Advertisement
E-Paper

মাওবাদী নেতাকে ধরতে ঝাড়খণ্ডের দ্বারস্থ রাজ্য

মাওবাদী নেত্রী কবিতা ঘোড়ইয়ের পরে এ বার তার স্বামী সমীর সরেনকে ধরতে মরিয়া রাজ্য পুলিশ ও গোয়েন্দারা। এ ব্যাপারে ঝাড়খণ্ডের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে তারা। পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা সমীর ঝাড়খণ্ডে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। গত শুক্রবার পুরুলিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে কবিতাকে।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৩

মাওবাদী নেত্রী কবিতা ঘোড়ইয়ের পরে এ বার তার স্বামী সমীর সরেনকে ধরতে মরিয়া রাজ্য পুলিশ ও গোয়েন্দারা। এ ব্যাপারে ঝাড়খণ্ডের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে তারা। পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা সমীর ঝাড়খণ্ডে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। গত শুক্রবার পুরুলিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে কবিতাকে।

সমীর সম্পর্কে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড পুলিশের দাবি-পাল্টা দাবি রয়েছে। এ রাজ্যের পুলিশের খবর, জখম হয়ে সমীর চলাফেরার শক্তি হারিয়েছে। ঝাড়খণ্ডের দাবি, আঘাত সারিয়ে উঠে সে দিব্যি চলাফেরা করছে। গত বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর মাওবাদী সমস্যা নিয়ে দুই রাজ্যের পুলিশ, গোয়েন্দা ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সমন্বয় বৈঠকে ঝাড়খণ্ডের কাছে ওই মাওবাদীকে ধরে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বাঁকুড়ার বারিকুল এলাকার ডাঙরদা গ্রামের বছর তিরিশের ওই যুবক ছ’সাত বছর ধরে ঘরছাড়া। লালগড়কে কেন্দ্র করে জঙ্গলমহলে আন্দোলনের উত্তপ্ত পর্বে বারিকুলের গ্রামকে গ্রাম যখন মাওবাদী প্রভাবিত, সেই সময়ে হতদরিদ্র, আদিবাসী পরিবারের ছেলে সমীর স্কোয়াডে যোগ দেয়।

গত শুক্রবার পুরুলিয়ায় গ্রেফতার হওয়া কবিতা একদা ওড়িশায় মাওবাদীদের দলমা স্কোয়াডে ছিল। আর সমীর ঝাড়খণ্ডে পটমদা-দলমা স্কোয়াডের সদস্য। যে স্কোয়াডের কমান্ডার, বারিকুলেরই খেজুরখেন্না গ্রামের রঞ্জিত পাল। রঞ্জিত ওরফে রাহুলের বিশ্বস্ত সঙ্গী এই সমীর। এ বছর ১৭ এপ্রিল ভোরে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের সীমানা ঘেঁষা ঝাড়খণ্ডের আমদাপাহাড়ির জঙ্গলে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে রঞ্জিত ও সমীর দু’জনেই জখম হয়। পরে জানা যায়, গুলি রঞ্জিতের উরু ছুঁয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। তবে সমীরের শিরদাঁড়ায় গুলি লেগেছে।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘রঞ্জিত আগেই সুস্থ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সমীর শয্যাশায়ী। তাই রঞ্জিত তাকে আর স্কোয়াডে নিয়ে ঘুরতে পারছে না। পটমদার কয়েকটি গ্রামের মাওবাদী সমর্থকেরা তাকে স্ট্রেচারে করে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সমীরকে ধরা কঠিন নয়।’’ ওই অফিসারের কথায়, ‘‘সমীরের স্ত্রী এখন আমাদের হেফাজতে। ফলে, সে এখন মানসিক ভাবেও দুর্বল।’’

কিন্তু ওই মাওবাদী পশ্চিমবঙ্গের কাছে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? ওই পুলিশকর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘হিংসায় জড়িত অথচ ফেরার, এমন সব মাওবাদীই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সমীরকে ধরতে পারলে রঞ্জিত পাল সম্পর্কে বহু তথ্য মিলবে। রঞ্জিত দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই ঝাড়়খণ্ড পুলিশ এবং সিআরপি-কে সমীরের কথা বলা হয়েছে।’’

তবে ঝাড়খণ্ডে মাওবাদী দমন অভিযানে সামিল সিআরপি-র এক কর্তার দাবি, ‘‘সমীর সরেন চলাফেরা করতে পারছে না, এমন খবর কিন্তু আমাদের কাছে নেই। মাওবাদী স্কোয়াডের কেউ শয্যাশায়ী থাকলে যে ধরনের ওষুধপত্র, সরঞ্জাম ওই তল্লাটে যাওয়ার কথা, সে সবও হচ্ছে না বলেই আমরা জেনেছি।’’

দিন দশেক আগে পটমদার কালাঝোড় এলাকার এক তরুণী মাওবাদী স্কোয়াড ছেড়ে গ্রামে ফিরে এসেছেন। ওই তরুণী পটমদা-দলমা স্কোয়াডে মূলত রান্নার কাজ করতেন। তাঁর অভিযোগ, স্কোয়াডে তাঁর উপর নিয়মিত যৌন নিগ্রহ করা হত। ঝাড়খণ্ডের এক গোয়েন্দা অফিসারের দাবি, ‘‘ওই তরুণীর বক্তব্য অনু‌যায়ী, সমীর এখন একে ফর্টি সেভেন রাইফেল পিঠে নিয়ে স্কোয়াডেই ঘুরছে।’’

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘মনে হচ্ছে, সমীর সরেনের শিরদাঁড়ায় নয়, শিরদাঁড়ার পাশে গুলি লেগেছিল। বিশ্রাম ও চিকিৎসায় এখন সে সেরে উঠেছে।’’ গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি, সমীরের স্ত্রী কবিতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে শনিবার সরকারি ভাবে জানানো হলেও আসলে তাকে কব্জা করা হয়েছে অনেক আগেই। সমীরের শয্যাশায়ী হয়ে থাকার কথা তার কাছ থেকে জানা যায়। ‘‘তখন হয়তো সমীর সত্যিই অসুস্থ ছিল,’’ বলছেন ওই গোয়েন্দা অফিসার।

jharkhand maoist
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy