Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নমো-র সৌজন্য সনিয়া ফেরালেন শীতল নমস্কারে

ঘড়ির কাঁটা বেলা এগারোটা ছুঁইছুঁই। লোকসভার অধিবেশন শুরু হবে। সনিয়া গাঁধী তাঁর আসনে এসে বসেছেন। এ সময় লোকসভায় ঢুকলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রথমেই এগিয়ে গেলেন উল্টো দিকে বিরোধী আসনে বসে থাকা কংগ্রেস সভানেত্রীর দিকে।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৫ ০৩:১২
Share: Save:

ঘড়ির কাঁটা বেলা এগারোটা ছুঁইছুঁই। লোকসভার অধিবেশন শুরু হবে। সনিয়া গাঁধী তাঁর আসনে এসে বসেছেন। এ সময় লোকসভায় ঢুকলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রথমেই এগিয়ে গেলেন উল্টো দিকে বিরোধী আসনে বসে থাকা কংগ্রেস সভানেত্রীর দিকে। হাতজোড় করে নমস্কার করলেন। জানতে চাইলেন, ‘‘কেমন আছেন?’’

একটু অস্বস্তিতে পড়লেন কি সনিয়া গাঁধী? সৌজন্যের সম্ভাষণ। কিন্তু প্রকাশ্যে। প্রেস গ্যালারি থেকে সব সাংবাদিকই তাকিয়ে। দেখতে চান, সনিয়া কী করেন! কেউ যদি সৌজন্য দেখাতে চান, তা তিনি যত বড়ই রাজনৈতিক শত্রু হোন না কেন— রূঢ় ভাবে বলে দেওয়া যায় না, সৌজন্য দেখাচ্ছেন কেন! আবার রাজনীতি ভুলে সনিয়া যদি পাল্টা সৌজন্য দেখান, তা হলেও বিপদ। এই মুহূর্তে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেস আক্রমণাত্মক। লড়াই তুঙ্গে। এ সময় সৌজন্যের শরীরী ভাষা দেখে কংগ্রেসের সাংসদরা, এমনকী বিরোধী শিবিরের অন্য নেতারাও সংশয়ের শিকার হতে পারেন। তাঁদের সেটা নাপসন্দ হতে পারে।

তাৎক্ষণিক ভাবেই মুহূর্তটির বিশ্লেষণ সেরে ফেলেন সনিয়া। কোনও ভাবে শীতল প্রতিনমস্কার জানিয়েই দায় সারেন তিনি। এক বার উঠে দাঁড়িয়েই ফের বসে পড়েন। তাঁর শরীরের ভাষায় অনমনীয়তা ছিল বেশ স্পষ্ট।

ভারতের রাজনীতিতে সৌজন্য যতটা, তার চেয়ে বেশি বোধ হয় নিখাদ রাজনীতিই। ঝড় ওঠার আগে ‘নমো’-র নমস্কারে তাই খুব বেশি উৎসাহিত হওয়ার সুযোগ ছিল না সনিয়ার। কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল বলেন, ‘‘সনিয়া গাঁধী তাঁর বাহ্যিক আচরণ নিয়ে খুব সচেতন। যার অনেকটাই তিনি ইন্দিরা গাঁধীকে দেখে শিখেছেন। এ সবের পিছনে রাজনৈতিক অঙ্ক থেকেই যায়।’’

এর আগে বাজেট অধিবেশন শুরুর আগেও বিরোধী দলগুলির নেতাদের টেবিলে টেবিলে গিয়ে নমস্কার জানিয়েছিলেন মোদী। বিরোধী দলগুলির নেতাদের অনেকেরই অভিযোগ ছিল, প্রধানমন্ত্রী অহঙ্কারী। তিনি অন্য দলের নেতাদের বিশেষ পাত্তা দেন না। এই ধারণা ভাঙতে সেটা ছিল মোদীর এক সচেতন প্রয়াস। আর এ বার তো পরিস্থিতি আরও আলাদা। সুষমা স্বরাজ, বসুন্ধরা রাজেকে নিয়ে বেজায় অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব। ইস্তফার দাবি উড়িয়ে আপাত দৃঢ়তা দেখালেও সরকার অনেকটাই রক্ষণাত্মক। অধিবেশন শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী ফোন করেছিলেন সনিয়াকে। শুধু তাই নয়, সনিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতেও পাঠানো হয় সুষমা স্বরাজ ও বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে। সেগুলি প্রকাশ্যে হয়নি। কিন্তু সনিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে মোদী এই নমস্কারটা করলেন প্রকাশ্যে।

প্রকাশ্যে প্রণাম বা নমস্কার মোদী আগেও করেছেন। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘আসলে সৌজন্য নামক বিষয়টির সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্ততা প্রয়োজন। এটা কৃত্রিম হলে ধরা পড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী সংসদে এসে হাঁটু গেড়ে প্রণাম করেছিলেন গণতন্ত্রের মন্দির বলে। সে তো তিনি কেশুভাই পটেলকেও পায়ে হাত দিয়ে এক সময়ে প্রণাম করেছিলেন। তার পরে কী ভাবে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন, তা সকলেই জানে।’’

বিভিন্ন দলের নেতাদের ঘরোয়া আলোচনায় উঠে এল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গও। সৌজন্যের রাজনীতির একাধিক নজির রেখেছেন তিনিও। অসুস্থ জ্যোতি বসুকে দেখতে যাওয়া, তাঁকে শাল উপহার দেওয়া থেকে সাম্প্রতিক কালে অশোক ঘোষের সঙ্গে সাক্ষাৎ। বিমান বসুকে ফিস ফ্রাই খাওয়ানো থেকে বাবুল সুপ্রিয়ের সঙ্গে ঝালমুড়িও রয়েছে মমতার সৌজন্যের ঝুলিতে। যা নিয়ে পরে বাবুলকে প্রশ্নের মুখেও ফেলেন দলের কিছু নেতা।

সনিয়া কিন্তু আজ দলে এমন কোনও বিভ্রান্তি তৈরির ঝুঁকি নেননি। পাল্টা সৌজন্যে উষ্ণতার আঁচ রাখেননি এতটুকু। আর তাতেই কংগ্রেস সাংসদরা বেজায় খুশি। জয়রামের মতো নেতাদের বক্তব্য, নেত্রী আসলে দুর্নীতি নিয়ে মৌনী প্রধানমন্ত্রীকে পাত্তাই দেননি। সৌজন্য বা শিষ্টাচারেরও একটা স্থান-কাল-পাত্র থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE