Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জঙ্গি সংবিজিৎ কোথায়, ধন্দে গোয়েন্দারা

মায়ানমারের কাচিন প্রদেশের টাগা না ঘরের কাছে ফুন্টশোলিং-অসমের আদিবাসী হত্যাকাণ্ডের মূল মাথা আই কে সংবিজিৎ এখন কোথায়! রীতিমতো ধন্দে গোয়েন্দারাই। তিন দিন আগে এনডিএফবি (সংবিজিৎ) গোষ্ঠীর জঙ্গিরা শোণিতপুর-কোকরাঝাড়ে আক্রমণ হানতেই শুরু হয়েছিল সংবিজিতের খোঁজ। প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের কাছে যে তথ্য এসেছিল তাতে মনে করা হচ্ছিল, প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে ঘটনার আগেই ভারত ছেড়ে মায়ানমারের সুরক্ষিত আস্তানায় ঘাঁটি গাড়ে সংবিজিৎ।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৪:১৬
Share: Save:

মায়ানমারের কাচিন প্রদেশের টাগা না ঘরের কাছে ফুন্টশোলিং-অসমের আদিবাসী হত্যাকাণ্ডের মূল মাথা আই কে সংবিজিৎ এখন কোথায়! রীতিমতো ধন্দে গোয়েন্দারাই।

তিন দিন আগে এনডিএফবি (সংবিজিৎ) গোষ্ঠীর জঙ্গিরা শোণিতপুর-কোকরাঝাড়ে আক্রমণ হানতেই শুরু হয়েছিল সংবিজিতের খোঁজ। প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের কাছে যে তথ্য এসেছিল তাতে মনে করা হচ্ছিল, প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে ঘটনার আগেই ভারত ছেড়ে মায়ানমারের সুরক্ষিত আস্তানায় ঘাঁটি গাড়ে সংবিজিৎ। গোয়েন্দাদের কাছে খবর আসে মায়ানমারের উপদ্রুত কাচিন প্রদেশের টাগাতে লুকিয়ে রয়েছে ওই জঙ্গি নেতা। পরে জানা যায়, টাগা তার জন্য সুরক্ষিত নয় মনে করে কাচিন প্রদেশের আরও ভিতরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সংবিজিৎ। গত দু’দিন ধরে ওই তথ্যের ভিত্তিতেই সংবিজিতকে কী ভাবে গ্রেফতার করা যায় সেই ছক কষছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।

কিন্তু ছবিটি হঠাৎ পাল্টে যায় আজ দুপুরে। মঙ্গলবারের হত্যালীলার পর থেকেই বন্ধ ছিল সংবিজিতের মোবাইল ফোন। আজ দুপুর ১২ বেজে ৪০ মিনিটে কিছু ক্ষণের জন্য তা খোলা হয়। ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রাখা ওই মোবাইলটির অবস্থান দেখে চমকে যান গোয়েন্দারা। দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গ ও ভুটান সীমান্তের ফুন্টশোলিং-এর কাছে মোবাইলটি অন হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা আজ জানিয়েছেন, “ওটি যখন অন হয়েছে তখন তা ভারতীয় ভূখণ্ডেই ছিল। সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গ ও ভুটানের সীমান্তবর্তী এলাকা জয়গাঁওতে অন করা হয় সেটি।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে এখন প্রশ্ন সংবিজিতের মোবাইলটি যদি জয়গাঁওতে অন হয় তা হলে সেখান থেকে সে কোথায় যেতে পারে। গোয়েন্দারা মনে করছেন সংবিজিৎ ওই জায়গা থেকে প্রতিবেশী তিনটি দেশে পালানোর কথা ভাবতে পারে। ভুটান, নেপাল ও বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় যে প্রশ্নটি গোয়েন্দাদের ভাবাচ্ছে তা হল, মোবাইলটি কি সত্যিই সংবিজিতের সঙ্গে রয়েছে? নাকি তার মোবাইল ‘ট্র্যাক’ হবে ধরে নিয়েই পরিকল্পনা মাফিক গোয়েন্দাদের ভুল পথে চালাতে চাইছে ওই জঙ্গি নেতা। তারই নির্দেশে দলের অন্য কেউ ওই মোবাইলটি ইচ্ছাকৃত ভাবে অন করেছে। যাতে গোয়েন্দাদের ভুল পথে চালানো সম্ভব হয়।

কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “মোবাইল অন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই তথ্য অসম পুলিশের ডিজিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মোবাইলটির নির্দিষ্ট লোকেশন খুঁজে বার করে সংবিজিতের গতিবিধি নজরদারি করা শুরু হয়েছে।” গোয়েন্দাদের আশা খুব দ্রুত ধরে ফেলা সম্ভব হবে ওই জঙ্গি নেতাকে।

আজ সকালে অসমে জঙ্গি নিকেশে কী ভাবে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হবে তা নিয়ে দিল্লিতে আলোচনায় বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আগামিকাল অসম যাচ্ছেন সেনাপ্রধান। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে প্রয়োজনে সমস্ত রকম ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে সেনাপ্রধানকে।

আজ বিকেলে অসমের পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ওই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র প্রতিনিধিরাও। কোনও মৌলবাদী সংগঠন সংবিজিতকে উস্কানি দিয়ে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।

বড়ো জঙ্গিদের একটি বড় অংশ ইতিমধ্যেই অস্ত্র ফেলে মূল স্রোতে ফিরে এসেছে। গত সোমবারই এনডিএফবি (প্রোগ্রেসিভ) গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠকে বসে সংঘর্ষবিরতি চুক্তির মেয়াদ আরও ছ’মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একাংশের মতে, নিজেদের এলাকায় ক্রমশ জমি হারাচ্ছে বুঝতে পেরেই তাই চুক্তির পরের দিন ওই হত্যালীলা চালায় এনডিএফবি (সংবিজিৎ গোষ্ঠী)। ক্ষুব্ধ কেন্দ্র ওই ঘটনার পরেই সিদ্ধান্ত নেয় সংবিজিৎ গোষ্ঠীর উপরে চূড়ান্ত আঘাত হানা হবে। প্রয়োজনে জঙ্গি দমনে ২০০৩ সালের মতো ভারত-ভুটান যৌথ অভিযানও চালানো হবে। আজ বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানান, “এ বিষয়ে ভুটান সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে। জঙ্গি দমনে সাহায্য চাওয়া হয়েছে মায়ানমারেরও।”

ভারত-ভুটান সীমান্তে জঙ্গি দমনে যৌথ অভিযান কবে থেকে শুরু হবে তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি অংশের দাবি, আজ থেকেই ওই অভিযান শুরু হয়ে গিয়েছে। ভারত-ভুটান সীমান্তের জঙ্গলে জঙ্গিদের যে ‘মোবাইল ক্যাম্প’ রয়েছে তাতে চোরাগোপ্তা হামলা শুরু করে দিয়েছে উভয় পক্ষ। সেই অভিযানের অগ্রগতি দেখতেই সেনাপ্রধান আগামিকাল অসম যাচ্ছেন বলে জানাচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সূত্র।

তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আরেকটি সূত্রের বক্তব্য, যৌথ অভিযান শুরু যদি না হয়েও থাকে তা হলে ধরে নিতে হবে আগামী এক-দু’দিনের মধ্যে তা শুরু হয়ে যাবে। কারণ ইতিমধ্যেই প্রতিবেশী ভুটান, মায়ানমার বা বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলিকে সীমান্ত সিল করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। যাতে অভিযান চলাকালীন জঙ্গিরা পালিয়ে ওই সব দেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে।

অসম-সহ উত্তর-পূর্বের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা দীর্ঘ সময় ধরেই ভারতের নিরাপত্তার জন্য প্রশ্নচিহ্ন হয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ, ভুটান বা মায়ানমারের সঙ্গে অরক্ষিত সীমান্তের কারণে জঙ্গি তৎপরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে ওই এলাকায়। যা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাই এ বার সংবিজিৎ গোষ্ঠীর পাশাপাশি অন্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকেও নিকেশ করার অভিযান চালাতে চায় কেন্দ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assam mass killing nia ndfb terrorist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE