Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জাতীয় ও রাজ্য সড়কে নিষিদ্ধ মদ বিক্রি, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

রাজ্য এবং জাতীয় সড়কের ধারে মদ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। আজ একটি জনস্বার্থ মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে এই কথাই জানিয়েছে প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির একটি বেঞ্চ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৮
Share: Save:

রাজ্য এবং জাতীয় সড়কের ধারে মদ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। আজ একটি জনস্বার্থ মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে এই কথাই জানিয়েছে প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির একটি বেঞ্চ।

গত বুধবারই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, দুর্ঘটনা কমাতে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধ করার আপ্রাণ চেষ্টা করবে তারা। ইঙ্গিত ছিল, রাজ্য ও জাতীয় সড়কের ধারে মদ বিক্রির নিয়ম পরিবর্তন করতে পারে আদালত। এ নিয়ে কিছুটা ছাড় চায় পঞ্জাব সরকার। তা নিয়ে তাদের ভর্ৎসনাও করে শীর্ষ আদালত।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির অভিযোগ, প্রতি বছর গড়ে পথ দুর্ঘটনায় ১ লক্ষ ৪২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। আর এর অধিকাংশই মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য। সংস্থাটির যুক্তি ছিল, রাস্তার ধারে সহজেই মদ পাওয়া যায়। তাই মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর প্রবণতাও বেড়ে গিয়েছে এই দেশে।

শীর্ষ আদালত আজ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্য এবং জাতীয় সড়কের ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনও মদের দোকান থাকবে না। থাকবে না মদের কোনও বিজ্ঞাপন বা মদের দোকানের অবস্থানজ্ঞাপক কোনও বিজ্ঞপ্তিও। এই নির্দেশ যাতে ঠিক ভাবে কার্যকর করা হয় সে দিকে নজর রাখতে প্রত্যেক রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং পুলিশপ্রধানদের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্য ও জাতীয় সড়কের ৫০০ মিটারের মধ্যে থাকা মদের দোকানগুলির লাইসেন্স ২০১৭ সালের ৩১ মার্চের পরে পুনর্নবীকরণ করা হবে না।

কিন্তু রাজ্যের প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্টের নয়া নির্দেশে রাজ্য এবং জাতীয় সড়কগুলির ধারে আইনি মদের দোকান বা পানশালাগুলির ঝাঁপ বন্ধ হতে পারে। কিন্তু সড়কের ধারে রয়েছে অসংখ্য অবৈধ দোকান ও ধাবা। প্রশাসনের কর্তাদের প্রশ্ন, সেগুলিতে মদ বিক্রিতে কী ভাবে লাগাম টানা যাবে? মদের অবৈধ কারবারের রমরমা রয়েছে জাতীয় ও রাজ্য সড়ক লগোয়া আসানসোল শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাতে। সূত্রের খবর, ওই সব এলাকায় মোবাইলে ফোন করলে নাকি মদের ‘ডেলিভারি’ মেলে সহজেই। একই প্রশ্ন তুলেছেন উত্তরবঙ্গের এক পানশালার

মালিকও। তাঁর কথায়, ‘‘জাতীয় সড়কের ধার থেকে শুধু বৈধ পানশালা ও মদের দোকান তুলে দিয়েই দুর্ঘটনা রোখা যাবে না। পুলিশের মদতে জাতীয় সড়কের ধারে যে সমস্ত হোটেল ও ধাবায় বেআইনি ভাবে মদের ব্যবসা হয়, সেই ব্যবসা

কে রুখবে?’’

তবে আইনি মদের দোকানগুলো সরাতেও বেগ পেতে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। উত্তরবঙ্গের পূর্ব-পশ্চিম করিডর ও এশিয়ান হাইওয়েকে ঘিরে অন্তত ৫০টি মদের দোকান এবং পানশালা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেগুলিকে সরাতে গেলে প্রবল বাধা আসবে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। তা ছাড়া ওই দোকানগুলির পুনর্বাসনের জন্য শিলিগুড়ি মহকুমায় এত খাস জমি খুঁজে পাওয়াও মুশকিল।

দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে দু’নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বিধাননগর থেকে মেন গেট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তার দু’ধারে পাঁচশো মিটারের মধ্যে আছে আটটি মদের দোকান। সেগুলির মধ্যে একটির মালিক আনন্দময় ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘বহু বছর ধরে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নিয়ে এবং সরকারকে রাজস্ব দিয়ে ব্যবসা করছি। এই নির্দেশে আমি ও দোকানের কর্মীরা আতান্তরে পড়েছি। সরকারের কাছে উপযুক্ত জায়গায় পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছি।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্ধমানের ভিড়িঙ্গির এক মদ ব্যবসায়ীর আশঙ্কা, ‘‘রাস্তার পাশের ধাবা ও ঝুপড়িগুলিতে মদের অবৈধ কারবার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তেমনটা হলে সরকারের রাজস্বেরও ক্ষতি হবে।’’

বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় এলাকার একটি ধাবার মালিকের বক্তব্য, ‘‘আমাদের বেশির ভাগ ক্রেতাই গাড়ির চালক। তাঁদের অধিকাংশই খাবারের সঙ্গে মদ চান। মদ বিক্রি বন্ধ করে দিলে ধাবা গুটিয়ে দিতে হবে।’’ বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথা শুনেছি। নির্দেশ হাতে এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Alcohol sale banned
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE