অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সঙ্ঘ-প্রধান ছিলেন কে এস সুর্দশন। তখন মাঝেমাঝেই আরএসএসের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠক করতেন সুদর্শন। সেই সব বৈঠকে সঙ্ঘ পরিবার তাদের ক্ষোভের কথা জানাত এবং তার ভিত্তিতে সরকার পরিচালনার পথ ঠিক করতেন বাজপেয়ী। দুই শিবিরের সেতুর কাজ করতেন তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে নিজের বাসভবনে এখনও কোনও বৈঠক করেননি নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি নেতাদের দাবি, মোদী ও অমিত শাহ দু’জনেই সক্রিয় হিন্দুত্ববাদী এবং শক্তিশালী হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছেন। সঙ্ঘ নেতাদের অভিযোগ, তাঁদের কোনও পরামর্শই মানছেন না মোদী। সব সিদ্ধান্তই নিচ্ছেন মোদী-শাহ জুটি।
গুজরাত নির্বাচনে বিজেপি ধাক্কা খেতেই ফোঁস করে উঠেছে সঙ্ঘ পরিবার। গত দু’দিন ধরে দিল্লিতে চলা বিজেপি-সঙ্ঘ পরিবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সঙ্ঘ নেতা কৃষ্ণগোপাল। বিজেপির তরফে অমিত শাহ-অরুণ জেটলিরা। বৈঠকে সঙ্ঘ বুঝিয়ে দিয়েছে, অনেক হয়েছে। এ বার থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের পরামর্শ নিতে হবে। সঙ্ঘ জানায়, কৃষক ও তরুণদের মধ্যে যে অসন্তোষ বাড়ছে, তা নিয়ে গুজরাত ভোটের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। বিশেষ করে নোট বাতিল ও জিএসটির পরে গ্রামীণ এলাকায় বিক্ষোভ যে বাড়ছে, তা গুজরাতের ফলেই স্পষ্ট। সামনে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান, কর্নাটকের মতো রাজ্যে ভোট। সঙ্ঘের হুঁশিয়ারি, কৃষক অসন্তোষ দূর করতে সরকার অবিলম্বে পদক্ষেপ না করলে বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটে ফল ভুগতে হবে।
সম্প্রতি বৃন্দাবনে বিজেপির সঙ্গে বৈঠকেও সরকারের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলেছিল সঙ্ঘ। তখনই সঙ্ঘ-নেতৃত্ব বলেছিলেন, কৃষি ক্ষেত্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পে জোর এবং সর্বোপরি রোজগারের ব্যবস্থা করার প্রশ্নে কার্যত ব্যর্থ মোদী সরকার। সঙ্ঘ সমর্থিত স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ, লঘু উদ্যোগ ভারতী, ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ নভেম্বরে দিল্লিতে আন্দোলন করে সরকারকে সতর্কও করেছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। সামনেই বাজেট। সেখানে সমস্যাগুলি দূর করতে কী করা যায়, তা জেটলিকে দেখতে বলেন কৃষ্ণগোপালরা।
বৈঠকে জেটলি প্রকারান্তরে মেনে নেন, সার্বিক ভাবে অর্থনীতি বিশেষ ভাল অবস্থায় নেই। তবে সরকার একাধিক পদক্ষেপ করেছে। বাজেটে সঙ্ঘের দুশ্চিন্তার দিকগুলি কী ভাবে দূর করা যায়, তা দেখার আশ্বাস দিয়েছেন জেটলি। অমিত শাহ জানিয়েছেন, তিনি নিয়মিত নাগপুরে গিয়ে সঙ্ঘ-প্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে কথা বলে সমন্বয় করবেন।