ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সনিয়া ও রাহুল গাঁধী কাল আদালতে হাজিরা দেবেন ঠিকই, কিন্তু সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উচ্চগ্রামে রাজনৈতিক বিক্ষোভ বা নাটুকে আয়োজন থেকে শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ানোরই সিদ্ধান্ত নিলেন মা-ছেলে!
কেন? কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রের তরফে বলা হচ্ছে, আদালত চত্বরে বা তার বাইরে পথেঘাটে বিক্ষোভ দেখালে এই বার্তা যেতে পারে যে, বিচার ব্যবস্থাকে হুমকি দিচ্ছে কংগ্রেস। এটা দলের উদ্দেশ্য নয়। সমনকে মর্যাদা দিয়ে দলের সভানেত্রী ও সহসভাপতি-সহ কংগ্রেসের ৬ জন নেতা এজলাসে গিয়ে পৌঁছবেন। তবে দলের সদর দফতর হয়ে নয়, সনিয়া–রাহুল যাবেন তাঁদের বাসভবন থেকে। সেখানে প্রয়োজন মতো আইনি সওয়াল করবেন দলের আইনজীবীরা। জামিন মিললে তাতেও রাজি হবেন সনিয়া-রাহুল। শুনানি হতে পারে বেলায় তিনটেয়। দলীয় সূত্রের খবর, আদালত চত্বরেই কপিল সিব্বল বা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি শুনানির প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের জানাবেন। পরে দলের সদর দফতরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন সনিয়া-রাহুল। অর্থাৎ কাল শুনানির আগে কোনও বিক্ষোভ বা হট্টগোলের পথে যাবে না কংগ্রেস।
অথচ কাল বিকেলেও হাওয়া ছিল উল্টো। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারাই জানাচ্ছিলেন, সনিয়া-রাহুলের কোর্টে আদালতে হাজির হওয়াকে জবরদস্ত রাজনৈতিক আন্দোলনের চেহারা নেবে। দলের সব সাংসদ ও নেতা কংগ্রেস সদর দফতর থেকে পাটিয়ালা হাউস কোর্ট পর্যন্ত পদযাত্রা করবেন কংগ্রেস সভানেত্রী। বিপুল সংখ্যায় দলের নেতা-কর্মীরা আসবেন লাগোয়া রাজ্যগুলি থেকেও। কোর্ট থেকে ইন্ডিয়া গেট— থইথই করবে কংগ্রেসের সমর্থকে। স্লোগান উঠবে বিজেপি তথা মোদী সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে। এই আয়োজনের যুক্তি হিসেবে ইন্দিরা গাঁধীর দৃষ্টান্তও তুলে ধরা হচ্ছিল। ১৯৭৭-এ সমন পেয়ে এ ভাবেই হেঁটে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আদালতে পৌঁছেছিলেন ইন্দিরা। তা ছাড়া, ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় আদালতে হাজিরার দিন ধার্য হওয়ার পর সনিয়াও বলেছিলেন, ‘‘আমি ইন্দিরা গাঁধীর পুত্রবধূ। কাউকে ডরাই না!’’
কিন্তু কাল রাতে দশ নম্বর জনপথে
এক বৈঠকে বদলে ফেলা হয় চিত্রনাট্য। কারণ, সনিয়াকে দেওয়া একটি রিপোর্টে সিব্বল, সিঙ্ঘভি, কে টি এস তুলসীর মতো আইনজীবীরা জানিয়ে দেন, কংগ্রেসের এই প্রস্তুতি নিয়ে বিচার ব্যবস্থার অলিন্দে সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, কংগ্রেস শক্তি প্রদর্শন করে বিচারকের ওপর চাপ তৈরি করতে চাইছে। সনিয়া-রাহুল জামিন নেবেন না— এমনটা চাউর করে ভয় দেখানোরও চেষ্টা হচ্ছে। তাই বড় কোনও বিক্ষোভ-আন্দোলনে যাওয়াটা ঠিক হবে না। আইনজীবীদের ওই পরামর্শেই বদলে ফেলা হয় কৌশল। দলের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা পরে জানান, কাল দুপুরে কংগ্রেস সদর দফতরে দলের নেতা-সাংসদরা উপস্থিত হবেন ঠিকই, কিন্তু আদালত পর্যন্ত কোনও অভিযান হবে না। বিচার ব্যবস্থাকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে আইনি লড়াই চালাবে কংগ্রেস। পাশাপাশি বিজেপি ও সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির প্রশ্নে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।
সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, পাটিয়ালা হাউস কোর্টের বদলে কাল শুনানি হতে পারে বিজ্ঞান ভবনে। যা সনিয়ার বাসভবনের ঠিক পিছনের রাস্তাতেই। কয়েক মিনিটের রাস্তা। সে রকম হলে অবশ্য অভিযানের সম্ভাবনা এখনও থাকছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরের অনেকে আবার মনে করছেন, এ-ও হতে পারে যে, সরকারের সঙ্গে তলে তলে হয়তো সমঝোতা হচ্ছে কংগ্রেসের। কারণ, সনিয়া-রাহুল অভিযান করে আদালতে গেলে গোটা দেশে তার প্রভাব পড়বে। আইনশৃঙ্খলার দিক থেকে তা সমস্যা তৈরি করতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy