দীর্ঘ দিন ধরে থমকে থাকা গুয়াহাটি-উত্তর গুয়াহাটি রোপওয়ে প্রকল্পের কাজ ফের শুরু হতে পারে। গৌহাটি হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, আগামী বছর জুলাইয়ের মধ্যে রোপওয়ের কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে বন্ধ থাকা প্রকল্পের কাজ ৭-৮ মাসের মধ্যে কী ভাবে শেষ হবে তা নিয়ে চিন্তায় গুয়াহাটি উন্নয়ন নিগম। ব্রহ্মপুত্রের উপর দিয়ে উত্তর গুয়াহাটি পর্যন্ত রোপওয়ে তৈরির প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০০৩ সালে। ২০০৬ সালে প্রকল্পের ভার জিএমডিএ-র হাতে দেওয়া হয়। প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছিল ২৭ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা। উমানন্দ ও উর্বশী দ্বীপের উপর দিয়ে যাওয়ার কথা ওই রোপওয়ের। ২০০৮ সালে ‘দামোদর রোপওয়েজ’কে কাজের বরাত দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের ৪ ডিসেম্বর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ রোপওয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১১ সালে।
কিন্তু ভারতীয় পুরাত্বত্ত্ব সর্বেক্ষণ বা এএসআই পুরকীর্তি সংরক্ষণ আইনের অধীনে, উ্রর্বশী দ্বীপের উপর দিয়ে রোপওয়ে নেওয়া ও দুই নম্বর স্তম্ভ বসানোয় আপত্তি জানায়। তত দিনে রোপওয়ে নির্মাণের জন্য ২২ কোটি টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। কাজও হয়ে গিয়েছিল প্রায় ৭০ শতাংশ। সাড়ে সাত কোটি টাকার বিদেশি নির্মাণ সামগ্রীও আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু এএসআইয়ের মঞ্জুরি না মেলায় থমকে যায় কাজ। এর পর দুই নম্বর স্তম্ভ জলের মধ্যে হেলে পড়ে। রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব ‘রাইটস লিমিটেড’কে বিকল্প রাস্তা সন্ধান করতে বলে। বিশেষজ্ঞ কমিটি পরীক্ষা করে জানায়, কাছারি ঘাট থেকে উত্তর গুয়াহাটিতে দোলগোবিন্দ মন্দিরের পিছনের পাহাড় পর্যন্ত রোপওয়ে টানতে গেলে উমানন্দ পাহাড় এড়ানো যাবে না। টি-৩ পিলারের অনুমতি এএসআই না দেওয়ায় জিএমডিএ মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়।
২০১৫ সালে জাতীয় স্মারক কর্তৃপক্ষ জিএমডিএকে স্তম্ভ তৈরির অনুমতি দেয়। ঠিক হয়, একটি স্তম্ভ হবে কামরূপ মহানগর জেলাশাসকের কার্যালয়ের পিছনে। অন্যটি, উমানন্দর কাছে, উর্বশী দ্বীপ থেকে ৩০০ মিটার দূরে। শেষ স্তম্ভ হবে উত্তর গুয়াহাটি বন দফতরের পাশে পাহাড়ের গায়ে। জরিপে দেখা যায়, রোপওয়ে উর্বশী দ্বীপের কাছে থাকা ইংরেজ আমলের জলতল পরিমাপক স্তম্ভ থেকে ১৬.৫১ মিটার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এএসআই সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার পরেও কাজ শুরু হয়নি।
নতুন সরকার ১০০ দিনের কাজের তালিকায় ওই প্রকল্পকে রাখে। জিএমডিএ প্রকল্প নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে প্রায় ৫০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প রিপোর্ট জমা দেয়। নতুন স্তম্ভ তৈরির জন্য টেন্ডার ডাকে জিএমডিএ। হাইকোর্ট প্রকল্পের বর্তমান গতিপ্রকৃতি নিয়ে বিশদ রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল জিএমডিএকে। আজ শুনানির পরে হাইকোর্ট বলে— ২০১৭ সালের জুলাই মাসের মধ্যে রোপওয়ের কাজ শেষ করতে হবে। কর্তৃপক্ষের মতে, কাজ শেষ করতে দরকার আরও অন্তত ২৭ কোটি টাকা। আগে খরচ হয়েছিল ২২ কোটি টাকা। পড়ে থাকা অনেক সামগ্রী খারাপ হয়েছে। ১ হাজার ৮২০ মিটার দীর্ঘ ওই রোপওয়ে তৈরি হয়ে গেলে গুয়াহাটির দুই তীরের মধ্যে যোগাযোগ অনেক দ্রুত হবে। এখন অনেকটা পথ ঘুরে সরাইঘাট সেতু পার করে অথবা নৌকায় ব্রহ্মপুত্র পার করে উত্তর গুয়াহাটি যেতে হয়। রোপওয়ে পর্যটনের সম্ভাবনাও অনেক বাড়াবে। এক বারে রোপওয়ে ক্যাপসুলে পাঁচ জন যাত্রী নেওয়া যাবে। দক্ষিণের স্তম্ভ ১৪ মিটার ও উত্তর স্তম্ভ প্রায় ২৭ মিটার জলের গভীর পর্যন্ত বসানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy