অস্বস্তিতে মোদী সরকার। —ফাইল চিত্র।
এক দিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের হুঙ্কার, তো অন্য প্রান্তে শিবসেনা সমর্থকদের জয়ধ্বনি। রামমন্দির নির্মাণের দাবিতে দুই শিবিরের আস্ফালনে উত্তেজনায় ফুটছে গোটা অযোধ্যা। দশ দিন পরেই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২৬ বছর পূর্তি। তার আগে দু’দলের দু’টি জমায়েতকে কেন্দ্র করে দুর্গের চেহারা নিয়েছে অযোধ্যা। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
আগামিকাল ধর্ম সংসদের ডাক দিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সংগঠনের দাবি, মন্দিরের দাবিতে ’৯২ সালের পরে এটিই সবচেয়ে বড় ধর্ম সংসদ। ‘পহলে মন্দির ফির সরকার’, এই দাবিতে ডাকা ধর্ম সংসদ থেকে মন্দির নির্মাণের আহ্বান ফের জানাবে ভিএইচপি। সমর্থকদের নিয়ে আজই অযোধ্যায় পৌঁছেছেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেও। তাঁর মুখেও মন্দির নির্মাণের দাবি। ধর্ম সংসদ শুরুর আগের রাতেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে রামের মূর্তির মডেলে অনুমোদন দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। মূল মূর্তি হবে ১৫০ মিটার। ভিত্তি ও ছাউনি মিলিয়ে দাঁড়াবে ২২১ মিটার, যা ছাপিয়ে যাবে বর্তমানের সর্বোচ্চ পটেল-মূর্তিকেও।
শুরুতে সাধুদের ধর্ম সংসদের পিছনে বিজেপির প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকলেও বিষয়টি ভিএইচপি ‘হাইজ্যাক’ করে নেওয়ায় অস্বস্তিতে মোদী সরকার। দলের একাংশ আশাবাদী যে, এতে গোটা দেশে রাম মন্দিরের হাওয়া উঠবে। হিন্দু ভোটের মেরুকরণ হবে। চলতি ভোটে রামমন্দিরের হাওয়া কতটা কাজ দিল, লোকসভার আগে তার হাতে-গরম পরীক্ষাও হয়ে যাবে। তবে নেতিবাচক দিকটি হল, ভিএইচপি শিবির মন্দির নির্মাণের প্রশ্নে যে ভাবে সরকারের সমালোচনা শুরু করেছে, তাতে মোদী সরকারের ‘ব্যর্থতা’র দিকটিও উঠে আসতে শুরু করেছে।
মন্দির নির্মাণে বিজেপির আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শিবসেনাও। দলের মুখপত্রে বলা হয়েছে, ‘‘ভোট এলেই রামের কথা মনে পড়ে। রামমন্দির নিয়ে রাজনীতি চাই না। মন্দির চাই।’’ দলের মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত সুর চড়িয়ে বলেছেন, ‘‘১৭ মিনিটে বাবরি ভেঙেছিলাম। আইন বানাতে ক’দিন লাগে?’’ তবে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন বলে জানিয়ে মুখে কুলুপ শাসক শিবিরের। বিজেপির একাংশ চাইছে, লোকসভা ভোটের আগে মন্দির নির্মাণে অধ্যাদেশ জারি করুক সরকার। বিজেপির স্বস্তি একটাই— অযোধ্যার অখিল ভারতীয় আখাড়া পরিষদ আজ জানিয়েছে, শিবসেনার অনুষ্ঠানে তারা থাকবে না।
লোকসভার পরেই ভোট আছে মহারাষ্ট্রে। সেখানে হিন্দু ভোট একজোট করতে রামমন্দিরকে পাখির চোখ করতে চায় শিবসেনাও। আজ দুপুরেই উদ্ধব, স্ত্রী রেশমি ও ছেলে আদিত্য অযোধ্যায় পৌঁছে যান। স্থানীয় সাধু-সন্তদের সঙ্গে কথা বলেন। পুণের শিবনেরি দুর্গের মাটি তুলে দেওয়ার কথা রয়েছে রাম জন্মভূমির প্রধান পূজারির হাতে। কাল ধর্ম সংসদেও যাওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। হিন্দু ভোটের মেরুকরণের প্রশ্নে বিজেপিকে জায়গা ছাড়তে যে শিবসেনা রাজি নয়, তা কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছেন উদ্ধব।
আগামিকাল ধর্ম সংসদে অন্তত লক্ষাধিক মানুষের থাকার কথা। ৮২ কোম্পানি পিএসি বাহিনী, ৫ কোম্পানি র্যাফ, ৭০০ কনস্টেবল, ও ১৬০ জন ইনস্পেক্টর মোতায়েন করা হয়েছে। থাকছে ড্রোন ক্যামেরা, প্রস্তুত এটিএস কম্যান্ডোও। গত কাল সেনা নামানোর দাবি তুলেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। যোগীরই মন্ত্রী, এসবিএসপি নেতা ওপি রাজভর সেই দাবিকে সমর্থন করেছেন। অনেকেরই যদিও ধারণা, রাজ্যে বিজেপি সরকার থাকায় বড় মাপের হাঙ্গামা হয়তো ঘটাবে না বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা শিবসেনা। কিন্তু আশঙ্কার চোরা স্রোত আটকানো যাচ্ছে কই! সংখ্যালঘুদের বড় অংশ ইতিমধ্যেই অযোধ্যা ছেড়ে গিয়েছেন বলে খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy