্তেজনার পারদ।

১৫ অগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চে পাক সেনার গোলায় নিহত হয়েছিলেন পাঁচ নিরীহ গ্রামবাসী। আজ মর্টার শেলের আঘাতে মৃত্যু হয় এক মহিলার। দু’দিনে আহত অন্তত ১৬ জন। পাক সেনার গুলিতে একসঙ্গে এত জন নিরীহ নাগরিকের হতাহত হওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে বিরল। বিদেশ মন্ত্রকের যুক্তি, গত এক সপ্তাহ ধরে পাকিস্তানের দিক থেকে লাগাতার বিনা প্ররোচনায় গোলাবর্ষণ হচ্ছে। একাধিক বার ডিজিএমও স্তরে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েও লাভ হয়নি। অথচ গত কাল ও আজ পুঞ্চে একেবারে পরিকল্পনা করে সাধারণ গ্রামবাসীদের নিশানা করে ছোড়া হয়েছে গোলা-মর্টার শেল।

আজ পাক হাই-কমিশনার আব্দুল বাসিতকে তলব করে এরই প্রতিবাদে ক্ষোভ উগরে দেন বিদেশ মন্ত্রকের সচিব (পূর্ব) অনিল ওয়াধয়া। কিন্তু সাউথ ব্লক থেকে বেরিয়েই বাসিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘জুলাই ও অগস্ট মাসে ভারতের দিক থেকে ৭০ বার সংঘর্ষ-বিরতি চুক্তি ভাঙা হয়েছে। আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। কারা বিনা প্ররোচনায় গুলি চালায়, তা নির্দিষ্ট করতে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা চাই।’’এই বৈঠকের পরেই ফের রাজৌরিতে পাকিস্তানের দিক থেকে গোলাবর্ষণ শুরু হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিস্থিতি যা, তাতে আগামী ২৩ ও ২৪ অগস্ট দিল্লিতে দুই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠকেও দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপ হতে বাধ্য। গত মাসে রাশিয়ার উফা-য় মোদী ও শরিফের বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, মুখোমুখি বসবেন দুই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা— অজিত ডোভাল ও সরতাজ আজিজ। কিন্তু উফার বৈঠকের পর থেকেই জল গড়াচ্ছে উল্টো দিকে। ফলে যতই স্বাধীনতার শুভেচ্ছা বিনিময় হোক, দু’দেশই এখন পরস্পরের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ সম্বলিত ‘ডসিয়ের’ তৈরিতে ব্যস্ত।

ভারতের তরফে অভিযোগের তালিকা স্বাভাবিক ভাবেই দীর্ঘ। সীমান্তে-নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি চলছিল বহুদিন ধরেই, পরে তার সঙ্গে যোগ হয়েছে গুরুদাসপুরে পাক জঙ্গিদের হামলা, উধমপুরে বিএসএফ কনভয়ে হামলা চালাতে এসে পাক জঙ্গি মহম্মদ নাভেদের ধরা পড়া। সেই সঙ্গে ২৬/১১-র অন্যতম ষড়যন্ত্রী জাকিউর রহমান লকভির পাক আদালতে বারবার ছাড়া পাওয়ার বিষয়টিও বৈঠকে তুলবে দিল্লি। আবার এর পাল্টা পাকিস্তানের দিক থেকে সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণে অভিযুক্ত অসীমানন্দর জামিন পাওয়ার প্রতিবাদ জানানো হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে লাগাতার পাক হানার মুখে বৈঠকের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘‘আমরা যখন সরকারে ছিলাম, তখন বিজেপি দাবি করত, ইউপিএ সরকার পাকিস্তানের সম্পর্কে নরম মনোভাব নিচ্ছে। সন্ত্রাস বন্ধ না হতেই আলোচনা করছে। এখন বিজেপি সরকার তিন পা এগোচ্ছে, চার পা পিছিয়ে যাচ্ছে।’’ বস্তুত, গত কাল লাল কেল্লার বক্তৃতাতেও পাকিস্তান নিয়ে মুখ খোলেননি প্রধানমন্ত্রী। বিদেশনীতি নিয়েই ছিলেন নীরব। ফলে লোকসভা নির্বাচনের আগের মতো পাক সন্ত্রাসের জবাব দেওয়ার কথা মোদীর মুখে এখন আর শোনা যাচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীদের একাংশ।

বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী তথা প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহ অবশ্য বলেন, ‘‘যখনই আলোচনা হয়, তখনই পাকিস্তানের ভিতরে নানা রকম শক্তি সেই আলোচনা ভেস্তে দিতে তৎপর হয়ে ওঠে। এ বার কার নির্দেশে এ সব হচ্ছে, তা দেখতে হবে।’’ সাউথ ব্লকের বক্তব্য, শরিফ গত কালও আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসার কথা বলেছেন। পাকিস্তানের উপর চাপ তৈরির জন্য আলোচনাই একমাত্র রাস্তা। তাই বিরোধীদের আক্রমণ সত্ত্বেও উফা বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনেই এগোতে চাইছে মোদী সরকার।

মৌখিক চাপ যে একেবারে নেই, তা নয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর আজ এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে বলেছেন, ‘‘আমরা মুখের মতো (পাক হামলার) জবাব দিচ্ছি। দ্বিগুণ, তিনগুণ জবাব দিচ্ছি।’’ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহও বলেন, ‘‘ভারতের দিক থেকে সমুচিত জবাব দেওয়া হচ্ছে। মোদী সরকারের আমলে নিয়ন্ত্রণরেখা বা সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ তাই এখন অনেক নিরাপদ বোধ করছেন।’’ যদিও নিয়ন্ত্রণরেখা-লাগোয়া বালাকোট সেক্টরের গ্রামবাসীদের মধ্যে আজ দিনভর ‘নিরাপদ বোধ করার’ লক্ষণ দেখা যায়নি। বাসোনি গ্রাম যেমন। আতঙ্কে গ্রাম ফাঁকা হতে শুরু করেছে। তিন-চার দিন ধরে এই গ্রামেই পাকিস্তানের গোলা এসে পড়ছিল। শনিবারের গোলাগুলিতে প্রথমে তিন জন নিহত হন। যাঁদের মধ্যে ছিলেন গ্রামের সরপঞ্চ, ৫৫ বছরের কারামত। মইন খান নামে ১২ বছরের এক কিশোরেরও মৃত্যু হয়। কারামতকে রক্ষা করতে এসে ১৭ বছরের আর এক তরুণ মারা যান। প্রাণ হারান এক কলেজ শিক্ষকও। আজ সকালে পাক সেনার মর্টারে মৃত্যু হয় ৩৮ বছরের নুসরতের। এর পর জিতেন্দ্র সিংহকে তীব্র কটাক্ষ করে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা টুইটারে লেখেন, ‘দয়া করে থামতে বলুন ওঁকে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE