Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
National

যুদ্ধ কিন্তু সমাধান নয়, বুঝছি তো?

ভারত ও পাকিস্তানের মতো পরমাণু অস্ত্রে রীতিমতো শক্তিশালী দু’টি দেশের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধটা হলে তা এই ভারতীয় উপমহাদেশের পক্ষে অত্য়ন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারতো। প্রতিবেশী দু’টি দেশেরই অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে চৌচির হয়ে যেত। যার ফলে দু’টি দেশই পিছিয়ে যেত অন্তত বেশ কয়েকটি দশক। ফলে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধটা না হয়ে বরং ভালই হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৬:২১
Share: Save:

ভারত ও পাকিস্তানের মতো পরমাণু অস্ত্রে রীতিমতো শক্তিশালী দু’টি দেশের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধটা হলে তা এই ভারতীয় উপমহাদেশের পক্ষে অত্য়ন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারতো। প্রতিবেশী দু’টি দেশেরই অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে চৌচির হয়ে যেত। যার ফলে দু’টি দেশই পিছিয়ে যেত অন্তত বেশ কয়েকটি দশক। ফলে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধটা না হয়ে বরং ভালই হয়েছে। উরি হামলার ঘটনার পর হুমকি, পাল্টা হুমকি, সীমান্তে দফায় দফায় গুলিযুদ্ধ, কূটনৈতিক বাগযুদ্ধ আর বড়জোর সার্জিক্যাল স্ট্রাইকই যথেষ্ট হয়েছে। এর চেয়ে বাড়াবাড়ি হলে, দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ বেধে গেলে তা শুধু এই উপমহাদেশের পক্ষেই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়া বা এশিয়ার পক্ষেই অত্যন্ত ক্ষতিকারক হতো।

তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়- রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়, কলোরাডো-বোল্ডার ও লস এঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত গবেষণা এমনটাই জানাচ্ছে। ওই গবেষণা বলছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ যেখানে থাকেন, সেই ভারতীয় উপমহাদেশের ভবিষ্যতটা একেবারেই অন্ধকার হয়ে যেত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধটা বাধলে। দু’টি প্রতিবেশী দেশ মিলেজুলে যদি কম করেও ১০০টি পরমাণু অস্ত্র ওই যুদ্ধে ব্যবহার করতো (যা দুই দেশের মোট পরমাণু অস্ত্রের অর্ধেক), তা হলে সরাসরি এই উপমহাদেশে দু’কোটি ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারাতেন। গুরুতর জখম বা সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে পারতেন কম করে আরও ৫০ লক্ষ মানুষ।

অনেকেই ভেবেছিলেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর উরি হামলার প্রেক্ষিতে শুধু ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ই নয়, ভারত বেশ বড় রকমের একটা জবাব দেবে। আর তার পরিণতিতে এই উপমহাদেশে ফের শুরু হয়ে যাবে একটি পুরোদস্তুর যুদ্ধ। কিন্তু তেমন কিছু হল না শেষ পর্যন্ত। বরং বুধবার গভীর রাতে ভারতের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র পরপরই দু’টি দেশকে তড়িঘড়ি আলোচনার টেবিলে বসানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। সন্দেহ নেই, এতে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাঁরা আড়ালে এমন প্রশ্নও তুলতে শুরু করেছেন, পুরোদস্তুর যুদ্ধটা কেন হল না ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। যেখানে দু’দেশের মধ্যে একটা মারকাটারি যুদ্ধের আবহ এক রকম তৈরিই ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরোদস্তুর যুদ্ধটা অন্তত এই মূহুর্তে না হওয়ায় দু’টি দেশই খুব বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধটা হলে যে শুধুই প্রচুর রক্তপাত আর প্রাণহানি হত তাই নয়, দু’টি দেশেরই প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি তো হতই, বেশ কয়েকটা দশক পিছিয়ে যেত ভারত ও পাকিস্তান।

তিনটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষণা বলছে, মহাজাগতিক রশ্মি ও অতিবেগুনি রশ্মির মতো অত্যন্ত ক্ষতিকারক রশ্মিগুলির হাত থেকে আমাদের প্রতি মূহুর্তে বাঁচিয়ে রাখে পৃথিবীর ওপর চাদরের মতো বিছিয়ে থাকা যে ওজোন স্তর, তার অর্ধেকটাই ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যেত। ভয়াল ভূকম্প, বন্যা, দাবানল ও অগ্ন্যুৎপাতের মতো সর্বগ্রাসী প্রাকৃতিক মহাদুর্যোগের ঘটনাগুলি তো বেড়ে যেতই, গোটা উপমহাদেশে অচিরেই নেমে আসতো পারমাণবিক শৈত্য। যার ফলে বর্ষার একেবারে দফারফা হয়ে যেত। আর তার জেরে বিশ্বজুড়েই ক্ষতিগ্রস্ত হতো চাষবাস। লক্ষ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যেত। শিশু শরণার্থীদের সংখ্যাটা অন্তত ১০ গুণ বেড়ে যেত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘‘ইরাক, আফগানিস্তান ও সিরিয়া যুদ্ধই প্রমাণ করে দিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধটা অন্তত আপাতত না হয়ে কী ভালই না হয়েছে এই উপমহাদেশের। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হতো শিশু শরণার্থী সমস্যা। ওই তিনটি যুদ্ধ যে পাঁচ কোটি শরণার্থীর জন্ম দিয়েছে, তার ৭৫ শতাংশই শিশু শরণার্থী। ‘ইউনিসেফ’-এর একটি সমীক্ষা রিপোর্ট জানাচ্ছে, গত ১০ বছরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন দেশে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ফলে অন্তত তিন কোটি শিশুকে দেশ ছাড়তে বাধ্য হতে হয়েছে। আর বিশ্বের শিশু শরণার্থীর তিন-চতুর্থাংশই এসেছে মূলত ১০টি দেশ থেকে। সেই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে আফগানিস্তান। আর তার পরের দু’টি স্থান সিরিয়া ও ইরাকের।’’

আরও পড়ুন- সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, মোদী, ওবামা... জল্পনা চলছে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE