Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বেহাল রাস্তাই বাধা, শিলচর এনআইটি-তে যেতে নারাজ শিক্ষকরা

রাস্তা খারাপ, তাই শিক্ষক পাচ্ছে না শিলচর এনআইটি! ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সূত্রের খবর, গত বছরও চাকরি ছেড়েছেন তিন জন শিক্ষক। সহকর্মীদের তাঁরা বলে গিয়েছেন রাস্তাঘাটের যা হাল, তাতে এখানে থাকা যায় না। শিলচর শহর থেকে এনআইটি পৌঁছতে অনেক দুর্ভোগ। গর্তে ভরা রাস্তা। যে কোনও সময় গাড়ি দুর্ঘটনার মুখে পড়তে পারে।

এই পথেই যেতে হয় শিলচর এনআইটিতে। ছবি: স্বপন রায়।

এই পথেই যেতে হয় শিলচর এনআইটিতে। ছবি: স্বপন রায়।

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:২৪
Share: Save:

রাস্তা খারাপ, তাই শিক্ষক পাচ্ছে না শিলচর এনআইটি!

ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সূত্রের খবর, গত বছরও চাকরি ছেড়েছেন তিন জন শিক্ষক। সহকর্মীদের তাঁরা বলে গিয়েছেন রাস্তাঘাটের যা হাল, তাতে এখানে থাকা যায় না।

শিলচর শহর থেকে এনআইটি পৌঁছতে অনেক দুর্ভোগ। গর্তে ভরা রাস্তা। যে কোনও সময় গাড়ি দুর্ঘটনার মুখে পড়তে পারে। শিলচর এনআইটি থেকে ওই রাস্তায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরের গুয়াহাটিতে পৌঁছতে সময় লাগে ১৪-১৬ ঘণ্টা। বর্ষায় কখনও কখনও ২-৩ দিন পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি আটকে থাকে। রেল যাতায়াতও কম ঝক্কির নয়। লামডিং পর্যন্ত আগে মিটারগেজ লাইন ছিল। সেখান থেকে সব ট্রেন পাওয়া যেত না। ব্রডগেজ প্রকল্পের জন্য গত বছর অক্টোবর থেকে ওই রুটে শুরু হয় মেগাব্লক। এখন ট্রেন ধরতে যেতে হয় গুয়াহাটিতে। বিমান টিকিটের যেমন বেশি দাম, তেমন ভিড়। শিলচরে ‘এয়ার ইন্ডিয়া’ ও অন্য একটি বেসরকারি সংস্থার পরিষেবা রয়েছে। সেগুলি শুধু গুয়াহাটি ও কলকাতা পর্যন্ত যায়। শিলচরে রাতে অবতরণের ব্যবস্থাও নেই। শীতকালে মাঝেমধ্যেই বিমান বাতিল করা হয়।

এনআইটি কর্তৃপক্ষ জানান, বর্তমানে সেখানে ২২০টি শিক্ষক পদের মধ্যে ৯০টি আসন শূন্য। নামী শিক্ষকরা আসতে চান না। যাঁরা আসছেন, তাঁদের অনেকেই কয়েক দিন পর প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবেন। ছাত্রদের পছন্দের তালিকাতেও শিলচর নেই। এ সবে উদ্বিগ্ন অধিকর্তা নিশিকান্ত বিনায়ক দেশপাণ্ডে বলেন, “শূন্য পদগুলি পূরণ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু যোগ্য লোক আসতে চাইছেন না। এক বছর আগে এখানে যোগ দেওয়া তিন জন শিক্ষক সম্প্রতি ইস্তফা দিয়েছেন।” দেশপাণ্ডে জানান, কোনও এনআইটি-তে চাকরি পেয়েও যোগ না দেওয়ার ঘটনা বিরল। শিলচর এনআইটি-তে এমনও ঘটেছে। খড়্গপুর আইআইটির এক প্রার্থী সেখানে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েও যাতায়াতের সমস্যার জন্য যোগ দেননি। একই হাল পড়ুয়াদের। দেশের নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পড়ুয়ারা কখনওই শিলচর এনআইটি-তে উচ্চশিক্ষার জন্য আসতে চান না। অধিকর্তার কথায়, “এখানে পড়াশোনার উন্নত পরিবেশ, বিশ্বমানের ডিজিট্যাল গ্রন্থাগার, শক্তিশালী প্লেসমেন্ট সেল রয়েছে। কিন্তু রাস্তাঘাট বেহাল। বরাক উপত্যকায় বড় কোনও শিল্পও নেই। তাই বাইরের শিক্ষক-ছাত্ররা এখানে আসতে ভয় পাচ্ছেন।” তিনি জানিয়েছেন, এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দেশের অন্য এনআইটি-গুলির কর্তাদের একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের মন্ত্রী-আমলাদের সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

শিলচরে পুর্ত বিভাগের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এ কে চন্দ জানিয়েছেন, গুয়াহাটি থেকে শিলচর যাতায়াতের রাস্তার প্রায় ২০০ কিলোমিটার মেঘালয়ের অন্তর্গত। ওই অংশে যৌথ ভাবে মেরামতির কাজ করার জন্য মেঘালয়ের সঙ্গে অসম সরকারের কথাবার্তা হয়েছে। মেঘালয়ের সীমানা সংলগ্ন মালিডহর থেকে শিলচর পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের জন্য টাকা মঞ্জুর করেছে প্রশাসন। সেখানে কাজ চলছে। পুর্ত দফতরের ওই কর্তা জানান, শিলচর থেকে রাঙ্গিরখাড়ি হয়ে এনআইটি ও আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তা সারাইয়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল থেকে ২২ কোটি টাকা মিলেছে। সব মিলিয়ে অসমে ওই কাজ এ বছরের জুন-জুলাইয়ের মধ্যেই শেষ হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

uttam saha shilchor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE