Advertisement
E-Paper

মোদীর স্ত্রী নিয়ে প্রচারে ক্ষতি, বুঝছে কংগ্রেস

নরেন্দ্র মোদীর স্ত্রী সম্পর্কে স্বয়ং রাহুল গাঁধীও আক্রমণে নামায় রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেসের লোকসানই হয়েছে বলে মনে করছেন দলের একাধিক প্রবীণ নেতা। বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন দলের এই নেতারা সনিয়া গাঁধীর কাছে গিয়ে জানিয়েছেন, এই প্রসঙ্গে মোদী-বিরোধী আক্রমণকে আর তীব্র করা মোটেই ঠিক হবে না। দলের প্রবীণ নেতাদের পরামর্শ শুনে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছেন সনিয়া। দলীয় নেতৃত্বকে তাঁর বার্তা, মোদীর স্ত্রীকে নিয়ে আর কোনও ব্যক্তিগত আক্রমণে না যাওয়াই বাঞ্ছনীয়।

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:২০

নরেন্দ্র মোদীর স্ত্রী সম্পর্কে স্বয়ং রাহুল গাঁধীও আক্রমণে নামায় রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেসের লোকসানই হয়েছে বলে মনে করছেন দলের একাধিক প্রবীণ নেতা। বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন দলের এই নেতারা সনিয়া গাঁধীর কাছে গিয়ে জানিয়েছেন, এই প্রসঙ্গে মোদী-বিরোধী আক্রমণকে আর তীব্র করা মোটেই ঠিক হবে না।

দলের প্রবীণ নেতাদের পরামর্শ শুনে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছেন সনিয়া। দলীয় নেতৃত্বকে তাঁর বার্তা, মোদীর স্ত্রীকে নিয়ে আর কোনও ব্যক্তিগত আক্রমণে না যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। কংগ্রেসের বহু নেতাই মনে করেন, শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে মোদীর সম্পর্ক নিয়ে কটাক্ষ করে কেজরীবালের কায়দায় আম-আদমির আবেগকে স্পর্শ করার চেষ্টা এক জিনিস। কিন্তু মোদীর স্ত্রীকে প্রচারের বিষয় করে তোলার যে চেষ্টা চলছে, ভারতীয় জনমানসে তার ফল ভাল না-ও হতে পারে। সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল, জনার্দন দ্বিবেদীর মতো কংগ্রেস নেতারা মনে করেন, এই মোদী-পত্নী বিরোধী প্রচারে আখেরে লাভ হচ্ছে বিজেপিরই। কারণ এর আগের একাধিক নির্বাচনের হলফনামায় মোদীর স্ত্রীর নাম না রাখা এবং এ বারে রাখা নিয়ে রাহুল গাঁধী প্রশ্ন তুললেও আমজনতাকে সেটা বোঝানো কঠিন বলেই মনে করেন এই সব নেতা।

রাহুল বিষয়টি নিয়ে ময়দানে নেমে পড়লেও বিজেপি কিন্তু এখনও সরাসরি আক্রমণের পথে হাঁটেনি। তবে তারা প্রচার শুরু করে দিয়েছে যে, হেরে যাওয়ার ভয়েই কংগ্রেস মরিয়া হয়ে এই সব কথা বলে বেড়াচ্ছে। একই সঙ্গে বিজেপি পাল্টা প্রচার করছে এই বলে যে, নরেন্দ্র মোদী ‘আক্রান্ত’। যাতে ভোটারদের একটা অংশের সহানুভূতি তারা পায়।

মোদীর স্ত্রীর বিষয়টি নিয়ে প্রচার করার কৌশল রচনা করেছিলেন রাহুল-শিবিরের অন্যতম নেতা মধুসূদন মিস্ত্রি। মধুসূদন নিজে এ বারে বডোদরায় প্রার্থী হয়েছেন খোদ মোদীর বিরুদ্ধে। বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীকে হারাতে তাঁর পরামর্শ ছিল যে, কংগ্রেসকে আক্রমণাত্মক হতে হবে। এই কারণে প্রার্থী হয়েই তিনি গুজরাতের রাস্তায় নেমে, ল্যাম্পপোস্টে উঠে মোদীর ছবির উপর নিজের পোস্টার লাগানো নিয়ে একটা চূড়ান্ত নাটক করেন। মধুসূদনের অভিযোগ ছিল, সব প্রচারের জায়গা দখল করে নিয়েছেন মোদী। তাই বাধ্য হয়েই তিনি এ কাজ করেছেন। একই ভাবে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতেই মোদীর স্ত্রীকে নিয়ে আক্রমণাত্মক প্রচারের জন্য রাহুলকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।

মধুসূদন মিস্ত্রি বলেন, “এটা কোনও ব্যক্তিগত বিষয় নয়। মোদীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমাদের কোনও আগ্রহ নেই। কিন্তু তিনি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। তিনি এত দিন স্ত্রীর নাম লুকিয়ে রেখেছিলেন কেন? এ বার নির্বাচন কমিশন বাধ্যতামূলক করায় তিনি জানাতে বাধ্য হয়েছেন। স্ত্রী আইনগত হলে তাঁর সম্পত্তি কী আছে, সেটা জানানোও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।” মধুসূদনের সুরেই বিষয়টি নিয়ে আক্রমণাত্মক রণকৌশলের পক্ষে ছিলেন দিগ্বিজয় সিংহও। প্রথম দিনেই তিনি বিষয়টি নিয়ে সরব হন।

মোদীর বিরুদ্ধে এই ধরনের প্রচার নিয়ে অবশ্য প্রথম থেকেই দলের অন্দরে মতপার্থক্য ছিল। কংগ্রেসের মুখপাত্রদের বৈঠকেও বৈষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে অনেকেই প্রস্তাব দেন যে, নিচুতলার নেতারা এ বিষয়ে কথা বললেও দলের শীর্ষনেতাদের কিন্তু এ নিয়ে মুখ না খোলাই ভাল। কিন্তু তাঁদের সেই সব কথা গোড়ার দিকে সে ভাবে গুরুত্ব পায়নি।

হলফনামায় মোদীর স্ত্রী-র বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী শোভা ওঝাকে দিয়ে বিষয়টি তোলে কংগ্রেস। দলের অন্য মহিলা নেত্রীরাও এ বিষয়ে সরব হন। তখনও মোদী শিবির ভাবেনি যে, রাহুল নিজেও এই বিষয়টি তুলবেন। কিন্তু পর দিন মোদীকে কটাক্ষ করে রাহুল বলেন, “দিল্লিতে এসে মহিলাদের মর্যাদা নিয়ে, নিরাপত্তা নিয়ে এত কথা বলেন। অথচ এত ভোট মিটে যাওয়ার পরে নিজের স্ত্রী-র নাম লিখেছেন হলফনামায়!”

এর পরেই পাল্টা আক্রমণে নামে বিজেপি। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন বিজেপির অন্দরে মোদীর সেনাপতি হিসেবে পরিচিত অরুণ জেটলি। তাঁর কথায়, “আমাদের দেশে ভোটের সময় একটা অলিখিত বিধি রয়েছে যে, আমরা কখনওই রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের ব্যক্তিগত জীবনকে নির্বাচনে তুলে আনি না। এত দিন ধরে সেই বিধিটা ছিল। কিন্তু রাহুল গাঁধী সেই প্রথাটা ভাঙলেন। বিজেপি চাইলে অনেক কিছু বলতে পারে। কিন্তু আমরা বলব না।” অরুণ আইনজীবী। তাঁর প্রতিক্রিয়ার পরে কংগ্রেস বুঝতে পারে, এ বার পিছোতে হবে। তার মধ্যেই বিজেপি নেতা প্রকাশ জাভড়েকর কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন, “নেহরু থেকে রাহুল গাঁধী কংগ্রেস নেতাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমাদের কাছে অনেক তথ্য রয়েছে। সেগুলো আমরা নির্বাচনে প্রচারের বিষয় করব না।” এই অবস্থায় বিজেপির আক্রমণ ঠেকাতে বাধ্য হয়ে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন রাহুল। নিজের নির্বাচন কেন্দ্র অমেঠিতে গিয়ে তিনি বলেন, “এটা ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়। আমি আইনগত প্রশ্ন তুলেছি।” প্রিয়ঙ্কা বঢরাও রাহুলের পক্ষ সমর্থনে মুখ খোলেন।

বিজেপি নেতারা এখন যা-ই বলুন, এর আগে যে বিজেপি কংগ্রেসকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেনি, তা নয়। তখন বিজেপি কেন্দ্রে শাসক দল। বিজেপির অন্যতম নেতা প্রমোদ মহাজন এক বার সনিয়াকে তুলনা করেন মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে। সেই ঘটনাতে চরম অস্বস্তিতে পড়ে যায় দল। বিজেপিও বুঝতে পারে, তাদের আখেরে ক্ষতিই হচ্ছে। পরে অটলবিহারী বাজপেয়ীর নির্দেশে প্রমোদ ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন।

এই বিতর্কের মুখে মোদী নিজে কী বলছেন? মোদীর কথায়, “এর আগের বার স্ত্রী-র কথা বলা হয়নি তার কারণ, তখন সেটা বাধ্যতামূলক ছিল না। এখন বাধ্যতামূলক বলে লেখাও হয়েছে। এর কোনওটাই বেআইনি কাজ নয়। সে জন্য নির্বাচন কমিশন ওই হলফনামাটাকে স্বীকার করেছিল।” একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “কংগ্রেসের আপত্তি থাকলে সে দিন তারা কেন কিছু বলেনি? কমিশনের কাছেও যায়নি। আজ এত দিন পরে এই প্রশ্নটা তোলা অর্থহীন।”

যাঁকে নিয়ে যাবতীয় বিতর্ক, মোদীর সেই স্ত্রী যশোদাবেন গিয়েছেন চারধাম তীর্থ করতে। নির্বাচনের ফল যে দিন প্রকাশ হবে, তার ঠিক পরের দিন অর্থাৎ ১৭ মে তিনি গুজরাতে ফিরবেন। যশোদাবেনের ভাই অশোকভাই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, যশোদাবেন তাঁর স্বামীর জন্য পুজো দিতে গিয়েছেন। তাঁর পুজোর থালাতেও মোদীর ছবি থাকে। ফিরে এসে প্রয়োজনে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি। স্বামীর বিরুদ্ধে তাঁর কোনও অভিযোগও নেই।

কংগ্রেস নেতারা বুঝতে পারছেন, মোদীর স্ত্রী নিজে যখন কোনও অভিযোগ করছেন না, তখন কংগ্রেসের এই বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা করা উচিত নয়। তাতে লাভের তুলনায় ক্ষতির পাল্লাই বেশি ভারী হবে।

congress bjp loksabha election modi rahul
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy