Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তকমাহীন, মাপা সময়, মন্ত্রিগোষ্ঠী মোদী ঘরানায়

প্রশাসনে গতি আনতে মন্ত্রিগোষ্ঠী নিয়ে নতুন ভাবনা কার্যকর করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ক্ষমতায় এসেই মোদী ইউপিএ আমলের সব মন্ত্রিগোষ্ঠী বাতিল করেছেন। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে বিভিন্ন মন্ত্রকের একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনটা রয়েই গিয়েছে। এই অবস্থায় মোদী নিজেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের কয়েকটি গোষ্ঠী তৈরি করে দিয়েছেন।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৪ ০৩:১১
Share: Save:

প্রশাসনে গতি আনতে মন্ত্রিগোষ্ঠী নিয়ে নতুন ভাবনা কার্যকর করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

ক্ষমতায় এসেই মোদী ইউপিএ আমলের সব মন্ত্রিগোষ্ঠী বাতিল করেছেন। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে বিভিন্ন মন্ত্রকের একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনটা রয়েই গিয়েছে। এই অবস্থায় মোদী নিজেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের কয়েকটি গোষ্ঠী তৈরি করে দিয়েছেন। এই মন্ত্রীরা মিলেমিশে কাজ করছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রের খবর। ইউপিএ জমানার মন্ত্রিগোষ্ঠীগুলি থেকে এগুলির স্পষ্ট দু’টি ফারাক রয়েছে। এক, সরকারি ভাবে এগুলিকে মন্ত্রিগোষ্ঠীর মোড়ক দেওয়া হচ্ছে না। দুই, মন্ত্রকগুলির মধ্যে আলোচনার নামে দীর্ঘদিন সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখার রাস্তা রাখা হয়নি। আলোচনার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন মোদী। তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, আলোচনা শেষ করতে হবে দু’সপ্তাহের মধ্যে।

মাপা সময়ে কোনও মন্ত্রক যদি সিদ্ধান্ত নিতে না পারে? তখন কী করতে হবে তা-ও স্পষ্ট জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। তা হল, কেন কোনও মন্ত্রক বিশেষ একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, সেটা লিখিত ভাবে জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সচিবকে। এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরের মন্ত্রিসভার বৈঠকে তার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।

ভোটের প্রচারে মনমোহন সরকারকে নীতিপঙ্গুত্ব নিয়ে তুলোধোনা করেছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার পরই তিনি ইউপিএ জমানার ২১টি মন্ত্রিগোষ্ঠী ও ৯টি বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রিগোষ্ঠী বাতিল করে দেন। এখন কাজে গতি আনার স্বার্থে ঘরোয়া স্তরে মন্ত্রীদের কয়েকটি গোষ্ঠী বানাতে হয়েছে তাঁকেও। তবে তাতে মোদীর নিজস্ব ভাবনার ছাপ স্পষ্ট। সরকারের মতে, ইউপিএ জমানায় মন্ত্রিগোষ্ঠীগুলির জন্য সময় বা নিয়মের এমন বাঁধন ছিল না। বরং মনমোহন সিংহের সিদ্ধান্তহীনতার জন্যই এই সব মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি করে জটিল বিষয়গুলি ঝুলিয়ে রাখা হত। দেখা যেত, বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে মতপার্থক্যের জন্য আলোচনা থমকে গিয়েছে। ঝুলে রয়েছে সিদ্ধান্ত।

এই সিদ্ধান্তহীনতার জন্য সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের পরিকাঠামো ক্ষেত্র। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই পরিবেশ, কয়লা, ইস্পাত ও বিদ্যুৎমন্ত্রীদের এক সঙ্গে বসে যাবতীয় বকেয়া প্রকল্প নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন মোদী। পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “বিভিন্ন পরিকাঠামো প্রকল্পে পরিবেশের ছাড়পত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন মন্ত্রকে যখন এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়, তখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা একসঙ্গে বসে এই সমস্যা চটজলদি সমাধানের চেষ্টা করি।” তার মানে এমনটা নয়, কোনও মতপার্থক্য নেই কোথাও। ভোটের আগে থেকেই উমা ভারতী নদীর অবিরল ধারাকে অব্যাহত রাখার দাবিতে কিছু বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতা করে এসেছেন। এখন তিনি জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী। বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের বক্তব্য, “আমাদের দু’জনের দফতরই দিল্লির শ্রমশক্তি ভবনে। একই তলায়, প্রায় পাশাপাশি। কোনও সমস্যা হলে, সচিবদের সঙ্গে নিয়েই আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করি।”

পীযূষের হাতে রয়েছে বিদ্যুৎ, কয়লা ও অপ্রচলিত শক্তি মন্ত্রক। তাঁর কথায়, “তিনটি মন্ত্রকের মধ্যেও সমন্বয় তৈরি করে ফেলেছি আমি। যদি পরিবেশের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়, তৎক্ষণাৎ পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরকে ফোন করে নিই। অথবা সময় নিয়ে দেখা করি।” সড়ক পরিবহণ, গ্রামোন্নয়ন ও জাহাজমন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর অধীনেও ঘরোয়া স্তরে একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি করেছেন মোদী। গঙ্গাদূষণ রোধ নিয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প তৈরি করার জন্য উমা ভারতী, জাভড়েকরের পাশাপাশি পর্যটন মন্ত্রী শ্রীপদ নাইকও নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। এক মাসের মধ্যে তাঁদের রিপোর্ট দিতে বলেছেন মোদী। যমুনার উন্নয়নের প্রশ্নে সামিল করে দেওয়া হয়েছে নগরোন্নয়ন ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককেও।

মোদী সরকারের এক শীর্ষ আমলা জানাচ্ছেন, ইউপিএ জমানায় মন্ত্রকগুলির মধ্যে সমন্বয় না থাকাতেই অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, এক মন্ত্রক আর একটি মন্ত্রককে আদালতে নিয়ে যাওয়ারও হুমকি দিত। কিন্তু এখন সকলে মিলে একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। খোলামেলা আলোচনা চলছে। এক মন্ত্রক থেকে অন্য মন্ত্রকে ফাইল গড়াতেও সময় লাগছে না। প্রশাসনের এই শৈলী যদি বজায় থাকে, তা হলে নিঃসন্দেহে কয়েক মাসের মধ্যেই এর প্রভাব তৃণমূল স্তরে পড়তে শুরু করবে। দেশের অর্থনীতির চাকাও গড়াতে শুরু করবে বলে মনে করছেন আমলাদের অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

central ministry narendra modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE