Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

অপরাধীরা কঠিনতম শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেই জুনেইদের গ্রামের

ফরিদাবাদের মূল সড়ক থেকে ধানখেতের ভিতর দিয়ে কাঁচা-পাকা রাস্তায় এগোলেই ঘিঞ্জি গ্রাম। জুনেইদের বাড়ি খুঁজতে সময় লাগল ঠিক পাঁচ মিনিট। পুলিশ, মিডিয়া, প্রাক্তন (কংগ্রেস) এবং বর্তমান (বিএসপি) বিধায়কদের যাতায়াত লেগেই রয়েছে

অগ্নি রায়
বল্লভগড় শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ০৫:০২
Share: Save:

একটি খুন আর একরাশ আতঙ্ক।

জুনেইদের অচেতন দেহটা দুষ্কৃতীরা আসাবটী স্টেশনে ছুড়ে ফেলার পরে এক সপ্তাহ হতে চলল প্রায়। কিন্তু ভরদুপুরেও হরিয়ানার খান্ডওয়ালি গ্রাম যেন অভিশপ্ত রাতের মতো।

ফরিদাবাদের মূল সড়ক থেকে ধানখেতের ভিতর দিয়ে কাঁচা-পাকা রাস্তায় এগোলেই ঘিঞ্জি গ্রাম। জুনেইদের বাড়ি খুঁজতে সময় লাগল ঠিক পাঁচ মিনিট। পুলিশ, মিডিয়া, প্রাক্তন (কংগ্রেস) এবং বর্তমান (বিএসপি) বিধায়কদের যাতায়াত লেগেই রয়েছে। আসা-যাওয়া করছেন জমিয়তে–উলেমা-ই-হিন্দের মেজো-সেজো নেতারা।

কিন্তু শাসক দলের কেউ নেই। ‘‘পুলিশ আর এই বিজেপি সরকার আমাদের শেষ করে দেবে। অপরাধ হচ্ছে, কিন্তু সাজা পাচ্ছে না কেউ।’’ কপাল চাপড়াচ্ছেন আসলাম খান। জুনেইদের বাড়ির গলির মুখেই তাঁর পকোড়া ভাজার দোকান। সঙ্গে টুকিটাকি মনিহারি জিনিস। তাঁর আশঙ্কা, ‘‘মাত্র একজন গ্রেফতার হয়েছে। তাকেও পাগল সাজিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে। জালিম তো উয়ো হ্যায়, জো জালিম কো ছুপাতা হ্যায়।’’ তা হলে খান্ডওয়ালি কী করবে? ‘‘খুদা যে তাকত দিয়েছেন, তা এই সময়েই খরচ করতে হবে। যত দিন না অপরাধীরা কঠিনতম সাজা পাচ্ছে, আমাদের বিশ্রাম নেই’’, দাওয়ায় বসে বিড়বিড় করে বলছেন জুনেইদের দাদা (ঠাকুরদা)। অস্থিচর্মসার শরীরে একমাত্র জ্বালানি বিড়ির ধোঁয়া। আর তাঁর ছেলে, নিহত জুনেইদের ‘আব্বু’ জালালুদ্দিন শূন্য দৃষ্টি নিয়ে ঠায় বসে রয়েছেন সকাল থেকে। ‘‘কোনও নেতা-মন্ত্রী খোঁজ নিতে আসেননি দিল্লি থেকে। শুধু ডেপুটি কমিশনার সাহেব এসে আশা দিয়েছেন শিগগিরি নাকি সব অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে।’’

আরও পড়ুন: ভোজে দিল্লি, জুনেইদ-হারা গ্রাম নেই ইদে

থমথমে ভাবটা কাটছে না সে আশ্বাসে। হাজার চারেক মানুষের বসতি গ্রামে। নব্বই শতাংশই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। ‘‘কিন্তু পালওয়াল থেকে ফরিদাবাদের এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কোনও সাম্প্রদায়িক হিংসার রেকর্ড পাবেন না। কিন্তু এই ঘটনার পর উত্তেজনা যে ভাবে বেড়ে যাচ্ছে, তাতে কী হয় বলা মুশকিল।’’ দাওয়ায় বসেই প্রমাদ গুনলেন প্রবীণ জলেবা খাঁ। যিনি জুনেইদের ‘দাদা’-র সমবয়সী।

জুনেইদের বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে হিন্দু মহল্লা। মিডিয়ার সামনে ঘটনার প্রবল নিন্দা করলেন তাঁরাও। ‘‘ইদের সময় আমরা তো একসঙ্গেই আনন্দ করেছি এত দিন। গত কালই তা হল না,’’ বলছেন যশপাল চৌহান। কুড়ি কিলোমিটার দূরে একটি কারখানায় মজদুরের কাজ করেন তিনি। তাঁর পাশেই খাটিয়ায় বসা প্রবীণ ট্যাক্সিচালক সুরজমল। তিনিও বললেন, ‘‘ওদের তিন ভাইয়েরই পড়াশুনোয় মন ছিল। লড়াই-ঝগড়ার ছেলে ছিল না ওরা।’’

ঠিক এই কথাই সমস্বরে বলেছেন জুনেইদের পড়শিরাও। দালানে খাটিয়া পেতে অষ্টপ্রহর তাঁরা এই প্রবল শোকের মধ্যে জালালুদ্দিনকে সাহস জোগাচ্ছেন। প্রত্যেকের এক কথা, ‘‘এত হাসিখুশি ছিল বাচ্চাটা, কেউ কখনও ওর মুখ ভার দেখেনি। রাস্তায় সবাইকে দুয়া-সালাম করে চলত। এমন কষ্টের ইদ আমরা কেউ ভাবতে পারিনি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE