Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ঝাড়খণ্ডের ভোটেও জোট রাখতে পারল না কংগ্রেস

কংগ্রেসের জেদে ঝাড়খণ্ডে ভেঙে গেল জেএমএম-কংগ্রেস জোট। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) তিনটি জেতা আসন তাদের দিতেই হবে, এই দাবিতে কংগ্রেস অনড় থাকায় গত কাল গভীর রাতে দিল্লিতে আলোচনা ভেস্তে যায়। জেএমএম নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন সকালেই বিমান ধরে রাঁচি ফিরে আসেন। বেলার দিকে ঝাড়খণ্ডের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা বি কে হরিপ্রসাদ আনুষ্ঠানিক ভাবে জোট ভেঙে যাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, “জেএমএমের সঙ্গে জোট না হলেও জেডিইউ ও আরজেডি-র সঙ্গে হাত ধরে কংগ্রেস ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা ভোটে লড়বে।”

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
রাঁচি শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

কংগ্রেসের জেদে ঝাড়খণ্ডে ভেঙে গেল জেএমএম-কংগ্রেস জোট। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) তিনটি জেতা আসন তাদের দিতেই হবে, এই দাবিতে কংগ্রেস অনড় থাকায় গত কাল গভীর রাতে দিল্লিতে আলোচনা ভেস্তে যায়। জেএমএম নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন সকালেই বিমান ধরে রাঁচি ফিরে আসেন। বেলার দিকে ঝাড়খণ্ডের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা বি কে হরিপ্রসাদ আনুষ্ঠানিক ভাবে জোট ভেঙে যাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, “জেএমএমের সঙ্গে জোট না হলেও জেডিইউ ও আরজেডি-র সঙ্গে হাত ধরে কংগ্রেস ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা ভোটে লড়বে।”

মহারাষ্ট্রে দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী, শরদ পওয়ারের এনসিপি-র সঙ্গে জোট ভেঙে সে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে পর্যুদস্ত হয়েছে কংগ্রেস। এ বার জেএমএমের সঙ্গে জোট ভেঙে বিজেপি’র ঝাড়খণ্ড-জয়কে কংগ্রেস সহজ করে দিল বলে মনে করছেন অনেকে। আজ বিকেলে বাঘমুণ্ডির এক অনুষ্ঠানে হেমন্ত সোরেনের গলাতেও তারই প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে। হতাশ হেমন্তের বক্তব্য, “ক্ষুদ্র স্বার্থে কংগ্রেস এ রাজ্যে বিজেপি’কে কার্যত ‘ওয়াক ওভার’ দিয়ে দিল।”

কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পরপরই বিহারে বিধানসভার কয়েকটি আসনের উপনির্বাচনে মোদী-ঝড় থমকে যায় বিরোধীরা একজোট হওয়ায়। সেই প্রসঙ্গ মনে করিয়ে জেএমএমের এক প্রথম সারির নেতা বলেন, “বিজেপিকে রুখতে দু’দশকের শত্রুতা ভুলে বিহারে হাত মেলান লালু, নীতীশ কুমাররা। টালবাহানার পর তাঁদের সঙ্গে জোট গড়ে কংগ্রেসও। ভোটে তাঁদের সবার লাভ হয়। আমাদের সঙ্গে জোট ভাঙার আগে কংগ্রেস সেটা ভেবে দেখল না!”

গত লোকসভা ভোটে রাজ্যে ১৪টি আসনের মধ্যে ১২টিতেই জয়লাভ করেছে বিজেপি। ভোট পেয়েছিল ৪০.১ শতাংশ। জেএমএম কংগ্রেসকে ৯টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল। নিজেরা লড়েছিল চারটি আসনে। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস ১৩.৩ শতাংশ ভোট পেলেও, একটি আসনেও জিততে পারেনি। অন্য দিকে, ১২.১ শতাংশ ভোট পেয়ে পাঁচটির মধ্যে ২টি আসনে জেতে জেএমএম। লোকসভায় প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে ৫৯টি বিধানসভা আসনে বিজেপিই রয়েছে প্রথম স্থানে।

গত ১৪ মাস একসঙ্গে সরকার চালিয়েছে কংগ্রেস, জেএমএম, আরজেডি। তাই দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রথম থেকেই এই বিজেপি-বিরোধী জোটের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু এ রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের অধিকাংশই জোটের বিরুদ্ধে মতামত দেন। কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের বক্তব্য ছিল, বিজেপি-বিরোধী ভোট ভাগ না করে জোটবদ্ধ হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। জেএমএমও জোট চাইছিল। জোট সফল করতে লাগাতার দু’দিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন দিল্লিতে বসেছিলেন। জোট ভেঙে যাওয়ার পর কংগ্রেস আর জেএমএমের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপ শুরু হয়েছে।

কংগ্রেস নেতা সুবোধকান্ত সহায়ের কথায়, “সাঁওতাল পরগনা আর কোলহান অঞ্চলের আসন নিয়েই জট কাটল না। আঠারোটার মধ্যে সাঁওতাল পরগনা আর কোলহান অঞ্চল মিলিয়ে আমরা পাঁচ-ছ’টা আসন চেয়েছিলাম। কিন্তু জেএমএম সেগুলি ছাড়তে রাজি না হওয়ায় জোট ভেঙে গেল।” অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিমাংশুশেখর চৌধুরি বলেন, “আমরা পঞ্চাশটি আসনের দাবি কমিয়ে চল্লিশ পর্যন্ত নেমেছিলাম। কিন্তু কংগ্রেস এমন সব আসন দাবি করল যেগুলিতে আমাদের বিধায়ক রয়েছেন। একই সঙ্গে যে আসনগুলিতে কংগ্রেস শেষ বিধানসভায় দ্বিতীয় হয়েছে সেগুলিও তারা চাইছে। ফলে সমাধানের কোনও রাস্তাই বেরোয়নি।”

কংগ্রেস-জেএমএম, দুই শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁওতাল পরগনার জামতারা, পাকুড়, রাজমহল, বারহেট, শিকারিপাড়া, বোরিও কিংবা কোলহানের ঘাটশিলা, চাইবাসা, ধানবাদের টুন্ডির মতো আসনগুলি নিয়ে প্রথম থেকেই দু’পক্ষের বিরোধ ছিল। প্রথম থেকেই জোটের বিরোধী ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সুখদেব ভগত। গত কাল বিকেলে দিল্লিতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “সংখ্যার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ আসনের নাম।” অন্য আসনগুলির ক্ষেত্রে সমাধানসূত্র বেরোলেও শেষ পর্যন্ত জামতারা, পাকুড়, ঘাটশিলা এই তিনটি আসন নিয়ে জট কাটেনি। ওই আসনগুলিতে গত ভোটে বিজয়ী জেএমএম তাদের হক ছাড়তে রাজি হয়নি। অন্য দিকে অনড় থেকেছে কংগ্রেস। জেএমএমের মহাসচিব সুপ্রিয় ভট্টাচার্য আজ বলেন, “লোকসভা নির্বাচনে আমরা মাত্র চারটি আসনে লড়েছিলাম। কংগ্রেসকে জোটের স্বার্থে ন’টি আসন ছেড়ে দিই। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। কংগ্রেসের প্রার্থীরা কয়েক জায়গায় তো বাইরেই বেরোননি। জেতার ক্ষমতা নেই এমন প্রার্থীদের আমরা আসন ছাড়ার পক্ষপাতী নই। আমরা একাই লড়ব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jharkhand congress jmm prabal gangopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE