দেবযানী খোবরাগাড়ের হেনস্থার পাল্টা জবাব দিয়ে যে ভাবে মার্কিন কূটনীতিকদের সুযোগ-সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছিল, ‘স্বপ্ন-বিমান’ ড্রিমলাইনারের ক্ষেত্রেও একই পথে হাঁটল ভারত সরকার। আমেরিকার বিমান-নির্মাতা সংস্থা বোয়িং-কে ভারতের বিমান মন্ত্রক পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে অবিলম্বে তারা কারিগরি সমস্যার সমাধান করতে না পারলে বসিয়ে দেওয়া হবে এয়ার ইন্ডিয়ার সব ড্রিমলাইনার। কারণ যাত্রী নিরাপত্তা সবার আগে।
ভারতের বিমান পরিবহনে যাত্রী নিরাপত্তা ঠিক করে মানা হচ্ছে না বলে সম্প্রতি ভারতকে দুষেছে আমেরিকার ‘ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফএএ)। যাত্রী নিরাপত্তার নিরিখে ভারতকে দ্বিতীয় স্তরেও নামিয়ে দিয়েছে মার্কিন সংস্থাটি। এয়ার ইন্ডিয়া নিয়মিত দিল্লি ও মুম্বই থেকে আমেরিকার বিভিন্ন শহরে বিমান চালায়। এফএএ এমন হুঁশিয়ারিও দিয়েছে, এখনই যাত্রী-নিরাপত্তায় বাড়তি নজর না দিলে কোনও ভারতীয় বিমান সংস্থাকে আমেরিকায় ওড়ার অনুমতি দেওয়া হবে না।
বিমান মন্ত্রকের একাংশের মতে, এ বার পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারতও। কয়েক মাস আগে আমেরিকায় ভারতীয় দূতাবাসের কুটনৈতিক অফিসার দেবযানী খোবরাগাড়েকে হেনস্থা করে সেখানকার পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে হইচই হয়। ভারতও পাল্টা জবাব দিয়ে এ দেশের মার্কিন কুটনীতিকদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা তুলে নেয়।
পরে দেবযানীকে ফিরিয়ে আনা হয় ভারতে। এ বার উড়ান নিয়েও আক্রমণাত্মক রাস্তাই বেছে নিয়েছে মনমোহন সরকার।
এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রের খবর, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত ১২টি ড্রিমলাইনার কিনেছে এয়ার ইন্ডিয়া। আরও ১৫টির বরাত দেওয়া রয়েছে। বোয়িং-এর এই বিমান নিয়ে বিশ্ব জুড়েই শুরু হয়েছিল সমস্যা। প্রথম ডানা মেলার কয়েক দিনের মধ্যেই ব্যাটারি নিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ায় বসিয়ে দিতে হয় এই বিলাসবহুল মডেলের বিমানকে। সেই সমস্যা মিটিয়ে ফের আকাশে ওড়া শুরু করে বিমানটি। কিন্তু, তার পরেও অন্য কারিগরি সমস্যা দেখা যায় ড্রিমলাইনারে। এয়ার ইন্ডিয়া জানাচ্ছে দেড় বছরের মধ্যে ৪৪টি বড় এবং ১৩৬টি ছোটখাটো যান্ত্রিক সমস্যায় পড়েছে তাদের ১২টি স্বপ্ন-বিমান।
ভারতের বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ডাইরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন’ (ডিজিসিএ) ড্রিমলাইনারের প্রতিটি সমস্যার ক্ষেত্রেই যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি নজরে এনেছে। এর মধ্যে মাঝ আকাশে ওড়ার সময়ে আচমকা পাইলটের সামনের কাঁচ ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনা যেমন রয়েছে, তেমনই নামার ঠিক আগের মুহূর্তে ল্যান্ডিং গিয়ারের সমস্যাও রয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়ার এক কর্তা বলেন, “বোয়িং-কে আমরা বার বার সমস্যার কথা জানিয়েও লাভ হয়নি। তার পরে হস্তক্ষেপ করার জন্য বিমান মন্ত্রককে অনুরোধ করা হয়।” বিষয়টি নিয়ে সংসদেও আলোচনা হয়। এর পরেই বিমান মন্ত্রক ডিজিসিএ মারফত যোগাযোগ করে বোয়িং-এর সঙ্গে। কত দিনের মধ্যে এই সমস্যা তারা সমাধান করতে পারবে, বোয়িং-কে সুনির্দিষ্ট ভাবে জানাতে বলা হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া ছাড়া অন্য যে সব সংস্থা ড্রিমলাইনার চালাচ্ছে, তাদের কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে এবং সেই সমস্যা সমাধানে বোয়িং কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা-ও জানাতে বলেছে ডিজিসিএ। বোয়িং-এর কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব না পেলে সমস্ত ড্রিমলাইনার বসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে ডিজিসিএ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy