Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩

রাজনীতির ইতিহাস পড়ালেন ‘মুখার্জি স্যার’

রাজনীতিক না হলে তিনি যে শিক্ষকতাই করতেন, তা অতীতে বারবার বলেছেন। জীবনের শুরুতে স্বল্প সময়ের জন্য কলেজে শিক্ষকতাও করেছেন। আজ প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক পর ক্লাসরুমে ফিরে গেলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়!

অন্য ভূমিকায়। শিক্ষক দিবস উপলক্ষে রাজনীতির ইতিহাস পড়ালেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। নয়াদিল্লিতে শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

অন্য ভূমিকায়। শিক্ষক দিবস উপলক্ষে রাজনীতির ইতিহাস পড়ালেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। নয়াদিল্লিতে শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৭
Share: Save:

রাজনীতিক না হলে তিনি যে শিক্ষকতাই করতেন, তা অতীতে বারবার বলেছেন। জীবনের শুরুতে স্বল্প সময়ের জন্য কলেজে শিক্ষকতাও করেছেন। আজ প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক পর ক্লাসরুমে ফিরে গেলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়! রাইসিনা হিলে প্রেসিডেন্ট এস্টেটের মধ্যেই রাজেন্দ্র প্রসাদ সর্বোদয় স্কুলের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রদের নিয়ে ঠাসা শ্রেণিকক্ষ। তাদের মুখোমুখি হয়েই প্রণববাবু বললেন, ‘‘আজ কিন্তু আমি রাষ্ট্রপতি নই। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও নই। তোমাদের মুখার্জি স্যার!’’

Advertisement

কাল শিক্ষক দিবস। প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিনটিই শিক্ষক দিবস হিসেবে ফি-বছর পালিত হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ভবনের সচিবালয় জানাচ্ছে, অতীতে শিক্ষক দিবসে রাষ্ট্রপতির কোনও স্কুলে গিয়ে পড়ানোর নজির বিশেষ নেই। সে দিক থেকে প্রণববাবুই প্রথম। শিক্ষক দিবসের আগের দিন সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন ভিডিও কনফারেন্সে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বললেন, তখন রাষ্ট্রপতি পুরোদস্তুর পাঠ পড়ালেন ছাত্রদের। টানা প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ছাত্রদের সামনে তুলে ধরলেন তাঁর সব থেকে পছন্দের বিষয়টি— ‘ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস’।

ক’দিন আগে প্রয়াত হয়েছেন রাষ্ট্রপতির স্ত্রী শুভ্রাদেবী। গত কালও রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্র জানিয়েছিল, ‘ওঁর শরীর ভাল যাচ্ছে না।’ কিন্তু আজ প্রণববাবুকে দেখে কে বলবে সে কথা! বন্ধগলা কোট পরে ক্লাসরুমে যখন ঢুকছেন, তখন দেখেই ঠাওর করা যাচ্ছে খুশি খুশি ভাব। যেন কত দিন ধরে এই মুহূর্তটার অপেক্ষায় ছিলেন। শুরুতে তাঁর প্রথম জীবনের কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি। বলেন, ‘‘তোমরা বোধ হয় আমার মতো কেউ দুষ্টু নও। আমি কিন্তু ভারী দুষ্টু ছেলে ছিলাম! রাখাল ছেলেদের সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব ছিল আমার। যদিও সন্ধ্যা হতে না হতেই ঘরে ফিরে আসতাম মায়ের কাছে। কারণ অন্ধকারকে খুবই ভয় পেতাম। কিন্তু পড়াশোনা ফেলে খেলাধুলোয় বেশি মন ছিল বলে মা খুব বকাবকিও করতেন।’’ আবার কী ধরনের কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁকে পড়াশোনা করতে হয়েছে, তা-ও ছাত্রদের জানান প্রণববাবু। বলেন, ‘‘আমি মেধাবী ছাত্র ছিলাম না কখনও। গড়পড়তা ছাত্র ছিলাম। স্কুলে যাওয়ার সময় পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতাম। পথে একটা খাল পার হতে হতো। সঙ্গে একটা গামছা রাখতাম। আসা-যাওয়ার পথে স্কুলের পোশাক ছেড়ে গামছা পরে সেই খাল পেরোতাম।’’

নিজের কথা একটু বলেই প্রণববাবু সটান চলে আসেন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রসঙ্গে। শুরুটা করেন সিপাহী বিদ্রোহের সময় থেকে। বলেন, ‘‘আদতে এটি সিপাহী বিদ্রোহ ছিল না। ছিল সশস্ত্র বিপ্লব। ব্রিটিশরাই এমন নেতিবাচক নাম দিয়েছিল।’’ ক্রমশ ‘মুখার্জি স্যার’ ঢুকে পড়েন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাঠামো থেকে ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের বিকাশ ও সংবিধান সভার ইতিহাসে। স্বাধীনতার পর গত ষাট বছরে ভারতে কৃষি উৎপাদন, ইস্পাত বা সিমেন্টের উৎপাদন কী ভাবে বেড়েছে— ছাত্রদের তা সবিস্তার বুঝিয়ে দেন। সেই সঙ্গে ব্যাঙ্কের জাতীয়করণ, নব্বইয়ের দশকে আর্থিক উদারীকরণ থেকে একশো দিনের কাজ, খাদ্যের আইনি অধিকারের প্রেক্ষাপটও ব্যাখ্যা করেন। আবার এ-ও বোঝান, একুশ শতকে ভারতীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নাগরিক সমাজের মতামত কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisement

তবে রাষ্ট্রপতির এই পাঠ নিয়েও রাজনীতি টেনেন বিরোধীরা। কংগ্রেস মুখপাত্র শক্তি সিংহ গোহিল বলেন, প্রধানমন্ত্রীরও উচিত ছিল রাষ্ট্রপতির পাঠশালায় অংশ নেওয়া। তিনি প্রায়ই প্রশ্ন তোলেন, গত ষাট বছরে দেশের কী হয়েছে? রাষ্ট্রপতির কথা শুনলে বুঝতে পারতেন, গত ষাট বছরে ভারত কী ভাবে তিল তিল করে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পথে এগিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.