প্রতীকী চিত্র।
টানা ৫২ বছরের যুদ্ধে অগত্যা পূর্ণচ্ছেদের ইঙ্গিত কলম্বিয়ায়। স্থানীয় সময় সোমবার মাঝরাতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার কথা ঘোষণা করল দেশের বামপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘দ্য রেভোলিউশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলম্বিয়া (ফার্ক)। সরকারের তরফে যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশ এসেছিল দিন চারেক আগেই। এ বার তাতে সায় দিলেন ফার্ক নেতা টিমোলিওন হিমেনেজ।
তাঁর ঘোষণা, ‘‘পারস্পরিক প্রতিহিংসা আর বিদ্বেষ এখন অতীত। যুদ্ধে নিহত সন্তানের লাশ আর বইতে হবে না কাউকেই।’’ দু’পক্ষের মধ্যে চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হওয়ার কথা ২০ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। ২ অক্টোবরের গণভোটে স্থির হবে দেশের ভবিষ্যৎ। আপাতত তাই শুধুই ‘শান্তি-মহড়া’।
শান্তি ফেরানোর এই পর্ব শুরু হয়েছিল ২০১২-য়। কিউবার রাজধানী হাভানায় চার বছর ধরে চলে ধারাবাহিক শান্তি-বৈঠক। বিস্তর আলোচনার পরে সেই হাভানা থেকেই অস্ত্র তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করল ফার্ক। সংবাদমাধ্যমের সামনে তাদের নেতা টিমোলেন বলেন, ‘‘আমি আমার দলের প্রতিটি সদস্যকে এখন থেকেই কলম্বিয়া সরকারের বিরুদ্ধে সব ধরনের হামলা বন্ধের নির্দেশ দিচ্ছি।’’ তিনি জানান, সরকারি তরফে যুদ্ধবিরতির আশ্বাস পেয়েই এই সিদ্ধান্ত। এই মুহূর্তে ফার্কের গেরিলা যোদ্ধার সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত হাজার। সূত্রের খবর, নেতার নির্দেশ মোতাবেক এরই মধ্যে তাঁরা রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে অস্ত্র-সহ আত্মসমর্পণ করতে শুরু করেছেন। গত বুধবারই হাভানা থেকে যৌথ ভাবে যুদ্ধবিরতির কথা ঘোষণা করা হয়। এ বার হামলা বন্ধের নির্দেশ এল বিদ্রোহীদের তরফে।
প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়্যাল স্যান্টোসও যেন এই ঘোষণার অপেক্ষাতেই ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার ফার্কের উপর হামলা বন্ধের ডিক্রি জারি করেন তিনি। যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল সোমবার মাঝরাত থেকে। বিদ্রোহীদের থেকে তাতে ইতিবাচক সাড়া পেয়েই তিনি টুইটারে লেখেন, ‘‘ঐতিহাসিক দিন আজ। অবশেষে দ্বন্দ্ব মিটল দু’পক্ষের।’’
সত্যিই কি মিটল? আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহলের একাংশ এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নন। কলম্বিয়ার লা শাবাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং দেশের প্রথম সারির নিরাপত্তা বিশ্লেষক কার্লোস আলফোনসো ভেলাজকুয়েজের দাবি, ‘‘যুদ্ধবিরতির এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। আবার একটা পরীক্ষাও বটে।’’
তাই দু’পক্ষের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি সই ও তার পরের অধ্যায় ঘিরে সংশয় থাকছেই। থাকারই কথা। যুদ্ধটা যে ৫২ বছরের!
১৯৬৪ সালে কলম্বিয়া সরকারে দ্বিচারিতা এবং বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে প্রথম অস্ত্র তুলে নেয় সে দেশের কমিউনিস্ট পার্টির সশস্ত্র সংগঠন। প্রাথমিক পর্বে মূলত ছোট কৃষক এবং শ্রমজীবীরাই তিল-তিল করে গড়ে তোলে দেশের সব চেয়ে বড় বিদ্রোহী গোষ্ঠী— ফার্ক। ২০০২-এ তাদের যোদ্ধার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় বিশ হাজারে। যার মধ্যে একটা বড় অংশ আসে শহুরে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকেও। ফার্ক জন্ম নেওয়ার আগেও টানা ১০ বছর গৃহযুদ্ধের আঁচ পোয়াতে হয়েছে কলম্বিয়াকে। যদিও কলম্বিয়া সরকারের দাবি, পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফার্ক-ই তাদের সব চেয়ে বেশি বেগ দিয়েছে।
দীর্ঘ সময় ধরে দু’পক্ষই অনড় ছিল। ২০০৮-এ দেওয়ালে পিঠ ঠেকতে শুরু করে ফার্কের। কূটনীতিকদের দাবি, এর পর থেকেই সমঝোতার কথা ভাবতে শুরু করে বিদ্রোহীরা। হাভানায় শুরু হয় শান্তি প্রক্রিয়া। তত দিনে অবশ্য বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘমেয়াদী এই যুদ্ধের জেরে মারা গিয়েছেন আড়াই লক্ষেরও বেশি। ঘরছাড়া হয়েছেন প্রায় ৭০ লক্ষ। ৫২ বছরের যুদ্ধ শেষের আশায় এ বার তাঁরাও ফিরতে চাইছেন আগের ঠিকানায়। বাঁচতে চাইছেন শান্তিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy