Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

জমি বিল সংশোধন নিয়ে ধীরে চলতে চান মোদী

এটা স্রেফ কথার কথা! নাকি ভাঙবেন তবু মচকাবেন না! কাল থেকে সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হবে। তার আগে সবর্দল বৈঠকে ফের জমি বিল সংশোধনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকে উপস্থিত সমাজবাদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদবের দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, আগে যা হয়েছে, হয়েছে। জমি বিল সংশোধনের জন্য এ বার ইতিবাচক ভাবে আমাদের এগোনো উচিত।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ১৯:০০
Share: Save:

এটা স্রেফ কথার কথা! নাকি ভাঙবেন তবু মচকাবেন না!

কাল থেকে সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হবে। তার আগে সবর্দল বৈঠকে ফের জমি বিল সংশোধনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকে উপস্থিত সমাজবাদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদবের দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, আগে যা হয়েছে, হয়েছে। জমি বিল সংশোধনের জন্য এ বার ইতিবাচক ভাবে আমাদের এগোনো উচিত।’’

কিন্তু তাই কি! বরং সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, এটা ঠিকই, জমি বিল সংশোধনের জন্য মোদী তথা সরকারের উপর শিল্পমহলের চাপ রয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে তাঁর আগ্রহের কথা প্রকাশ্যে কিছুটা জিইয়েই রাখতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে। কিন্তু মুখে এ কথা বললেও আপাতত জমি আইন সংশোধন নিয়ে ধীরে চলো নীতিতেই এগোতে চাইছেন মোদী-জেটলিরা। সংসদের বাদল অধিবেশন কেন, বিহার ভোটের আগে আপাতত এ ব্যাপারে আর নাড়াচাড়া না করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। এমনকী, সরকারের মধ্যে এ-ও ভাবনা রয়েছে, জমি আইনকে রাতারাতি সংস্কারমুখী করতে যে সব সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছিল তা থেকেও ক্রমশ পিছিয়ে আসা। এবং সেই দায়িত্ব কেন্দ্রের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলে রাজ্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া।

গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্র বলছে, এর কারণ বিবিধ। সংশোধন বিলটি খতিয়ে দেখতে যে সংসদীয় যৌথ কমিটি তৈরি হয়েছিল সেখানে ৬৭২টি মতামত জমা পড়েছে। দেখা গিয়েছে, আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবারের অনুগামী কৃষক ও শ্রমিক সংগঠনগুলি থেকে শুরু করে এর মধ্যে ৬৭০টিই কমবেশি সংশোধনের বিপক্ষে। সেই মতামতকে দুরমুশ করে এগোনো রাজনৈতিক ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। তা ছাড়া, জমি আইন সংশোধন বিলটি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে গরিব-বিরোধী তকমা সেঁটে দিতেও তৎপর বিরোধীরা। এমনকী, বিজেপি-র এক শ্রেণির নেতার মতে, তাতে অনেকাংশে সফলও হচ্ছেন কংগ্রেস-বামেরা। দ্বিতীয়ত, সরকার তথা বিজেপি-র কাছে পরিষ্কার যে জমি আইনের তুলনায় পণ্য পরিষেবা কর নিয়ে সংসদে সর্বসম্মতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই সেটি পাশ করানোর জন্য অগ্রাধিকার দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টির মতো বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলিকেও এ ব্যাপারে পাশে পাওয়া যাচ্ছে। তৃতীয়ত, এমনিতেই যৌথ কমিটির রিপোর্ট ৩ অগস্ট সংসদে পেশ হওয়ার কথা। তা ছাড়া, এ যাত্রায় সংসদের অধিবেশন কতটা চলতে পারবে, তা নিয়েই সংশয় রয়েছে। তাই আপাতত জমি আইন সংশোধনের বিষয়টি নিয়ে তাড়াহুড়ো করেও বিশেষ লাভ নেই।

কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেই রাতারাতি জমি আইন সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বর্তমান আইনটি সংশোধন করতে তিন বার অধ্যাদেশও জারি করে সরকার। কিন্তু কোনও বারই তা সংসদে পাশ করানো যায়নি। বাধ্য হয়ে বিলটি যৌথ কমিটির কাছে পাঠায় সরকার। প্রশ্ন হল, সংসদে এ যাত্রাতেও সংশোধন বিলটি পাশ না হলে সরকার কি ফের অধ্যাদেশ জারি করবে? গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্র বলছে, তা ছাড়া উপায়ও নেই কেন্দ্রের সামনে। কারণ, ইউপিএ জমানায় পাশ হওয়া বর্তমান আইনে বলা হয়েছিল, ১ জানুয়ারি ২০১৫ থেকে রেল, জাতীয় সড়ক, পরমাণু প্রকল্প-সহ ১৩টি ক্ষেত্রেও জমি আইনের সমতুল পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেই নীতি কার্যকর করতে হলে ওই ১৩ ক্ষেত্রে বর্তমান নিয়মেরও সংশোধন প্রয়োজন। সেই সংশোধনের আড়ালেই সরকার মূল জমি আইনেও পরিবর্তন করতে চাইছিল। ফলে এখন যদি সরকার মূল জমি আইন সংশোধনের প্রস্তাব থেকে সরেও আসে তা হলেও অধ্যাদেশটি জারি করা জরুরি। নইলে রেল, জাতীয় সড়ক-সহ ১৩টি ক্ষেত্রে নতুন হারে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ ধার্য করা যাবে না।

বস্তুত, জমি বিল নিয়ে নিজ নিজ আপত্তির কথা সর্বদল বৈঠকে আঞ্চলিক দলগুলি জানিয়ে দেয়। এমনকী, পণ্য পরিষেবা কর বিলে সমর্থনের ইঙ্গিত দিলেও সপা নেতা রামগোপাল যাদব বলেন, মূল জমি আইন সংশোধনের প্রস্তাবগুলি থেকে সরকার পিছিয়ে না এলে তা সমর্থন করা সম্ভব নয়। বিজেপি সূত্র বলছে, এ হেন পরিস্থিতিতেই দল ও সঙ্ঘের বড় অংশের নেতা চাইছেন, বিতর্কটি থেকে ক্রমে সরে আসা হোক। জমি রাজ্যের বিষয়। বর্তমান জমি আইনে বিভিন্ন রাজ্য সংশোধন চাইছে বলে যুক্তি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী আইনটি সংস্কারমুখী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের এখন বলা উচিত, জমি অধিগ্রহণ নীতিকে শিল্প ও উন্নয়নের সহায়ক করে তুলতে হলে রাজ্যগুলিই কেন্দ্রের প্রস্তাবিত নীতি মানতে পারে। কেন্দ্র কারও উপর তা জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছে না।

তবে সংশোধন বিলটি আপাতত হিমঘরে তুলে রাখলেও এ বিষয়ে রাহুল গাঁধীর আক্রমণের মোকাবিলা সরকার তথা বিজেপি আগ্রাসী ভাবে করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জমি বিল নিয়ে রাহুলের সমালোচনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিজেপি মুখপাত্র এম জে আকবর আজ বলেন, ‘‘রাহুল যে বলছেন, এক ছটাক জমিও নিতে দেবেন না, তার সঙ্গে জমি আইনের কোনও সম্পর্ক নেই। সেটা উনি ওঁর জামাইবাবুর হরিয়ানার জমি ও বোন প্রিয়ঙ্কার শিমলার জমি সম্পর্কে বলছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE