সৌরবিদ্যুতের আলোয় সেজেছে বিভূতিভূষণের গৌরীকুঞ্জ। —নিজস্ব চিত্র।
কেউ আলো জ্বালেনি এতদিন। সূর্য ডোবার পর ঘুটঘুটে অন্ধকারে পরিচয়হীন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকত তিন কামরার বাড়িটা। কয়েক দশকের অবহেলা ও অযত্নের অবসান হল শনিবার সন্ধ্যায়। ঘাটশিলার ডাহিগোড়ায় সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এত কাল যাবৎ নিষ্প্রদীপ বসতবাড়িতে অবশেষে বিদ্যুতের আলো জ্বলল। একই সঙ্গে সেখানে বসল সাহিত্যিকের আবক্ষ মূর্তি, যাতে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ডের পাহাড়-জঙ্গল-নদী ঘেরা এই জনপদে এসে বুঝতে অসুবিধে না-হয় বাড়িটা ‘আরণ্যক’-এর স্রষ্টারই।
যাঁর সাহিত্যে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে প্রকৃতি, তাঁর বাসস্থানকে আলোকিত করার ব্যবস্থা হয়েছে প্রাকৃতিক ভাবেই। সৌরবিদ্যুতের ১০টি আলো জ্বলবে বিভূতিভূষণের বাসভবনে।
বাড়িটার নাম ‘গৌরীকুঞ্জ’। প্রথম স্ত্রী গৌরীদেবীর স্মৃতিতেই ওই নামকরণ করেছিলেন বিভূতিভূষণ। ১৯৩৮ সালে। পাকাপাকি ভাবে না-থাকলেও ঘাটশিলায় লেখকের নিয়মিত যাতায়াত লেগেই থাকত। ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর রাতে গৌরীকুঞ্জেই মারা যান বিভূতিভূষণ।
‘পথের পাঁচালি’-র রচয়িতাকে স্মরণ করে ঘাটশিলার যে রাস্তার নাম রাখা হয়েছে ‘অপুর পথ’, সুবর্ণরেখা নদীর দিকে সেই রাস্তারই শেষে রয়েছে গৌরীকুঞ্জ। ঘাটশিলায় প্রায় ৭০ শতাংশ বাংলাভাষী মানুষের বসবাস। তা সত্ত্বেও বহুকাল ধরেই জরাজীর্ণ, ভগ্ন অবস্থায় পড়ে থাকতে থাকতে এক সময়ে প্রায় অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল গৌরীকুঞ্জ। শেষমেশ ২০০৮-এর অক্টোবরে স্থানীয় কয়েকটি ক্লাব মিলেমিশে বিভূতিভূষণের স্মৃতিকে বাঁচানোর কাজে হাত দেয়। সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তৈরি হয় ‘গৌরীকুঞ্জ উন্নয়ন সমিতি’। বাড়ি সংস্কারের পর এ বার ওই সমিতিরই সহযোগিতায় এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে আলোর ব্যবস্থা ও সাহিত্যিকের মূর্তি বসেছে।
এই উপলক্ষ্যে গৌরীকুঞ্জের চত্বরে শনিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির সদস্য অনিন্দ্য চক্রবর্তী বলেন, “মাস কয়েক আগে বিকেলের পর গৌরীকুঞ্জে এসে অন্ধকার থাকায় কিছু দেখতে না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আলোর ব্যবস্থার পরিকল্পনা।” গৌরীকুঞ্জ উন্নয়ন সমিতি-র সভাপতি তাপস চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এই উদ্যোগে বেশি পর্যটক টানা যাবে।”
অনুষ্ঠানে ‘নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন’-এর সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত ঘোষ বলেন, “পর্যটনের পরিকাঠামোর কোনও বিকাশই ঘাটশিলায় হয়নি।” ঘাটশিলার চালু হোটেল বলে পরিচিত, কাশিদা অঞ্চলের একটি রিসর্ট-এর ম্যানেজার অমরেন্দ্র মিত্রও একমত, “শুধু পরিকাঠামোর কিছু উন্নয়ন কিন্তু গোটা ঘাটশিলার চেহারাই বদলে দিতে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy