হিন্দুত্ব, তালাক, কাশ্মীর, স্বচ্ছতা, গরিব-দলিত হয়ে রামকৃষ্ণ, রামমোহন রায় ও বিদ্যাসাগরও!
বছরের শেষ দিনে নতুন বছরের ‘রোডম্যাপ’ শোনাতে গিয়ে সবই ছুঁয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সঙ্গে ‘নতুন ভারত’ গড়ার ভার তুলে দিলেন ‘এই শতাব্দীর প্রথম ভোটারদের’ হাতে।
গুজরাত ভোটে ধাক্কা খেয়ে কয়েক রাজ্যের বিধানসভা আর লোকসভা নির্বাচনে জেতাই এখন পাখির চোখ নরেন্দ্র মোদীর।
বছরের শেষ দিনে রেডিওতে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে তাই জোর দিলেন ‘শতাব্দীর প্রথম ভোটারদের’ উপরে। এই শতাব্দীর গোড়ায় যাঁদের জন্ম, ২০১৮ তে তাঁরা ১৮ হবেন। পাবেন ভোটাধিকার। এঁদের কাছে টানতে মোদী বললেন, ‘‘এঁরাই নতুন ভারতের যুবক। এঁরাই গড়বেন নতুন ভারত, যেখানে ঠাঁই হবে না জাতিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি, দারিদ্র, আবর্জনার মতো সমস্যার। কায়েম হবে শান্তি, ঐক্য, সদ্ভাবনা।’’
মোদীর বক্তব্য, আগামী অগস্টে এই তরুণদের থেকে বেছে নিয়ে দিল্লিতে হবে ‘নকল সংসদ’। ২০২২ সালের মধ্যে ‘নতুন ভারত’ গঠন কী ভাবে হবে, এই তরুণেরাই তা ঠিক করবেন। গুজরাত ভোটে তিন তরুণ নেতাকে দিয়ে রাহুল গাঁধী বিজেপিকে ভাল রকম ধাক্কা দিয়েছেন। গোটা দেশেও যুবকদের মধ্যে মোদীর যে জনপ্রিয়তা ছিল ২০১৪ সালে, তাতেও ভাটা পড়েছে। এই পরিস্থিতিতেই নতুন যুবকদের আরও বেশি করে কাছে টানতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। দলকেও পুরোদস্তুর কাজে লাগাতে চাইছেন এ কাজে।
আরও পড়ুন: সঙ্কট কাটল শাহের আশ্বাসে, দায়িত্ব নিলেন নিতিন পটেল
কিন্তু তরুণ প্রজন্মকে নতুন ভারতের স্বপ্ন দেখাতে গিয়ে নয়া বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মোদী। কংগ্রেসের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী যে লক্ষ্য পূরণের জন্য ২০২২ সাল পর্যন্ত সময় নিতে চাইছেন, তত দিন কি আদৌ তিনি ক্ষমতায় থাকবেন? যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাঁচ বছরের জন্য তিনি ক্ষমতায় এসেছেন, সেগুলি অপূর্ণ রেখে দিয়েছেন। ব্যর্থতা ঢাকতেই এখন তিনি নতুন করে বোকা বানাচ্ছেন মানুষকে। আর সাম্প্রদায়িকতা তো ছড়াচ্ছে তাঁর জমানাতেই।’’
বিজেপি নেতারা অবশ্য বলছেন, বছরের শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন তাঁর ‘রোডম্যাপ’। আজ সকালে কেরলের শিবগিরি মঠে ভিডিও বার্তায় হিন্দু ঋষি-মুনি, কুম্ভের কথা বলে এক দিকে হিন্দুত্বের কথা বলেছেন। আবার তাৎক্ষণিক তালাক রোখা বা হজ যাত্রায় মহিলাদের একা পাঠানোর কথা বলে ভারসাম্য বজায় রেখেছেন। একই সঙ্গে পূজা পদ্ধতির গোঁড়ামি ছেড়ে সংস্কারের কথাও বলেছেন তিনি। এই প্রসঙ্গেই টেনে এনেছেন রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগরের কথা। আবার বড়দিনের উৎসবের সঙ্গে রামকৃষ্ণের ‘শিব-ভাবে জীব-সেবা’র কথা তুলে এনেছেন। কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের শিকার হওয়া সত্ত্বেও ‘টপার’ আঞ্জুম বসির খান খট্টকের কথা বলে উপত্যকার মন কাড়তে চেয়েছেন। কালো টাকা, বেনামি সম্পত্তি, দুর্নীতিতে লাগাম দিয়ে ‘সবকা সাথ-সবকা বিকাশে’র কথাই বলেছেন। বিজেপির তাই দাবি, নিন্দুকেরা যা-ই বলুন, সব মিলিয়ে এক ‘ইতিবাচক’ মহলেই নতুন বছরে প্রবেশ করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।