Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভারতীয়, কেন আমাকেই প্রমাণ দিতে হবে

এই দেশের এক নেতা তাঁকে ‘বাইরের লোক’ বলায় দুঃখ পেয়েছিলেন কাল। আর আজ সেই কথা একটি টিভি চ্যানেলে বলতে গিয়ে ভেঙে পড়লেন টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। চোখ ভিজে এল। এক জন ভারতীয় হয়েও যে ভাবে বারবার তাঁকে নিজের ভারতীয়ত্ব প্রমাণ করতে হচ্ছে, তাতেই অত্যন্ত ব্যথিত ২৭ বছরের এই খেলোয়াড়।

সংবাদসংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৪ ০২:৫৫
Share: Save:

এই দেশের এক নেতা তাঁকে ‘বাইরের লোক’ বলায় দুঃখ পেয়েছিলেন কাল। আর আজ সেই কথা একটি টিভি চ্যানেলে বলতে গিয়ে ভেঙে পড়লেন টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। চোখ ভিজে এল। এক জন ভারতীয় হয়েও যে ভাবে বারবার তাঁকে নিজের ভারতীয়ত্ব প্রমাণ করতে হচ্ছে, তাতেই অত্যন্ত ব্যথিত ২৭ বছরের এই খেলোয়াড়।

তেলঙ্গানার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে সানিয়া মির্জাকে বেছে নিয়েছিলেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তা নিয়ে গত কাল প্রশ্ন তোলেন তেলঙ্গানার বিজেপি নেতা কে লক্ষ্মণ। তিনি সানিয়াকে ‘বাইরের লোক’ এবং ‘পাকিস্তানের পুত্রবধূ’ বলে আক্রমণ করেন। যার জেরে কাল বিবৃতি দিয়ে ওই নেতার বক্তব্যে আপত্তি জানান সানিয়া নিজেই।

আজ ওই প্রসঙ্গেই টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে সানিয়া বলেন, “যে ভাবে আমাকে বা আমাদের বারবার নিজেদের ভারতীয়ত্ব প্রমাণ করতে হচ্ছে, সেটা একেবারেই ঠিক নয়। এর সঙ্গে আমার লিঙ্গপরিচয়ের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কিনা, জানি না।” সানিয়ার মতে, এই দেশের জন্য অনেক বছর ধরে খেলছেন তিনি। বহু পদক এবং সম্মান পেয়েছেন। তার পরেও তাঁকে বারবার নিজের পাসপোর্ট দেখিয়ে বোঝাতে হয়েছে, তিনি ভারতীয়। “আর বিয়ের পর থেকে কেন জানি না, আমাকে আরও বেশি করে বোঝাতে হচ্ছে যে আমি ভারতীয়,” আক্ষেপ সানিয়ার।

তিনি জানিয়েছেন, এ ভাবে তাঁর শিকড় সম্পর্কে, তাঁর ভারতীয়ত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললে আর সহ্য করবেন না। তাঁর বক্তব্য, “আমার মনের জোর অনেক বেশি। এত সহজে আমি ভেঙে পড়ব না।” কিন্তু এর মধ্যেই আবেগরুদ্ধ হয়ে আসে গলা। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে তিনি তার পর বলেন, “আমাকেই কেন বেছে নেওয়া হয় জানি না। আমাকেই কেন প্রমাণ করতে হবে যে আমি আমার দেশকে ভালবাসি? নিজের হাতের শিরা কেটে কি আমাকে প্রমাণ করতে হবে আমি দেশপ্রেমী?”

এর পরে তিনি জানান, তেলঙ্গানা থেকে আরও বেশি করে যাতে টেনিস খেলোয়াড় উঠে আসে, তার জন্যই তিনি টেনিস অ্যাকাডেমি খুলেছেন। আর তাঁকেই এ সব শুনতে হচ্ছে! তাঁর কথায়, “কাল সত্যিই খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। জানি না অন্য কোনও দেশে কাউকে এ ভাবে প্রমাণ করতে হয় কিনা, যে তিনি ওই দেশের নাগরিক। আমি অন্য দেশের কাউকে বিয়ে করেছি বলে নাকি আমি মেয়ে বলে আমাকে বেছে নেওয়া হয় জানি না।” তাঁর পরিবার কখনও কাউকে ধর্ম, বর্ণ বা কোন দেশের লোক সেই চোখে বিচার করে না। তাই সানিয়ার মন্তব্য, “আমার স্বামীর সঙ্গে যখন প্রথম আমার দেখা হয়েছিল, উনি কোন দেশের লোক এই প্রশ্ন কিন্তু আমার মনে জাগেনি। তাই অন্য কারও মনে এই প্রশ্ন জাগে কী ভাবে, আমি বুঝি না।”

অন্য সমালোচনায় তাঁর মাথাব্যথা নেই। তবে তিনি হায়দরাবাদের, তিনি তেলঙ্গানার বলে সানিয়ার গর্ববোধ হয়। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর বেছে নিয়েছেন বলে তিনি কৃতজ্ঞ এবং গর্বিত। তাই এই পদ ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ভারত এবং তেলঙ্গানাকে খেলার দুনিয়ায় তিনি আরও ছড়িয়ে দিতে চান।

তবে গত কাল গোটা দিনটা পার হয়ে যাওয়ার পরে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন টেনিস তারকা। কারণ সংবাদমাধ্যম তাঁর পাশে ছিল। টুইটারে মহেশ ভূপতি, ভিভিএস লক্ষ্মণ এবং সলমন খানের মতো সতীর্থ এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা পাশে দাঁড়িয়েছেন। মহেশ ওই বিজেপি নেতার সমালোচনা করে বলেছেন, “সানিয়া-পর্বটা কি হাস্যকর না দুঃখজনক? কী ভাবে সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে হয়, শেখা যায় এই ঘটনা থেকে। কেউ আপনাকে চেনে না স্যার!” ভিভিএস লক্ষ্মণ বলেন, “সানিয়া-বিতর্কে আমি অবাক। ও দেশকে যা দিয়েছে এবং ওর কৃতিত্বের জন্য আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত।” আর সলমনের টুইট, “সানিয়া যোগ্য জবাব দিয়েছে। ওঁর স্পিরিট অসাধারণ!”

সানিয়া বলেন, তাঁর বাবা-মা আর একটা জোরের জায়গা। কিন্তু তাঁদেরও এই বিতর্কে টেনে আনা হয়েছে, সেটা দুর্ভাগ্যজনক। বলেন শোয়েবের কথাও। তারকা খেলোয়াড়ের বক্তব্য, “ওঁরা সবাই পাশে না থাকলে সামলাতে পারতাম না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE