সংসদের যৌথ অধিবেশনে যোগ দিতে আজ সকালে যখন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সেন্ট্রাল হলে প্রবেশ করলেন নরেন্দ্র মোদী, তখন সাংসদদের ভিড় থেকে রাহুল গাঁধী তাঁকে সৌজন্য নমস্কার করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী যদিও তা খেয়াল পর্যন্ত করেননি। কিন্তু অধিবেশন শেষে বেরোনোর সময়েই ঘটল চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। যেতে যেতে থেমে গিয়ে অনেকেরই অলক্ষ্যে বাঁ হাত দিয়ে রাহুলের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলেন নরেন্দ্র মোদী। বড় জোর সেকেন্ডের জন্য। অথচ তাতেই ধরা থাকল, সর্বভারতীয় রাজনীতির এ যাবৎ বিরল ছবিটা। লোকসভা ভোটের প্রচারে তীক্ষ্ন আক্রমণ পর্ব শেষে আজ সৌজন্যর পালা। কিন্তু করমর্দনের সেই সময়টাতে উভয়ের অভিব্যক্তি এমনই ছিল যেন ব্যাপারটা নিছক সৌজন্যের থেকেও আরও বেশি কিছু।
এ নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই শুরু হয়েছে জল্পনা। প্রশ্ন উঠেছে, কংগ্রেসের প্রতি এই সৌজন্য কি সংসদেও প্রসারিত করবে মোদী সরকার? জবাবে আজও নেতিবাচক সাড়া পেয়েছে কংগ্রেস। রাহুলের সঙ্গে মোদীর করমর্দনের পর, কয়েক ঘন্টাও কাটেনি, স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের দফতর সূত্রে বলা হয়েছে, লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদ কংগ্রেসকে না-ও দেওয়া হতে পারে। এ ব্যাপারে পূর্ব দৃষ্টান্ত খতিয়ে দেখে স্পিকার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কারণ, লোকসভায় প্রধান বিরোধী দল হতে গেলে কোনও দলকে অন্তত ৫৫টি আসন পেতে হবে। আর লোকসভায় কংগ্রেসের রয়েছে ৪৪ জন সাংসদ।
ভোটের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার দিন থেকেই এ ব্যাপারে জল্পনা চলছে। ঘরোয়া আলোচনায় তখন থেকেই কংগ্রেস নেতারা বলছেন, বিষয়টি স্পিকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। পরোক্ষে যার অথর্, কংগ্রেসকে লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদ দেওয়ার প্রশ্নে মোদী তথা বিজেপি-র মতামত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সেই প্রেক্ষাপটেই যৌথ অধিবেশনের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেন সুমিত্রা মহাজন। আর তার পরেই স্পিকারের দফতর সূত্রে বলা হয়, লোকসভায় এ বার কোনও বিরোধী দলনেতার পদই সম্ভবত থাকবে না। যদিও কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা আজও বলেছেন, “লোকসভার বিরোধী দলনেতার পদ পাওয়ার ব্যাপারে কংগ্রেস আশাবাদী।” মজার বিষয়, সংসদীয় রীতি অনুযায়ী স্পিকার গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন না। কারণ, তা স্পিকারের নিরপেক্ষ অবস্থানের পরিপন্থী। কিন্তু সুমিত্রা মহাজন সেই রীতি ভাঙলেও কংগ্রেস তা নিয়ে জটিলতা বাড়াতে রাজি হয়নি।
তবে ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা বলছেন, লোকসভায় দল এখন এতটাই সংখ্যালঘু যে বিরোধী দলনেতার পদ পেল কি পেল না তা অপ্রাসঙ্গিক। বরং সরকারের ত্রুটি নিয়ে সরব হতে গেলে কংগ্রেসকে এ বার সংসদ ছেড়ে সড়কে নামতে হবে। মোদী করমর্দনের সৌজন্য দেখালেও রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেসকে জমি ছাড়ার কোনও ইচ্ছা যে তাঁর নেই, তা-ও যখন বোঝা যাচ্ছে!
সংসদে কংগ্রেস যে কতটা কোণঠাসা তা সকালের যৌথ অধিবেশনের ছবিতেও ধরা পড়েছে। দুই সভা মিলিয়ে প্রায় ৮০০ জন সাংসদ। তার মধ্যে কংগ্রেসের সাংসদ মাত্র ১১১ জন। বিজেপি এবং এনডিএ-র যৌথ পরিবারের সদস্যরাই সেন্ট্রাল হলের সিংহভাগ দখল করে রয়েছে। এমনকী এই প্রথম সেন্ট্রাল হলের সজ্জাতেও দেখা যায় পদ্মের ছোঁয়া। এ সবের ভিতরেই রাহুল গাঁধীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আজ আড়ালে করমর্দন করলেন ঠিকই। কিন্তু তার পর? লোকসভায় প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদাটুকু না পেলে তৃণমূল বা এডিএমকে-র সঙ্গে কংগ্রেসের ফারাক কতটুকু থাকবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy