কোনও বুথ ফেরত সমীক্ষাই আশার আলো দেখাচ্ছে না। তবু দলীয় স্তরে রাজ্যওয়াড়ি রিপোর্টকে খড়-কুটোর মতো আঁকড়ে ধরে বিকল্প জোট সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। এবং এ বিষয়ে সব থেকে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী।
১৯৮৯ সালে ১৯৬টি আসন পেয়ে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচিত হলেও কেন্দ্রে সরকার গড়তে রাজি হননি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী। তা হলে, স্রোতের বিপরীতে হাঁটতে এ বার এত আগ্রাসী কেন রাজীব-পত্নী? কংগ্রেস নেতাদের একাংশের মতে, এর নেপথ্যে অন্যতম কারণ সম্ভবত মাতৃস্নেহ!
দশ নম্বর জনপথের ঘনিষ্ঠরা মনে করছেন, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলে রাহুলের রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। ভোট-প্রচারেই রাহুলকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছেন মোদী। ক্ষমতায় এলে রাহুলের প্রাসঙ্গিকতা খতম করতে আরও সক্রিয় হবেন তিনি। শুধু তাই নয়, কংগ্রেস নেতাদের এ-ও ধারণা, রাহুলের পাশাপাশি প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও মোদীর নিশানা হবেন। কারণ, প্রিয়ঙ্কা সম্পর্কে এমনিতেই বিজেপিতে ভীতি রয়েছে। অমেঠী, রায়বরেলীতে প্রচার করতে গিয়ে এ বার প্রিয়ঙ্কা যে ভাবে বিজেপি তথা মোদীকে আক্রমণ করেছিলেন, তাতে কিছুটা চিন্তায় পড়ে যান বিজেপি নেতারা। সেই পরিস্থিতিতে তাঁরা রবার্ট বঢরার আর্থিক বৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলে প্রিয়ঙ্কাকে থামাতে চেষ্টা করেছিলেন। কংগ্রেস নেতাদের আশঙ্কা, বিজেপি ক্ষমতায় এলে আইন-আদালতের মাধ্যমে বঢরাকে আরও প্যঁাচে ফেলা হতে পারে। তার মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রিয়ঙ্কার আরও সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনাশ করে দিতে চাইবে বিজেপি। হতে পারে তাই বিকল্প সরকার গঠনের ভাবনা নিয়ে এতটাই সক্রিয় সনিয়া।
সেই লক্ষ্যে সনিয়া নিজেই মায়াবতী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তা ছাড়া, বিদেশে সফররত ইউপিএ-র শরিক নেতা শরদ পওয়ারের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে দ্রুত দেশে ফিরতে বলেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। দশ নম্বর জনপথের দূতেরা যোগাযোগ রাখছেন মুলায়ম সিংহ, নবীন পট্টনায়ক, জগন্মোহন রেড্ডি, চন্দ্রশেখর রাওয়ের মতো আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গেও।
বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, কংগ্রেস ৭০-৮০টির বেশি আসন পাবে না। কংগ্রেসের দাবি, এই সমীক্ষায় তাঁদের কোনও বিশ্বাস নেই। রাজ্যওয়াড়ি যে রিপোর্ট কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদকেরা সনিয়ার কাছে পেশ করেছেন তাতে বলা হয়েছে, বিজেপি ১৭০টির বেশি আসন পাবে না। ও এনডিএ ২০০টি আসনের বেশি এগোবে না। এতেই আশার আলো দেখছেন দলীয় নেতৃত্ব। তাই এনডিএ-র শরিক নয়, এমন দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে কংগ্রেস। সূত্রের খবর, কংগ্রেসের পাশাপাশি শরদ পওয়ারও এ ব্যাপারে সক্রিয়। এক কংগ্রেস নেতার কথায়, আঞ্চলিক দলগুলির নেতাদের সঙ্গে অনেক দিনের সম্পর্ক পওয়ারের। পওয়ার নিজে নবীন পট্টনায়ক এবং জগন্মোহন রেড্ডির সঙ্গে কথা বলেছেন। কংগ্রেস মুখপাত্র অজয় মাকেন বলেন, “আঞ্চলিক দলগুলির কোনও মোর্চাকে সমর্থন দেওয়া বা সমর্থন নেওয়ার সিদ্ধান্ত হাইকম্যান্ড এখনও নেয়নি। ভোটের ফলের ওপরেই তা নির্ভর করছে।”
তবে কংগ্রেসের কিছু নেতার মতে, জনাদেশ তাঁদের বিপক্ষে গেলে বিকল্প সরকার গঠনের ব্যাপারে সক্রিয় হওয়া ঠিক হবে না। বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হলে তাদেরই সরকার গড়তে দেওয়া উচিত। বিশেষ করে বিজেপি যদি ১৭০টি আসন পায় এবং জয়ললিতা বা নবীন পট্টনায়কের মতো নতুন শরিক দলের ওপর নির্ভরশীল হয়, তা হলে সেই সরকারকে স্বাগত জানানো উচিত হবে। কারণ, সেই পরিস্থিতিতে এটা ভুললে চলবে না যে দেশের মানুষের মনোভাব কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। তা সত্ত্বেও একটি অস্থির সরকার গড়তে চাইলে মানুষ আরও রুষ্ট হবে। বরং বিজেপিকে সরকার গড়তে গিয়ে তাদের দুর্বল পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy