Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

টুইট-বিতর্কে ইতি টানতে বিবৃতি ভি কে সিংহের

কাল ছিলেন জেনারেলের মেজাজে। আজ প্রধানমন্ত্রীর চাপে হলেন অনুগত সৈনিক! দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মর্যাদা রাখতে সোমবার দিল্লির পাক হাইকমিশনে পাকিস্তান দিবসের অনুষ্ঠানে সবুজ জ্যাকেট পরে মিনিট পনেরোর জন্য গিয়েছিলেন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী তথা প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহ। ফিরে এসে ‘অত্যন্ত বিরক্তিকর’ (#ডিজগাস্ট) এবং ‘কর্তব্য’ (#ডিউটি) হ্যাশট্যাগ দিয়ে পর পর পাঁচটি টুইট করেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান। যার থেকে মনে হয়, যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও নিছক বাধ্য হয়েই সেখানে যেতে হয়েছিল তাঁকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৯
Share: Save:

কাল ছিলেন জেনারেলের মেজাজে। আজ প্রধানমন্ত্রীর চাপে হলেন অনুগত সৈনিক!

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মর্যাদা রাখতে সোমবার দিল্লির পাক হাইকমিশনে পাকিস্তান দিবসের অনুষ্ঠানে সবুজ জ্যাকেট পরে মিনিট পনেরোর জন্য গিয়েছিলেন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী তথা প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহ। ফিরে এসে ‘অত্যন্ত বিরক্তিকর’ (#ডিজগাস্ট) এবং ‘কর্তব্য’ (#ডিউটি) হ্যাশট্যাগ দিয়ে পর পর পাঁচটি টুইট করেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান। যার থেকে মনে হয়, যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও নিছক বাধ্য হয়েই সেখানে যেতে হয়েছিল তাঁকে। এর পরেই শুরু বিতর্ক। আর এই প্রথম প্রকাশ্যে বেরিয়ে এল নরেন্দ্র মোদী সরকারের চিড়টি। এমনকী, প্রশ্ন উঠেছে সরকারের পাক-নীতি নিয়েও।

কারণ, দিল্লির পাক হাইকমিশনে পাকিস্তান দিবসে হুরিয়ত নেতাদের উপস্থিতি নিয়ে কাল সকাল থেকেই বিতর্ক শুরু হয়েছিল। সেখানে ভি কে সিংহ পৌঁছনোর পর বিতর্ক আরও তীব্র হয়। ভি কে সিংহের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানানো হয়, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কাছে এই অনুষ্ঠানে না যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন জেনারেল। কিন্তু পরে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে তাঁকে যেতে বলা হয়। বিতর্ক আরও বাড়ে রাতে ভি কে সিংহ টুইট করার পরে। ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী আজ কথা বলেন তাঁর সঙ্গে। কারণ, এর জন্য আঁচ পড়েছে সরকারের ভাবমূর্তিতেও। মঙ্গলবার সন্ধেয় ভি কে সিংহের ইস্তফা নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে ওঠে। কিন্তু রাত ন’টার পর ব্যাখ্যা দিতে সাংবাদিক বৈঠক করেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান নিজেই। কালকের সেই ফৌজি মেজাজ ভুলে আজ সুর নরম করে বললেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর অনুগত সৈনিক।

সাংবাদিক বৈঠকে ভি কে সিংহ জানান, তিনি আদৌ ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। টুইট ভুল বোঝার দায় সংবাদমাধ্যমের উপরে চাপিয়ে বলেন, আসলে তিনি ‘ডিউটি’ বলতে বুঝিয়েছিলেন সেনার কতর্ব্যের কথা। আর ‘ডিজগাস্ট’ শব্দটি সংবাদ মাধ্যম বুঝতেই পারেনি। ভি কে সিংহের দাবি, তাঁর কাছে পাকিস্তান দিবস বা নামিবিয়া দিবসে যোগ দেওয়া একই। ফি-বছর এই অনুষ্ঠানে হাজির থাকেন কোনও না কোনও প্রতিমন্ত্রী। ভবিষ্যতেও থাকবেন। বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও প্রতি বার সেখানে যান, এ বারেও গিয়েছেন। শুধু এ বারে একটাই তফাত, এই প্রথম কোনও প্রাক্তন সেনাপ্রধান এমন অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন। কিন্তু সেই সেনাপ্রধান এখন কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীও বটে। তাই প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর সরকার বা তাঁর দেশাত্মবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলা অমূলক।

প্রাক্তন সেনাপ্রধান সুর বদলে সংবাদমাধ্যমের ঘাড়ে দায় চাপালেও তাঁর টুইট নিয়ে কেন এত বিতর্ক হল? প্রাক্তন সেনাপ্রধান তাঁর প্রথম টুইটে ‘কর্তব্য’ (#ডিউটি) নিয়ে লিখেছেন, “এমন একটা কাজ যা নীতিগত ভাবে বা আইনি মারপ্যাঁচের জন্য বাধ্য হয়ে করতে হয়।” দ্বিতীয়টিতে লিখেছেন, “যা নীতি বা আইনি মারপ্যাঁচ দ্বারা দায়বদ্ধতার সঙ্গে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে।” তৃতীয় টুইটে একই হ্যাশট্যাগ দিয়ে ফের লিখেছেন, “যে কাজটি করতে দেওয়া হয়েছে।” চতুর্থ টুইটে ‘অত্যন্ত বিরক্তিকর’ (#ডিজগাস্ট) বলে ভি কে সিংহ লিখেছেন, “যা মনকে ঘৃণায় ভরিয়ে দেয়।” শেষ টুইটটিতে ওই একই হ্যাশট্যাগ দিয়ে লিখেছেন, “যা নীতিবোধ, আদর্শ এবং রুচিবোধকে আহত করে।” রাতে ভি কে সিংহ ব্যাখ্যা দেওয়ার আগেই তাঁর সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন কংগ্রেস নেতারা। মণীশ তিওয়ারি বলেন, “পাকিস্তান নিয়ে সরকারের দ্বিচারিতায় মন্ত্রী যখন এতটাই তিতিবিরক্ত তখন ইস্তফা দিলেই পারেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tweet controversy v k singh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE