Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শেষ লগ্নেও বিতর্কে বিদ্ধ মনমোহনের ‘নীরবতা’

পাঁচ বছর আগের ছবিটা ছিল একেবারে বিপরীত। লোকসভার ভোটে যাওয়ার আগে সে দিন কংগ্রেসের ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে সনিয়া গাঁধী জানিয়ে দিয়েছিলেন, মনমোহন সিংহই দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী। ভোটে বিপুল সাফল্যের পর তাঁকে কৃতিত্বও দিয়েছিল দল। অথচ আজ সাউথ ব্লক থেকে সেই মনমোহনেরই বিদায়ের দিনে আবেগের ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না কংগ্রেসে। বিদায়বেলায় মনমোহনকে খোঁটা দিতে ছাড়লেন না বিরোধীরাও।

মঙ্গলবার সাউথ ব্লকে কর্মীদের বিদায়ী শুভেচ্ছা জানালেন মনমোহন সিংহ। ছবি: পিটিআই

মঙ্গলবার সাউথ ব্লকে কর্মীদের বিদায়ী শুভেচ্ছা জানালেন মনমোহন সিংহ। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৪ ০২:৫৬
Share: Save:

পাঁচ বছর আগের ছবিটা ছিল একেবারে বিপরীত। লোকসভার ভোটে যাওয়ার আগে সে দিন কংগ্রেসের ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে সনিয়া গাঁধী জানিয়ে দিয়েছিলেন, মনমোহন সিংহই দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী। ভোটে বিপুল সাফল্যের পর তাঁকে কৃতিত্বও দিয়েছিল দল। অথচ আজ সাউথ ব্লক থেকে সেই মনমোহনেরই বিদায়ের দিনে আবেগের ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না কংগ্রেসে। বিদায়বেলায় মনমোহনকে খোঁটা দিতে ছাড়লেন না বিরোধীরাও।

প্রধানমন্ত্রী পদে এটাই যে তাঁর শেষ মেয়াদ, তা পাঁচ মাস আগেই ঘোষণা করেছিলেন মনমোহন। আজ সাউথ ব্লক থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নেন তিনি। প্রথমে তাঁর সচিবালয়ের কর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন মনমোহন। পরে তাঁর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকও হয় সাউথ ব্লকে।

এই বিদায়ের দিনেও প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করতে ছাড়েননি বিজেপি নেতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রী পদে মনমোহনের ‘দুর্বলতা’ই এ বারের নির্বাচনে অন্যতম ভোট অস্ত্র ছিল বিজেপি-র। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলির মতে, গত দশ বছরে দেশকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন মনমোহন। তাঁর কথায়, “প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সততা ও নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। নরসিংহ রাও জমানায় আর্থিক উদারীকরণের নীতির জন্যও ইতিহাস মনে রাখবে তাঁকে।” ‘এক জন প্রাজ্ঞ ব্যক্তি’ হিসেবে মনমোহনের প্রশংসা করলেও তাঁর সমালোচনা করতে ছাড়েননি জেটলি। তাঁর বক্তব্য, মনমোহন কোনও দিনই দলের ওপর কথা বলতে পারেননি। দেশের স্বার্থের কথা না ভেবেই নীরব থেকেছেন। জেটলির কথায়, “হয়তো এই কারণেই ইতিহাসবিদরা অন্য দৃষ্টিতে দেখবেন তাঁকে।”

জেটলি একা নন, মনমোহনের বিরুদ্ধে আজ একই ধরনের অভিযোগ তুলেছেন যোজনা কমিশনের বিদায়ী সদস্য অরুণ ময়রা-ও। আজই প্রকাশিত এক বইয়ে ময়রার অভিযোগ, মনমোহন শুধু নামেই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন সনিয়াই। তিনি লিখেছেন, “২০০৪ সালে চোখ ধাঁধানো জয় পেলেও সনিয়া গাঁধী প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তার বদলে তিনি একজন বিশ্বস্ত টেকনোক্র্যাট, মনমোহন সিংহকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য বেছে নেন। তবে সনিয়াই গুরুত্বপূর্ণ নীতি ও নিয়োগের বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিতেন।” মনমোহন-ঘনিষ্ঠ মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার নেতৃত্বাধীন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য অরুণ ময়রা পশ্চিমবঙ্গেরও দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। আজ বই প্রকাশের পর ময়রা জানান, তাঁর বই মূলত বিদায়ী সরকারের জমানায় নীতিপঙ্গুত্ব ও আর্থিক সংস্কারের ব্যর্থতার অভিযোগ নিয়ে। সেই প্রসঙ্গেই ক্ষমতার অন্দরমহলের এই সব কথা উঠেছে।

স্বাভাবিক ভাবেই জেটলি ও ময়রার মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। তাঁর বক্তব্য, বিজেপি-র শংসাপত্রের প্রয়োজন নেই মনমোহনের। বিজেপির বক্তব্যের বিরোধিতা করেন কংগ্রেস মুখপাত্ররাও। কিন্তু কংগ্রেসেরই অনেকে বলছেন, ওই সব বক্তব্য নেহাতই দায়সারা কিছু কথার কথা। এই অবস্থায় আজ প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে বলা হয়, আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাওয়ার আগে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দিতে পারেন মনমোহন। কিছু দিন আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “গত দশ বছর ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। আশা করি, আমার সম্পর্কে ভবিষ্যতে ইতিহাসবিদরা সদয় হবেন।” প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, অবসরের আগে আত্মপক্ষ সমর্থন করে আরও এক বার সেই বার্তা দিতে পারেন মনমোহন।

মজার বিষয় হল, এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিদায় নিয়ে কোনও প্রস্তুতিই ছিল না। কারণ, ২০০৪ সালে লোকসভা ভোটে বিজেপি-র ভরাডুবি ছিল অনেকের কাছে একেবারেই আকস্মিক ঘটনা। কিন্তু মনমোহন তাঁর বিদায় পঞ্জিকা আগেভাগেই তৈরি করে রেখেছেন। আজ সাউথ ব্লকে ছিল তাঁর শেষ দিন। কাল তাঁর সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। তার পর, পরশু দিন সাত রেস কোর্স রোডে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ছেড়ে তিন নম্বর মতিলাল নেহরু মার্গের নতুন বাড়িতে চলে যাবেন মনমোহন।

প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদ থেকে মনমোহন সরে দাঁড়াবেন শনিবার। শুক্রবার লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর নিজের বাসভবনে শনিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠক করবেন তিনি। তার পর সেই বৈঠক থেকেই সোজা তিনি রওনা দেবেন রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্দেশে। পদত্যাগপত্র জমা দিতে।

একটি সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার পরে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দিতে পারেন মনমোহন। তাঁর বিরুদ্ধে দলের একাংশের অসন্তোষ, বিরোধীদের সমালোচনা এ সবের জবাব হয়তো সে দিনই দেবেন মনমোহন সিংহ। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

manmohan singh south block
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE