শিক্ষায় সঙ্ঘের আরও ছাপ ফেলতে নরেন্দ্র মোদী সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির সঙ্গে প্রায় সাত ঘণ্টা বৈঠক করলেন আরএসএস নেতারা।
আজ দিল্লিতে মধ্যপ্রদেশ ভবনে সঙ্ঘের নেতারা তাঁদের দাবি নিয়ে বৈঠকে বসেন স্মৃতির সঙ্গে। আরএসএস নেতা সুরেশ সোনি, দত্তাত্রেয় হোসাবোলে ছাড়াও সেখানে শিক্ষাক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত সঙ্ঘের বিভিন্ন শাখার নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সঙ্ঘের এক সূত্রের মতে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে অনেকগুলি বিষয় জানানো হয়েছে। সঙ্ঘ নেতাদের মতে, শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল সংস্কার প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় বোর্ডগুলির পাঠ্যসূচি আন্তর্জাতিক মানের হলেও পড়ুয়াদের ভারতীয় মূল্যবোধের বিষয়েও ওয়াকিবহাল হওয়া উচিত। সেই অনুযায়ী পাঠ্যক্রমও তৈরি হওয়া দরকার। তাছাড়া সরকারের উচিত, শিক্ষার মান উন্নত করা ও সেটি সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তাঁর মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মুরলীমনোহর জোশী যে ভাবে শিক্ষায় গৈরিকীকরণ করতে চেয়েছিলেন, মোদী সরকারও সে পথেই হাঁটবে কি না?
এই বিষয়ে স্মৃতি ইরানির কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রী নিজেও সঙ্ঘের প্রশিক্ষণ পেয়ে এসেছেন। কিন্তু আধুনিক চিন্তাভাবনাও রয়েছে তাঁর মনে। সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপে যার প্রতিফলন পাওয়া যায়। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির মধ্যেও আধুনিক ভাবনাচিন্তা রয়েছে। তাই তাঁকে এই মন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই অবস্থায় মুরলীমনোহর জোশীর মতো গৈরিকীকরণের পথে হয়তো হাঁটবেন না মোদী। কিন্তু অবশ্যই ভারসাম্য বজায় রেখে চলবেন।
গুজরাতে মোদীর উত্তরসূরি আনন্দীবেন পটেল মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে সঙ্ঘের সহযোগী সংস্থা বিদ্যা ভারতীর নেতা দীননাথ বাটরার লেখা বই পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাজ্যের প্রায় ৩৫ হাজার স্কুলে তা পড়ানো হবে। এই দীননাথ বাটরার করা মামলাতেই ঐতিহাসিক ওয়েন্ডি ডনিগারের হিন্দুত্ব নিয়ে বই ভারতের বাজার থেকে তুলে নিতে হয়েছিল। স্মৃতি মন্ত্রী হওয়ার পরেই দীননাথ তাঁর সঙ্গে দেখা করে এনসিইআরটি-র পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানান। সিবিএসই-র পাঠ্যসূচি বদলেরও দাবি তোলেন তিনি। মোদী সরকারের গত চার মাসে সঙ্ঘের মন রাখতে স্মৃতিও বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছেন। উপনিষদ, বেদ পড়ানোর জন্য একটি কমিটি গঠন করেছেন। বিজ্ঞান, গণিত, দর্শনে হিন্দু প্রভাবকেও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, সংস্কৃত সপ্তাহকে ধুমধাম করে পালন করা, সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠনের চাপে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরের কোর্স কমিয়ে তিন বছর করা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বসানোর মতো সিদ্ধান্তও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে নিয়েছে তাঁর মন্ত্রক। সম্প্রতি সঙ্ঘের এক সদস্যের চাপে আইআইটি-র মতো প্রতিষ্ঠানে আমিষ ও নিরামিষ খাবারও আলাদা করার ব্যাপারে মত চেয়েছেন স্মৃতি।
বিজেপি সূত্রের মতে, শিক্ষায় গৈরিকীকরণ আনা বরাবরই সঙ্ঘের পছন্দের প্রকল্প। বিদেশি প্রভাবমুক্ত করে শিক্ষায় দেশাত্মবোধ তুলে ধরা লক্ষ্য তাদের। বাজপেয়ী জমানায় মুরলীমনোহর জোশী ঠিক এই কাজটিই নিষ্ঠা সহকারে করেছিলেন। এনসিইআরটি-র বইয়ের পর্যালোচনা করা হয়েছিল, আরএসএস-পন্থী ইতিহাসবিদদের দিয়ে সূচি প্রস্তুত করা হয়েছিল। মোদী জমানায় এখনও পর্যন্ত তা এতটা খোলাখুলি দেখা যায়নি। কিন্তু ভবিষ্যতে সঙ্ঘের কথা মেনে মোদী কতটা গৈরিকীকরণের পথে হাঁটেন, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy