Advertisement
E-Paper

ফের গোসা আডবাণীর, দল অনড়ই

তিনি চাইছিলেন ভোপাল থেকে লড়তে। কিন্তু মোদীর রাজ্য থেকে সরে গেলে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থীর প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করা হবে, এই যুক্তিতে লালকৃষ্ণ আডবাণীকে গাঁধীনগর থেকেই প্রার্থী করল বিজেপি। সেই সিদ্ধান্তে তিনি যে খুশি নন, সেটা ঘনিষ্ঠ মহলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রবীণ নেতা। গভীর রাত পর্যন্ত বিজেপি এবং সঙ্ঘ নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা চালালেও দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত, মানা হবে না আডবাণীর আব্দার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০২:৩৮

তিনি চাইছিলেন ভোপাল থেকে লড়তে। কিন্তু মোদীর রাজ্য থেকে সরে গেলে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থীর প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করা হবে, এই যুক্তিতে লালকৃষ্ণ আডবাণীকে গাঁধীনগর থেকেই প্রার্থী করল বিজেপি। সেই সিদ্ধান্তে তিনি যে খুশি নন, সেটা ঘনিষ্ঠ মহলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রবীণ নেতা। গভীর রাত পর্যন্ত বিজেপি এবং সঙ্ঘ নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা চালালেও দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত, মানা হবে না আডবাণীর আব্দার।

দল যে সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে তা না-পসন্দ হলে আডবাণী সাধারণত যা করে থাকেন, আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দলের সংসদীয় বোর্ড এবং কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে গরহাজির থেকেছেন। ঠিক যেমন করে গরহাজির ছিলেন গত বছর জুন মাসে গোয়ায় জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে। যেখানে তাঁর আপত্তি উড়িয়েই নির্বাচনী প্রচার কমিটির প্রধান করা হয়েছিল নরেন্দ্র মোদীকে। তার পর গত বছরই সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা হয় মোদীকে। দলের সদর দফতরে সে দিনও মুখ দেখাননি আডবাণী।

আজ বৈঠকে না-যাওয়ার পক্ষে আডবাণীর যুক্তি ছিল, যে হেতু তিনি কোন আসনে লড়বেন তা নিয়েই সিদ্ধান্ত হবে, সে হেতু তাঁর উপস্থিতি কাম্য নয়। সেটাই দলের পরম্পরা। যদিও ঘটনা হল, মোদী, সুষমা স্বরাজ বা অরুণ জেটলি কেউই তাঁদের কেন্দ্র নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিনে বৈঠকে গরহাজির ছিলেন না। বিজেপি সূত্রের খবর, আসলে তাঁর ভোপাল থেকে লড়ার ইচ্ছাতে দল সিলমোহর দেবে না, এটা বুঝেই বৈঠকে না-যাওয়ার পুরনো তাস খেলেছেন আডবাণী।

গাঁধীনগর থেকে লড়তে আডবাণীর আপত্তি কেন? প্রথমত, তাঁর আশঙ্কা রয়েছে, মোদী তাঁকে হারিয়ে দিতে পারেন। যদিও বিজেপি সূত্র বলছে, সেই সম্ভাবনা সুদূর পরাহত। কেননা, অশীতিপর এবং জান লড়িয়ে প্রচারে অক্ষম আডবাণী হেরে গেলে তার কালিমা মোদীর উপরেই বর্তাবে। সেটা তিনি হতে দেবেন কেন! কিন্তু গাঁধীনগরের বিজেপি কর্মীরা যে তাঁকে চাইছেন না, সেই খবরও আডবাণীর কাছে রয়েছে। ফলে তিনি ঝুঁকি নিতে চান না। দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে দল এবং সঙ্ঘ পরিবার তাঁকে খরচের খাতায় ফেলে দিলেও এখনও যে তাঁর চাহিদা আছে, সেটা বুঝিয়ে দিতে চাইলেন আডবাণী। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, আডবাণী-ঘনিষ্ঠ শিবরাজ সিংহ চৌহানই তাঁকে ভোপালে প্রার্থী করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ওই কেন্দ্রের সাংসদ কৈলাস জোশীও প্রকাশ্যে আডবাণীকে প্রার্থী হওয়ার আবেদন জানান। আডবাণীর নামে ইতিমধ্যে পোস্টারও পড়ে গিয়েছে ভোপালে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা খারিজ করে দল বলেছে, আডবাণীকে গাঁধীনগর থেকে সরানো হলে সেটা কার্যত মোদীর প্রতি অনাস্থার সামিল হবে। জনমানসে এই বার্তাও যাবে যে দলে অনৈক্য রয়েছে। সেটা হতে দেওয়া যায় না।

এই অবস্থায় আজ রাতেই দলের বার্তা নিয়ে আডবাণীর কাছে যান সুষমা। সঙ্ঘ পরিবারের প্রতিনিধি হয়ে যান নিতিন গডকড়ী। দুই নেতাকেই অসন্তোষের কথা জানিয়ে দেন আডবাণী। কেন ভোপালের জন্য তাঁর নাম ভাবা হচ্ছে না, তোলেন সেই প্রসঙ্গও। গাঁধীনগর থেকে লড়তে হলে ভোটেই দাঁড়াবেন না, এমন ইঙ্গিতও আডবাণী দিয়েছেন বলে বিজেপি-র একটি সূত্রের খবর। যদিও ভোপাল আসনে প্রার্থীর নাম এখনও ঘোষণা করা হয়নি, তবু আডবাণীর আসন নিয়ে সিদ্ধান্ত বদলের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে, এমনটাই দাবি করছেন বিজেপি-র একাধিক পদস্থ নেতা। দলের তরফে কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটির এক সদস্য ঘোষণা করেছেন, “এক বার নাম ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরে তা বদলানোর সম্ভাবনা নেই।”

কিন্তু এ নিয়ে বিতর্ক চললে অনৈক্যের ছবিটাই যে প্রকট হয়ে উঠবে, সেটা বিলক্ষণ জানেন বিজেপি এবং সঙ্ঘ নেতারা। তাঁদের আশঙ্কা, এর মধ্যে আডবাণী যদি ব্লগ লিখে বা প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করে বসেন, তাতে বিড়ম্বনা আরও বাড়বে। কারণ কংগ্রেস ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছে, মুরলীমনোহর জোশীর আসন কেড়ে নিয়ে মোদী তাঁকে অপমান করেছেন। এ বার আডবাণীকে তাঁর পছন্দের আসন না দিয়ে, দলের বর্ষীয়ান নেতাকে নিজের অধীনে রাখতে চাইছেন।

সেই অস্বস্তি যাতে আর না-বাড়ে সে জন্য আডবাণীকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে। মোদী আজ সকালেই গুজরাতে দলের মুখপাত্র বিজয় রূপানিকে দিয়ে সংবাদমাধ্যমে বলিয়ে দেন, “গাঁধীনগর থেকে একটিমাত্র নামই প্রস্তাব করা হয়েছে। আডবাণীর। আমরা চাই, তাঁর মতো প্রবীণ নেতা নিজের কেন্দ্র থেকেই লড়ুন।” তার পরেও পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণে আসেনি, তখন রাতে গুজরাত যাত্রা বাতিল করে দিল্লিতেই থেকে গিয়েছেন মোদী। দিল্লিতে আজ বিষয়টির উপরে নজর রাখছিলেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। রাতেই তিনি মোদীকে ডেকে আলোচনা করেন। দূত হিসেবে আডবাণীর কাছে পাঠান নিতিন গডকড়ীকে।

কিন্তু তাতেও সঙ্কট কাটেনি। আডবাণী এখনও অনড়। ঘনিষ্ঠ মহলের মতে ভোপাল থেকে লড়তে চেয়ে এক ঢিলে অনেক পাখি মারতে চেয়েছেন আডবাণী। বুঝিয়ে দিয়েছেন, মোদীর প্রতি তাঁর অনাস্থা বহাল এবং তুলনায় শিবরাজ সিংহ তাঁর অনেক বেশি পছন্দের। পাশাপাশি, মোদী-নির্ভরতা ছাড়তে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড়ে নিজের সম্ভাবনাও জিইয়ে রাখতে চেয়েছেন আডবাণী। ঘনিষ্ঠদের ধারণা, গোড়ায় যে মোদী-ঝড় উঠেছিল, তা এখন অনেকটাই স্তিমিত। ফলে মোদী শিবির ২৩০-২৪০টি আসন পাওয়ার আশা করলেও শেষ পর্যন্ত ২০০-র নীচে আটকে যেতে পারে বিজেপি। আর তখন নতুন শরিক পাওয়ার চেষ্টায় মোদীর থেকে আডবাণীর নাম অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।

মোদী-আডবাণীর এই টানাপড়েন বিজেপি কী ভাবে সামাল দেয়, সেটাই দেখার। দেখার এটাও যে এর আগে বিদ্রোহ করেও শেষ পর্যন্ত ঘরে ফেরা এই লড়াই কত দূর নিয়ে যান আডবাণী। ভোপাল ও আমদাবাদ-পূর্ব আসন দু’টি ফাঁকা রাখাটা আশার আলোই ভাবছে আডবাণী শিবির। আমদাবাদ পূর্ব কেন্দ্রের সাংসদ হরিন পাঠক আডবাণীরই ঘনিষ্ঠ। তবে মোদী-ঘনিষ্ঠ নেতা অমিত শাহকেও গুজরাত থেকে লড়ানোর প্রস্তাব আছে। দার্জিলিঙের সাংসদ যশোবন্ত সিংহের নামও আজ বারমেড় কেন্দ্র থেকে নাম ঘোষণা হয়নি। আজই সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতা জগদম্বিকা পালকে উত্তরপ্রদেশের দোমারিয়াগঞ্জ থেকে প্রার্থী করা হয়েছে। হেমা মালিনীকে মথুরা থেকে। জয়পুর থেকে ক্রীড়াবিদ রাজ্যবর্ধন রাঠৌরকে।

আর বারাণসীর পাশাপাশি গুজরাতে মোদীর দ্বিতীয় আসনটিও ঘোষণা করা হয়েছে আজ। বডোদরা।

advani loksabha election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy