Advertisement
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Cheetah

‘এমনটাই তো হওয়ার ছিল’! মোদীর আনা জোড়া চিতার মৃত্যু প্রসঙ্গে বলল দক্ষিণ আফ্রিকা

প্রত্যাশিত। গত ২৭ মার্চ মধ্যপ্রদেশের কুনোর জঙ্গলে মৃত্যু হয়েছিল নামিবিয়া থেকে আনা ৫ বছরের স্ত্রী চিতা শাসার। ২৪ এপ্রিল মারা যায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা পুরুষ চিতা উদয়।

South Africa says, deaths of Cheetah expected in India

মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলে মোদীর আনা দু’টি চিতার মৃত্য়ুতে অস্বাভাবিকতা দেখছে না দক্ষিণ আফ্রিকা। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩ ০১:৫৩
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের ‘চিতা পুনর্বাসন প্রকল্প’ নিয়ে সতর্কবার্তা দিল দক্ষিণ আফ্রিকা। মধ্যপ্রদেশের কুনো পালপুর অরণ্যে আফ্রিকা থেকে আনা ২০টি চিতার মধ্যে ২টির মৃত্যুকে ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে সে দেশের ‘বন, মৎস্য ও পরিবেশ দফতরের’ রিপোর্টে।

সদ্য প্রকাশিত ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, উন্মুক্ত প্রকৃতিতে মাংসাশী প্রাণীদের পুনর্স্থাপনের ক্ষেত্রে এই মৃত্যুর হার প্রত্যাশিত। গত ২৭ মার্চ কুনোয় মৃত্যু হয়েছিল নামিবিয়া থেকে আনা ৫ বছরের স্ত্রী চিতা শাসার। ২৪ এপ্রিল মারা যায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা পুরুষ চিতা উদয়। মধ্যপ্রদেশ বনবিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, কিডনিতে সংক্রমণের কারণে শাসার মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে উদয়ের মৃত্যুর কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, ‘কার্ডিয়ো পালমোনারি ফেলিওর’-কে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ‘বন, মৎস্য ও পরিবেশ দফতরের’ ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘বড় মাংসাশী প্রাণীদের প্রকৃতিতে পুনর্স্থাপন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। এটি প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। যেখানে চিতাগুলিকে উন্মুক্ত নতুন পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, এবং যেখানে তাদের দৈনিক শারীরিক সুস্থতার উপর নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কম।’’

প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত আফ্রিকা থেকে দু’দফায় চিতা আনা হয়েছে ভারতে। প্রথমে আসে নামিবিয়া থেকে ৮টি চিতা। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনে সেই চিতাগুলিকে কুনো পালপুরের জঙ্গলে ছাড়া হয়। খাঁচা উন্মুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। এর পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আরও ১২টি চিতা কুনোয় নিয়ে আসা হয় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে।

কিছু দিন আগেই আফ্রিকা থেকে কুনোয় চিতা আমদানির কর্মসূচি নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন বন্যপ্রাণ বিজ্ঞানী যাদবেন্দ্রনাথ ঝালা। মোদী সরকারের ‘ন্যাশনাল চিতা অ্যাকশন প্ল্যান’ (জাতীয় চিতা পুনর্স্থাপন কর্মসূচি)-এর সদ্য অপসারিত প্রধান স্পষ্ট ভাষায় তাঁর রিপোর্টে জানিয়েছিলেন, আফ্রিকা থেকে আনা ৫০টি চিতা দূর অস্ত, মধ্যপ্রদেশের কুনো-পালপুর জাতীয় উদ্যানে ২০টির ঠাঁই হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সম্প্রতি ওবান নামে নামিবিয়া থেকে আনা একটি পুরুষ চিতা দু’বার কুনোর পরিসর ছেড়ে বাইরে চলে যায়। ঘুমপাড়ানি গুলি করে তাকে ফিরিয়ে আনা হলেও কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের নির্বাচিত মধ্যপ্রদেশের ওই অরণ্য আফ্রিকার চিতাদের পুনর্বাসনের কতটা উপযোগী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আফ্রিকার চিতাদের খাদ্য হিসাবে কুনোয় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩৮টি চিতল হরিণ রয়েছে। বিজ্ঞানী ঝালার মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কুনোয় ১৫টির বেশি চিতা রাখা সম্ভব নয়। মধ্যপ্রদেশের অন্য দুই অভয়ারণ্য গান্ধীসাগর এবং নওরাদেহিতে চিতাদের বিকল্প বাসস্থান গড়ে তোলার প্রস্তাব থাকলেও তা সময় এবং ব্যয়সাপেক্ষ। খরচের বহর বাড়বে আরও অন্তত ৭৫০ কোটি টাকা।

এই পরিস্থিতিতে কুনো জাতীয় উদ্যানের লাগোয়া রাজস্থানের মুকুন্দারা অভয়ারণ্যের কিছুটা অংশও চিতা পুনর্স্থাপনের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছিলেন ঝালা। তাঁর কথায়, ‘‘মুকুন্দরার জঙ্গলে খাবারের কোনও অভাব হবে না চিতাদের। তবে চিতার আবাসস্থলের ঠিকানা হিসেবে মুকুন্দরার জঙ্গল অধিগ্রহণে কেন্দ্র খুব একটা উৎসাহী নয়। আমার মনে হয়, এই অনীহা একেবারেই রাজনৈতিক কারণে।’’ কারণ, সে ক্ষেত্রে কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান পেয়ে যাবে মোদীর ‘চিতার ভাগ’?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE