ফাইল চিত্র।
আগামী বছর, অর্থাৎ, ২০২৩ সালে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে বাজেট পেশ করতে হবে পুরোপুরি ২০২৪-এর লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে। রাজনৈতিক চমক তাই আগামী বছরের জন্য তোলা থাকছেই। এ বছর বরং একেবারেই অর্থনীতি ও রাজকোষের হাল ফেরানোর দিকে লক্ষ্য রেখে ২০২২-এর বাজেট তৈরি করতে চাইছে মোদী সরকার। উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের আগে বাজেট পেশ হলেও, তাতে নাটকীয় ঘোষণার সম্ভাবনা কম।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে বাজেট পেশ করবেন। অর্থ মন্ত্রক সূত্র বলছে, এ বছর বাজেটে নাটকীয় কোনও ঘোষণার আশা কম। তার বদলে লক্ষ্য থাকছে মূলত পাঁচটি দিকে। এক, পরিকাঠামোয় আরও খরচ বাড়িয়ে অর্থনীতির ইঞ্জিনে গতি ফেরানো। দুই, নতুন করে কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গরিব মানুষকে কিছুটা সুরাহা দেওয়া। তিন, বাজারে কেনাকাটা বাড়ানোর চেষ্টা। চার, ছোট-মাঝারি শিল্প, অসংগঠিত ক্ষেত্রকে সাহায্যের কথা মাথায় রেখে সহজে ঋণের জোগানের প্রকল্প চালিয়ে যাওয়া। পাঁচ, বিদেশি লগ্নির পথ মসৃণ করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা।
কোভিডের ধাক্কায় গত বছর অর্থনীতির সঙ্কোচনের পরে চলতি অর্থবর্ষে ৯.২ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধির দেখা মিলবে বলে সরকারি পূর্বাভাস। কিন্তু কাগজে-কলমে ১০ শতাংশের কাছাকাছি বৃদ্ধি হলেও, বাস্তবে দেশের অর্থনীতি স্রেফ কোভিডের আগের অবস্থায় পৌঁছচ্ছে। যখন এমনিতেই অর্থনীতির শ্লথ গতি চলছিল। বিভিন্ন মাপকাঠিতে অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত মিললেও, জিডিপির ত্রিভুজের তিনটি বাহু এখনও দুর্বল। গৃহস্থদের ও বেসরকারি ক্ষেত্রের কেনাকাটায় এখনও ভাটার টান। নতুন বেসরকারি লগ্নির দেখা এখনও সে ভাবে নেই। বাকি থাকে সরকারি খরচ। সেখানে ছবিটি ঠিক কী?
গত বাজেটে অর্থমন্ত্রী পরিকাঠামোয় বিপুল সরকারি খরচের কথা ঘোষণা করেছিলেন। যার পরিমাণ ছিল ৫.৫৪ লক্ষ কোটি টাকা। আগের আর্থিক বছরের খরচের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি। কিন্তু বাস্তবে কেন্দ্রীয় সরকার পরিকাঠামোয় খরচ বিশেষ বাড়াতে পারেনি। রাজ্য স্তরে পরিকাঠামো খাতে খরচেও একই দশা। অর্থমন্ত্রী বারবার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলির সঙ্গে বৈঠক করলেও হাল ফেরেনি। বাজেটে তাই ফের পরিকাঠামোয় খরচে জোর দিতে হবে। সেই সঙ্গে বিদেশি লগ্নি টানা ও ধরে রাখার চেষ্টাও করতে হবে।
অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “দুটি চিন্তার কারণ থাকছে। এক, মূল্যবৃদ্ধি। খুচরো মূল্যবৃদ্ধি এখনও ২ থেকে ৬ শতাংশের সহনসীমার মধ্যে থাকলেও, তা ঊর্ধ্বসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ১৩ শতাংশের উপরে, যা যথেষ্ট চিন্তার কারণ। দুই, কোভিড ভাইরাসের নতুন-নতুন রূপ। তার ফলে বারবারই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা হলেও বাধা পড়ছে।” বিশেষ করে, বাণিজ্য, হোটেল, পরিবহণের মতো ক্ষেত্রের দীর্ঘদিন ধরে সঙ্কোচন চিন্তায় রাখছে অর্থ মন্ত্রককে। এই পরিস্থিতিতে পরিকাঠামোয় খরচের গতি বাড়ালেও, অর্থমন্ত্রী রাজকোষ ঘাটতি বিশেষ বাড়াতে রাজি নন। বরং জিএসটি-সহ কর বাবদ আয়ের সুবিধা নিয়ে, ভর্তুকি আরও ছাঁটাই করে ঘাটতিতে রাশ টানতেই তিনি আগ্রহী। কোভিডের প্রথম ধাক্কায় ঘাটতি ৯.৫%-এ পৌঁছে যায়। চলতি বছরে তা ৬.৮%-এ কমিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছেন নির্মলা। আগামী আর্থিক বছরে তা ৬.৩ থেকে ৬.৫ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার লক্ষ্য নেওয়া হতে পারে। আজই অর্থ মন্ত্রক কেন্দ্রের সমস্ত মন্ত্রক ও দফতরগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে, ব্যয় বরাদ্দের সংশোধিত হিসেবের মধ্যেই খরচ বাঁধতে হবে। যাতে রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy