পার্লামেন্টের বাইরে বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি।
এক দিনে বিশ লক্ষ বেড়ে হয়েছে প্রায় সাড়ে তিরিশ লক্ষ। ব্রেক্সিট ভোটের বিরুদ্ধে অনলাইন আবেদনে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংখ্যাটা। ব্রিটেনের পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে রবিবার সকাল পর্যন্ত স্বাক্ষর করেছেন অন্তত ৩০ লক্ষ ৪৮ হাজার মানুষ। প্রথম দিকে সইয়ের বন্যায় ক্র্যাশ করে যায় পার্লামেন্ট.ইউকে ওয়েবসাইট।
বিলিতি নিয়ম অনুযায়ী, কোনও বিষয়ে এক লক্ষ সই জমা প়ড়লেই তা পার্লামেন্টে উঠবে। এ বিষয়ে তেমনটা হবে কি না, নিশ্চিত ছিল না কাল পর্যন্তও। তবে উপচে পড়া ব্রেক্সিট বিরোধী স্বাক্ষর নিয়ে পার্লামেন্টে ফের আলোচনা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কনজারভেটিভ এমপি বেন হাউলেট। টুইটারে তিনি বলেছেন, হাউস অব কমন্সের আবেদন সংক্রান্ত সিলেক্ট কমিটিতে আগামী মঙ্গলবার এই অনলাইন আবেদন নিয়ে আলোচনা হবে।
বেনের কথায়, ‘‘এই পাগলামি আমরা থামাতে পারি। পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে এই দুঃস্বপ্নের শেষ হতে পারে। ব্রেক্সিট তো হলো। আমরা সত্যিই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যেতে চাই কি না, তা ফের ভোটের মাধ্যমেই স্থির করা হোক।’’ প্রাক্তন লেবার প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও বলেছেন, আর এক বার গণভোটের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ব্রেক্সিটে নিজেদের পালে হাওয়া টানার পরে এই পট বদলে স্বভাবতই অখুশি ইউকেআইপি-র নেতা নাইজেল ফারাজ।
এক দিকে ফের ইইউ-এ থাকার জন্য ফের গণভোটের দাবি আর অন্য দিকে ব্রিটেনের স্বাধীনতা ঘোষণার দাবিতে স্বাক্ষর অভিযান চলছে ব্রেক্সিটপন্থীদের। তবে ব্রেক্সিট বিরোধীদের তুলনায় তাঁরা অনেকটাই পিছিয়ে। সই জমা পড়েছে এক লক্ষ।
ব্রিটেনে যখন ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে এত রকম টানাপড়েন, তখন খোদ ইইউ-ও সুর চড়ানো থেকে পিছু হটছে না। কাল যেমন তারা ব্রিটেনের উদ্দেশে বলেছিল, এখনই চলে যাও। রবিবার ইইউ নেতারা আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, আনুষ্ঠানিক চিঠিচাপাটিরও দরকার নেই। যা বলার মুখেই বলে দিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ইইউ-এর সঙ্গে বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া নিয়ে এখনও কোনও পদক্ষেপ করেননি ডেভিড ক্যামেরন। আগামী মঙ্গলবার একটি শীর্ষ সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়ার কথা তাঁর। ইইউ নেতাদের বক্তব্য, সেখানেই তো ক্যামেরন যা বলার বলতে পারেন। এক নেতার বক্তব্য, ‘‘(ব্রেক্সিট ঘিরে যা চলছে) লিখেই জানাতে হবে এমন নয়, শুধু মুখেই বলে দিন উনি।’’
এর মধ্যে চাপ আরও বাড়িয়েছে বিরোধী দল, লেবার পার্টির অন্দরের বিদ্রোহ। দলের নেতা জেরেমি করবিনের উপরে বেশ কয়েক জন আস্থা হারিয়েছেন বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ইইউ-এ থাকতে চাওয়ার জন্য প্রচার যতটা জোরদার হওয়া দরকার ছিল, লেবার নেতা করবিনের মধ্যে সেই উদ্যম চোখে পড়েনি বলে দাবি করছেন অনেকেই। তার জেরে বিরোধী শিবিরের ছায়া মন্ত্রিসভায় (শ্যাডো ক্যাবিনেট) অস্তিত্বের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে প্রথমে করবিন নিজেই ছায়া বিদেশমন্ত্রী হিলারি বেনকে সরিয়ে দেন। তার পরেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছায়ামন্ত্রী (শুল্ক) সীমা মলহোত্র-সহ সাত জন পদত্যাগ করেন। ব্রেক্সিট নিয়ে মুখ পোড়ায় করবিনকে যথেচ্ছ গোলার মুখে পড়তে হয়েছে। তার পরেও তিনি পদত্যাগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। পরে একটি টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকারে হিলারি বেন বলেন, ‘‘জেরেমি দলের নেতা থাকলে সাধারণ নির্বাচনে আমাদের জেতার আশা নেই।’’
বিক্ষোভ-অসন্তোষ-উদ্বেগ নিয়ে ব্রিটেনকে কাটাতে হবে আরও একটা দিন। সবাই তাই এখন তাকিয়ে মঙ্গলবারের দিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy