প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, সোমবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই জিএসটির নতুন হার চালু হবে, ফলে উপভোক্তাদের খরচ অনেকটাই কমবে। কিন্তু সোমবার কলকাতা ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, মুদির দোকানে দৈনন্দিন পণ্যের ক্ষেত্রে অন্তত এ দিন এই সুবিধা গ্রাহকদের কাছে সে ভাবে পৌঁছয়নি। বড় বিপণিগুলির ক্ষেত্রে দাম কমলেও দামের ফারাকে বিভ্রান্তি রয়ে গিয়েছে। জামা-জুতোয় যতটা দাম কমার কথা ছিল, ততটা কমেনি। ফলে দামের ক্ষেত্রে আরও কঠোর সরকারি নজরদারির দাবি তুলেছে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
বেশ কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে জিএসটি এবং তার দামের মধ্যে এখনও ফারাক কেন— তার উত্তর কোনও পক্ষের কাছেই মেলেনি। ক্রেতাদের অনেকের মতে, মোদী সরকার বার বার দাবি করেছে, জিএসটি কমলে তার সুবিধা পুরোটাই উপভোক্তারা পাবেন। কিন্তু তা যে কথার কথা, সেটা ফের প্রমাণিত হল। সূত্রের খবর, এ দিন বিভিন্ন দোকানে দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার ঝামেলাও হয়েছে। ফলে নতুন জিএসটি ব্যবস্থা চালুর দিনেই তার সঙ্গী হয়েছে বিতর্ক।
কলকাতায় যেমন হাতিবাগান, জানবাজারের মতো বড় বাজার এলাকায় কোনও মুদির দোকানেই গ্রাহকেরা সাবান, শ্যাম্পু, পেস্ট, বিস্কুট, ম্যাগির মতো পণ্যে জিএসটি কমার সুবিধা পাননি এ দিন। সেখানকার দোকানিদের স্পষ্ট কথা, ‘‘আমরা যে টাকা দিয়ে কিনেছি, তার উপর বিক্রির অঙ্ক নির্ভর করে। এ ক্ষেত্রে পুরনো জিনিসে যে জিএসটি মিটিয়েছিলাম, সেই অনুসারে ধার্য পুরনো দামেই তা বিক্রি করব।’’ তাঁদের বক্তব্য, উপভোক্তাদের পূর্ণ সুবিধা পেতে সপ্তাহ দুয়েক লাগতে পারে। অন্য দিকে, স্পেনসার্সের এক বিপণিতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, এই সব পণ্যেই তারা নতুন দামের লেবেল লাগিয়ে দিয়েছে। রিলায়্যান্স স্মার্ট পয়েন্টে সব পণ্যের ক্ষেত্রে নতুন দাম না সাঁটলেও, তা কম্পিউটারের সিস্টেমে আপডেট হয়ে গিয়েছে বলে জানান কর্মীরা। তবে মোর সুপারমার্কেটের কর্মীদের বক্তব্য, নতুন দাম নেওয়ার নির্দেশ আসেনি। কর্তৃপক্ষ যদিও দাবি করেছেন, তাঁদের সব বিপণিতে নতুন দাম চালু হয়েছে। তার জন্য হিসাবপত্রের সফটওয়্যার ব্যবস্থাও বদলানো হয়েছে।
শপিং মল মণি স্কোয়ারে স্পেনসার্সের কর্মীরা জানিয়েছেন, পণ্যে পরিবর্তিত দাম সাঁটতেই তাঁরা সোমবার সাতসকালে (সকাল সাতটা নাগাদ) কাজে এসেছেন। মোর বিপণির এক কর্তার দাবি, তাঁদের কর্মীরা দোকানে ঢুকেছেন ভোর ৪টেয়। তবে কলকাতা এবং শহরতলির মুদি দোকানের মালিকদের বক্তব্য, ‘‘আমরা যে দামে জিনিস বিক্রি করি, তা বড় দোকান দিতে পারে না। ফলে এখনও আমাদের কাছেই দাম কম।’’ জিএসটি কমার সুবিধা তাঁরা কবে ক্রেতার হাতে তুলে দেবেন, সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি। তবে স্থানীয় দোকানে যে বাড়তি সুবিধা মেলে, তা কিছু ফুটেছে খড়দহের বাসিন্দা সোনালী দাসের মন্তব্যে। তিনি বলেন, ‘‘শুধুমাত্র বড় দোকান দামে ছাড় দিলে, সেখানে গিয়ে তো বেশি টাকার জিনিস কিনতে হবে আমাদের। পাড়ার দোকানে কেন ছাড় পাব না?’’ আবার বড় বিপণিগুলিতে বিভিন্ন জায়গায় পণ্যের দামের ফারাক চোখে পড়েছে। যেমন, কর কমায় ম্যাগিতে স্পেনসার্স এক টাকা ছাড় দিলেও, রিলায়্যান্স দিচ্ছে দু’টাকা। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এ দিকে নজর না দিলে বিভ্রান্তি বাড়বে।
সমস্যা তুলনায় কম জামাকাপড়, জুতো-সহ অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে। ১০০০-২৫০০ টাকা দামের জামা-জুতোয় জিএসটি ১২% থেকে কমে হয়েছে ৫%। এ দিন থেকেই সেগুলির নতুন দাম নিচ্ছে ছোট-বড় সব বিপণি। তার বেশি দামির ক্ষেত্রে কর বেড়ে হয়েছে ১৮%। বদলেছে সেই দামও। তবে ১০০০ টাকার কম দামি পণ্যে জিএসটি ৫ শতাংশেই থাকায় দাম বদলায়নি। শপার্স স্টপ, প্যান্টালুন্স, বাজার কলকাতার মতো বহু ব্র্যান্ডের বিপণিতে সিস্টেমে নতুন দাম রয়েছে। সাঁটা হয়েছে পণ্যের গায়েও। বাটা, অজন্তার মতো জুতোর দোকানে হয় পণ্যের উপরে নতুন দাম দেখা গিয়েছে, নয়তো বিল করতে গেলে তা দেখা যাচ্ছে। ফলে ক্রেতাদের সমস্যা হয়নি। সূত্রেরও দাবি, সকলেই এসে জিএসটির পরে দাম কতটা কমল, সেটা জিজ্ঞেস করে কিনছেন।
তা হলে কি জিএসটি কমার পুরো সুবিধা পেলেন ক্রেতা?
হাটেবাজারে ঘুরে স্পষ্ট, অন্তত এ দিন বেশির ভাগ পণ্যেই ক্রেতা সেই সুবিধা পাননি। পোশাক কিংবা জুতোয় জিএসটি কমেছে ৭%। কিন্তু ক্রেতাদের থেকে ৫.৫-৬.৫ শতাংশ দাম কম নেওয়া হচ্ছে। যেখানে ১৩% জিএসটি কমেছে, সেখানে দাম কমার হার ১১-১২.৫ শতাংশ। অর্থাৎ ফারাক থাকছেই। একাধিক পোশাক বিপণির কর্মীদের বক্তব্য, এই ফারাক সংস্থাই নিয়ে নিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধর্মতলার একটি জুতোর দোকানের কর্মী জানান, সংস্থা ১২০০ টাকার জুতোর দাম ১২৫০ করে তার উপর ৭% ছাড় দিচ্ছে। যা আখেরে প্রায় ৬%। বেশ কিছু ব্র্যান্ড নামের পোশাক সংস্থাও একই পন্থা নিয়েছে। ফলে দিনের শেষে পরিষ্কার, কেন্দ্র জিএসটি কমার সুবিধার পুরোটা ক্রেতারহাতে তুলে দিতে বললেও, তা বাস্তবে কখনও দেওয়া হবে কি নাসন্দেহ থাকছে।
জিএসটি-চিত্র
পাড়া বা বাজারে বেশির ভাগ মুদি দোকানেই দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যে জিএসটি কমার সুবিধা মেলেনি।
স্পেনসার্স, রিলায়্যান্স, মোর-এর মতো বিপণি অধিকাংশ পণ্যে দাম কমিয়েছে। তবে বিভিন্ন বিপণিতে দামের ফারাকে বিভ্রান্তি।
শহরে জামা-জুতো, বৈদ্যুতিন পণ্যে প্রায় সর্বত্র জিএসটি কমেছে। ফলে কমেছে দামও। তবে জামা-জুতোর ক্ষেত্রে কর কমার পুরো সুবিধা মেলেনি।
গাড়ির বিপণিতে বেড়েছে ভিড়। এক দিনেই বিক্রি বেড়েছে টিভি, ফ্রিজ, এসির মতো বৈদ্যুতিন পণ্যের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)