জারি হয়েছে জরুরি সতর্কতা। তার মধ্যেই সংক্রমণ এড়াতে মাস্ক পরে চিনা নববর্ষ উদ্যাপন। শনিবার হংকংয়ের এক মন্দিরে। এএফপি
১৭, ২৬, ৪১... নোভেল করোনাভাইরাসের হানায় চিনে প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। আক্রান্ত হাজারের বেশি। সন্দেহের তালিকায় আরও দু’হাজার। এর মধ্যে ২৩৭ জনের অবস্থা রীতিমতো আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে চিনের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা। এই পরিস্থিতিতে রোগের উৎসস্থল উহান শহরে আটকে থাকা ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য চিনের কাছে অনুরোধ জানাল ভারত সরকার।
আমেরিকাকে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে বেজিং। একটি বিশেষ বিমানে করে উহানে কর্মরত মোট ২৩০ জন মার্কিন নাগরিক ও কূটনীতিককে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা। ভারতও তাই চায়। উহান-সহ চিনের হুবেই প্রদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এমন অন্তত ৭০০ ভারতীয় পড়ুয়া আটকে রয়েছেন সংক্রমিত শহরগুলোয়। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে চিনের ভারতীয় দূতাবাস। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে আজ বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি পি কে মিশ্র। ভারতে এখনও পর্যন্ত সংক্রমণের খবর না মিললেও আজ চিন-ফেরত আরও ৭ জনকে হাসপাতালে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কেরলে এ ভাবে নজরবন্দি অন্তত ৯০ জন।
আজ ছিল চিনা নববর্ষ। নতুন বছরের এই সময়টা উৎসবে সাজে গোটা দেশ। চিনে ফেরেন লক্ষ লক্ষ প্রবাসী। কিন্তু এ বারে কোথায় কী! রাস্তাঘাট জনশূন্য, দোকানপাট বেশির ভাগ সময়ই ঝাঁপ বন্ধ, সিনেমা হলে লোক নেই, ফাঁকা রেস্তরাঁ। ওষুধের দোকানগুলোয় শুধু লম্বা লাইন। আতঙ্কিত চিন দিশাহারা কী ভাবে এই ভাইরাস-হামলার মোকাবিলা করবে। গত কাল পর্যন্ত ১৩টি শহরকে ‘বন্দি’ করা হয়েছিল। আজ সেই সংখ্যাটা আরও বাড়ানো হল। মোট ১৮টি শহর এখন ‘তালাবন্ধ’। আটক অন্তত ৫ কোটি ৬০ লক্ষ বাসিন্দা। পরিবহণ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে ওই শহরগুলোর। বেশ কিছু গাড়ি বন্দি শহরগুলো ছেড়ে বেরনোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়। মাঝপথ থেকে ইউ-টার্ন করে ফিরে যেতে হয় তাদের। কড়া পাহারা। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘কেউ পালাতে পারবেন না।’’ চিন এখনও সরকারি ভাবে ঘোষণা না করলেও ‘জরুরি অবস্থা’ জারি করে দিয়েছে হংকং।
কিন্তু এত সব করেও মৃত্যুমিছিল থামছে না। এ পর্যন্ত চিনে মৃত ৪১ জনেরই মৃত্যু হয়েছে নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গ নিয়ে। এর মধ্যে ৩৯ জনই হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। সরকারি নির্দেশ মেনে বিমানবন্দর, রেল স্টেশন, বাস স্ট্যান্ডগুলোয় নজরদারি শিবির তৈরি করা হয়েছে। কারও মধ্যে এতটুকু নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গ দেখা গেলেই তাঁকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক-নার্সদেরও সাবধান থাকতে বলা হয়েছে। সব সময় মাস্ক পরে থাকতে বলা হচ্ছে তাঁদের। শ্বাসপ্রশ্বাসে এই রোগ ছড়ায়। ফলে সব চেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। ইতিমধ্যেই হুবেই প্রদেশ থেকে এক চিকিৎসকের মৃত্যুর খবর মিলেছে। শনিবার তিনি মারা যান। মৃত ৬২ বছর বয়সি লিয়াং উডং শিনহুয়া হাসপাতালের শল্যচিকিৎসক ছিলেন। ভাইরাসের উৎসস্থল উহান শহরের একটি হাসপাতালে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল। গত সপ্তাহে তিনি সংক্রমিত হন। এই প্রথম ভাইরাস-হানায় কোনও চিকিৎসকের মৃত্যুর খবর মিলল।
চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম শনিবার জানিয়েছে, উহান শহরে সেনাবাহিনীর চিকিৎসক মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁরা স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাহায্য করছেন। এর পাশাপাশি উহানে হাজার-শয্যার একটি বিশেষ হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে। দশ দিনের মধ্যে ২৫ হাজার বর্গফুটের হাসপাতালটি নির্মাণ করতে ডজনখানেক কর্মী দিনরাত এক করে কাজ করে যাচ্ছেন।
রোগের উৎস বলে সন্দেহ করা হচ্ছে সি-ফুড ও মাছ-মাংসের বাজারকে। অভিযোগ বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণীর মাংস বেআইনি ভাবে বিক্রি করা হত এই সব বাজারে। সব চেয়ে বেশি সন্দেহ, কালাচ ও কোবরা থেকে নোভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, ২০০২-২০০৩ সালে সার্সের অভিজ্ঞতার পরেও কী ভাবে এক পরিস্থিতি। সার্সও একই ভাবে বুনো জন্তু-জানোয়ার খাওয়া থেকেই ছড়িয়েছিল চিনের গুয়াংঝৌয়ে। সাড়ে আটশো লোক মারা গিয়েছিলেন সে বার। চিনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ, তাদের খাদ্যাভাসের জন্য বহু প্রজাতির প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। এ বারের ভাইরাস হানার পরে বন্যপ্রাণী নিয়ে ব্যবসায় কড়া নিয়ন্ত্রণের কথা ঘোষণা করেছে বেজিং সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy