টাকা তোলার লাইনে দাঁড়িয়ে পুলিশের হাত থেকে চা-বিস্কুট। রবিবার একবালপুরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
টাকার দুশ্চিন্তায় ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছিল। সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে বিরোধীরা রাজনৈতিক হাতিয়ার করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। সেই দেখে সাধারণ মানুষের সুবিধায় সামান্য রাশ আলগা করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সুখবর শুধু বয়স্ক নাগরিক, পেনশন গ্রাহকদের জন্য।
রাতারাতি পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের পরে বাজারে নোটের জোগান কমে যাবে দেখে, পুরনো নোট বদল, ব্যাঙ্কের শাখা ও এটিএম থেকে টাকা তোলার ক্ষেত্রে বেশ কিছু ঊর্ধ্বসীমা বসিয়েছিল মোদী সরকার। আজ মূলত সেই সব ঊর্ধ্বসীমাই কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। তার পাশাপাশি বয়স্ক নাগরিক, প্রতিবন্ধীদের দুর্ভোগ কমাতে তাঁদের জন্য পৃথক লাইনের বন্দোবস্ত করতে ব্যাঙ্কগুলিকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। শহরের থেকেও গ্রামের মানুষ নতুন নোটের অভাবে বেশি সমস্যায় পড়ছেন বুঝে, রাজ্য সরকারগুলিকে তৎপর হতে অনুরোধ জানিয়েছে কেন্দ্র। সরকারি পেনশন গ্রাহকদের লাইফ সার্টিফিকেট প্রতি বছর নভেম্বরে জমা দিতে হয়। আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সেই সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।
পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ঘোষণার পরেই নরেন্দ্র মোদী জাপান সফরে চলে গিয়েছিলেন। শনিবার মধ্যরাতে তিনি দেশে ফেরেন। রবিবার সারাদিন গোয়া, কর্নাটক ও মহারাষ্ট্রে অনুষ্ঠান ছিল প্রধানমন্ত্রীর। বেশি রাতে দিল্লি ফিরেই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে পরিস্থিতির পর্যালোচনায় বসেন মোদী। বিভিন্ন রাজ্য থেকে গণ্ডগোলের খবর এসে পৌঁছচ্ছিল কেন্দ্রের কাছে। তা নিয়ে সন্ধ্যায় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের মধ্যেও বৈঠক হয়। ব্যাঙ্ক, এটিএম, ক্যাশ ভ্যানের নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে কথা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য চাওয়া হয় রাজ্যগুলির।
অর্থ মন্ত্রক আজ নির্দেশ দিয়েছে, ব্যাঙ্কগুলিতে বয়স্ক নাগরিক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক লাইনের বন্দোবস্ত করতে হবে। বহু ব্যাঙ্কের শাখায় একই লাইনে পুরনো নোট বদল ও অ্যাকাউন্ট থেকে তোলার ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ছিল। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। পুরনো নোট বদল ও অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বদলের জন্য পৃথক লাইনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এটিএমের তুলনায় ব্যাঙ্ক থেকে বেশি টাকা দেওয়া হলেও সেখানে ২০০০ টাকার নোট মেলায় তা ভাঙাতে গিয়েও মানুষ সমস্যায় পড়ছিলেন। আজ অর্থ মন্ত্রক ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে, যাতে ছোট-বড় সব অঙ্কের নোটই সব শাখায় পাওয়া যায়। ওই শাখাগুলি থেকে যেন সব রকম নোটই বিলি করা হয়। আজ থেকে নতুন ৫০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হয়েছে। গত কালই নাসিকের টাঁকশাল থেকে প্রথম দফায় ৫০ লক্ষ নোট রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে আসে। এখনও অবশ্য দেশের প্রতি কোণায় নতুন ৫০০ টাকার নোট পৌঁছয়নি।
বাজারে যে নগদের জোগানে অভাব ঘটছে, অর্থ মন্ত্রকের হিসেব থেকেই তা স্পষ্ট। ওই হিসেব অনুযায়ী, রবিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ৩ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট জমা পড়েছে। সেই তুলনায় বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শাখা, এটিএম থেকে বিলি হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের পর সমস্ত এটিএম-এর যন্ত্রাংশ ও সফটওয়্যার বদলাতে হবে। যাতে সেখান থেকে নতুন মাপের ৫০০ ও ২০০০ টাকার নোট বের হতে পারে। যে সব এটিএম-এ এই বদল হয়ে গিয়েছে, সেখান থেকে এখন দৈনিক ২০০০ টাকার বদলে ২৫০০ টাকা মিলবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রক। কিন্তু বাস্তবে সিংহভাগ এটিমএম-এ এই কাজ না হওয়ায় কোনও লাভ হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। পুরনো নোট বদলের ক্ষেত্রে দিনে ৪০০০ টাকার ঊর্ধ্বসীমা জারি করেছিল সরকার। আজ তা বাড়িয়ে ৪,৫০০ টাকা করা হয়েছে। এত দিন ব্যাঙ্ক থেকে দিনে ১০,০০০ টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা ছিল। সপ্তাহে ঊর্ধ্বসীমা ছিল ২০,০০০ টাকা। আজ দৈনিক ঊর্ধ্বসীমা তুলে দিয়ে সাপ্তাহিক ঊর্ধ্বসীমা ২৪,০০০ টাকা করা হয়েছে। সোমবার ব্যাঙ্ক ছুটি বলে এই সুবিধা অবশ্য মিলবে মঙ্গলবার থেকে।
বিরোধীদের অভিযোগের পাশাপাশি সরকারের কাছেও রিপোর্ট এসেছে, বহু গ্রামের ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে প্রয়োজনীয় পরিমাণে টাকা পৌঁছচ্ছে না। আজ অর্থ মন্ত্রকের তরফে সব রাজ্যের মুখ্যসচিবকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, যে সব জায়গায় নগদ টাকার সমস্যা হচ্ছে, সেই জায়গাগুলি চিহ্নিত করে, সেখানে মোবাইল ব্যাঙ্কিং ভ্যান ও ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে টাকা পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে। বিশেষ করে বড় হাসপাতালগুলিতে মোবাইল ব্যাঙ্কিং ভ্যান পাঠিয়ে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যাদের এখনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই, দ্রুত তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে দেওয়ার জন্যও ব্যাঙ্কগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রক। সরকারের কাছে রিপোর্ট এসেছে, বেশ কিছু হাসপাতাল, বিয়ের মরসুমে ব্যবসায় নামা ক্যাটারার্স, মণ্ডপ প্রস্তুতকার সংস্থা চেক বা ডিমান্ড ড্রাফ্ট নিতে রাজি হচ্ছে না। এ সব ক্ষেত্রে ওইসব সংস্থার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানোর কথা বলেছে অর্থ মন্ত্রক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy