Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মোহনবাণী শুনেও মন্দিরের দাবিতে স্লোগান

নিন্দুকেরা বলছেন, এ বার সবচেয়ে চমকপ্রদ ছিল ভোটের আগে মোদী সরকারকে ‘বাঁচানোর জন্য’ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তৈরি ‘সেফটি ভাল্ভ’ তথা ধর্মমহাসভা।

ভোটের আগে মোদী সরকারকে ‘বাঁচানোর জন্য’ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তৈরি ‘সেফটি ভাল্ভ’ তথা ধর্মমহাসভা দেখা গেল কুম্ভমেলায়। ছবি: এপি।

ভোটের আগে মোদী সরকারকে ‘বাঁচানোর জন্য’ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তৈরি ‘সেফটি ভাল্ভ’ তথা ধর্মমহাসভা দেখা গেল কুম্ভমেলায়। ছবি: এপি।

গৌতম চক্রবর্তী
ইলাহাবাদ (প্রয়াগরাজ) শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:১৬
Share: Save:

অস্থায়ী তাঁবুনগরী, নাগা সাধুদের শাহি স্নান— কুম্ভমেলায় বরাবর এমন চমকপ্রদ কিছু দেখা যায়। নিন্দুকেরা বলছেন, এ বার সবচেয়ে চমকপ্রদ ছিল ভোটের আগে মোদী সরকারকে ‘বাঁচানোর জন্য’ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তৈরি ‘সেফটি ভাল্ভ’ তথা ধর্মমহাসভা। সেখানে দু’দিন ধরে সাধুসন্তেরা হরেক কথা বললেন। ক্ষোভও জানালেন। শেষে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত জানালেন, কোনও আন্দোলনের দরকার নেই। আরও মাস চারেক অপেক্ষা করা যাক। আদালত কী বলে, দেখা যাক। কারণ, মন্দির তৈরিতে সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে। ১-২ বছরের মধ্যে মন্দির হবেই।

পরিষদের উদ্যোগে যে প্রস্তাব নেওয়া হল, তাতেও বলা হল, মন্দির নিয়ে এখনই আন্দোলনের দরকার নেই। আর সাধু-নেতা রামবিলাস বেদান্তি বললেন, ‘‘মোদীকেই ক্ষমতায় আনতে হবে, কারণ, তিনিই মন্দির তৈরি করাতে পারবেন।’’ তবু ‘সব ভাল যার, শেয ভাল তার’ হল না। কারণ, সাধুদের একটা অংশ মন্দির তৈরির নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার দাবি জানাতে শুরু করলেন। শেষে তাঁদের ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হল।

রাম মন্দির নিয়ে সাধুদের বিভিন্ন অংশ মরিয়া বুঝেই মহাসভার আয়োজন করা হয়। ‘সেফটি ভাল্ভ’ আলগা করে ক্ষোভের ধোঁয়া বেরোতে দেওয়াও হয়েছে। ধর্মমহাসভার মঞ্চ থেকে এক সাধু যেমন জানালেন, রাম জন্মভূমি, কৃষ্ণ জন্মভূমি ও বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দিরকে স্বাধীন করা যায়নি। ভোটের স্বার্থে এরা গত পাঁচ বছর থমকে আছে। সঙ্গে সঙ্গে হাততালি! হাততালিওয়ালাদের মনে নেই, ১৯৮৯ সালে এই প্রয়াগকুম্ভে পরিষদ প্রস্তাব নিয়েছিল, দুর্গের অভ্যন্তরে রাখা অক্ষয়বট ও সরস্বতী কূপকে সেনার দখলমুক্ত করতে হবে। অক্ষয়বট এবং সেই কূপ এখনও দুর্গে, কুম্ভে পুণ্যার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

১৯৬৪ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ প্রতিষ্ঠার দু’বছর পর প্রয়াগকুম্ভে পরিষদ ‘বিশ্ব হিন্দু সম্মেলন’ ডেকেছিল। সেখানে ছিলেন পুরী ও দ্বারকার শঙ্করাচার্য। শৃঙ্গেরী ও জোশীমঠের শঙ্করাচার্য ছিলেন না। নয়ের দশকে স্বামী বাসুদেবানন্দ জোশীমঠের শঙ্করাচার্য হবেন, শোনা যাচ্ছিল। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সে বার বাসুদেবানন্দের দিকে, ১৯৯৮ সালের প্রয়াগকুম্ভেই তারা বাসুদেব-বিরোধী গোষ্ঠীকে পিটিয়েছিল বলে অভিযোগ। এ বারেও ভাগবতের পাশে পুরী ও দ্বারকার শঙ্করাচার্য।

আজ ভাগবতের বক্তৃতার কিছুক্ষণ আগে মঞ্চে উঠলেন জুনা আখড়ার প্রধান অবধেশানন্দ গিরি। জুনা এখন নাগা সাধুদের সবচেয়ে বড় আখড়া। তার পর নিরঞ্জনী ও মহানির্বাণী। অবধেশানন্দ আখড়া পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি। বর্তমান সভাপতি নিরঞ্জনী আখড়ার নরেন্দ্র গিরি বলেছিলেন, পরিষদের উদ্যোগে মন্দির গঠনে তাঁর সমর্থন, বিরোধিতা—কিছুই নেই। অতএব অবধেশানন্দকেও কিছু বলতেই হত। রাজনীতিতে সাধু, সাধু!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ram Mandir Dharma Sansad Kumbh Mela Mohan Bhagwat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE