Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
New Zealand Attack

‘হাতের মেশিনটাই ছুড়ে মেরেছিলাম বন্ধুকবাজকে’ বলছেন নিউজিল্যান্ড হামলার প্রত্যক্ষদর্শী

কী ভাবে চোখের সামনে নিথর হয়ে পড়ে ছিল মানুষগুলো, চারপাশটা রক্তে ভেসে যাচ্ছিল, তারই বর্ণনা দিচ্ছিলেন ক্রাইস্টচার্চের লিনউড মসজিদে হামলার প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল আজিজ।

হামলাকারীকে সুকৌশলে আটকে দিয়েছিলেন এই আব্দুল আজিজ।

হামলাকারীকে সুকৌশলে আটকে দিয়েছিলেন এই আব্দুল আজিজ।

সংবাদ সংস্থা
ক্রাইস্টচার্চ শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ১৭:৪৯
Share: Save:

সুঠাম দেহের প্রায় ৬ ফুট উচ্চতার মানুষটির চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। ঘটনাটা বর্ণনা করতে গিয়ে থেকে থেকেই শিউরে উঠছিলেন তিনি। কী ভাবে চোখের সামনে নিথর হয়ে পড়ে ছিল মানুষগুলো, চারপাশটা রক্তে ভেসে যাচ্ছিল, তারই বর্ণনা দিচ্ছিলেন ক্রাইস্টচার্চের লিনউড মসজিদে হামলার প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল আজিজ। হামলাকারীর বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। আর তাঁর জন্যই সে দিন বেঁচে গিয়েছিল বহু প্রাণ।

শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নুর ও লিনউড মসজিদে হামলা চালায় অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত ব্রেন্টন ট্যারান্ট। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে ৫০ জনকে। ব্রেন্টন প্রথম হামলাটা চালিয়েছিল আল নুর মসজিদে। সেখানে ৪১ জনকে গুলি করে মারে। এর পর লিনউড মসজিদে হানা দেয় সে।

লিনউড মসজিদে তখন বহু মানুষ প্রার্থনায় ব্যস্ত ছিলেন। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন বছর আটচল্লিশের আফগান শরণার্থী আব্দুল আজিজ। চার ছেলেকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আব্দুল জানান, প্রার্থনা চলাকালীন হঠাত্ই বাজি ফাটার মতো আওয়াজ শুনতে পান। আওয়াজটা আসছিল মসজিদের বাইরে থেকে। কী হয়েছে দেখার জন্য প্রার্থনা ছেড়ে মসজিদের বাইরে বেরিয়ে আসেন। তাঁর হাতে ছিল ক্রেডিট কার্ড প্রসেসিংয়ের একটা ছোট মেশিন।

আজিজ বলেন, “বাইরে বেরিয়েই দেখি একটা সশস্ত্র লোক সেনা পোশাকে এগিয়ে আসছে মসজিদের দিকে। প্রথমে একটু ধন্দে পড়েছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না লোকটার উদ্দেশ্যটা কী। তবে বুঝতে বেশি সময় লাগেনি।” যত ক্ষণে তাঁর উপলব্ধি হয়েছিল, তত ক্ষণে ব্রেন্টন মসজিদের অনেকটাই কাছে চলে এসেছিল। ওকে এখনই থামানো দরকার। না হলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে! আব্দুল বলেন, এ কথা ভেবেই আততায়ীর দিকে হাতে থাকা মেশিনটা ছুড়ে মারি। আমার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করি। আব্দুলের দিকে তাকিয়েই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে ব্রেন্টন। কিন্তু সেটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

আরও পড়ুন: ব্রেন্টনকে আটকানো পাক নায়কের মৃ্ত্যু

আরও পড়ুন: ক্রাইস্টচার্চ কাণ্ডে নিহত পাঁচ ভারতীয়, মৃত্যু বেড়ে ৫০

আরও পডুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কখনও এ গাড়ির পিছনে, কখনও ও গাড়ির পিছনে লুকোচ্ছিলেন আব্দুল। আর চিত্কার করে বলছিলেন ‘আমি এখানে’। মসজিদের ভিতরে থাকা মানুষগুলোকে বাঁচাতে এ ভাবেই হামলাকারীকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছিলেন আব্দুল আজিজ। তত ক্ষণে মসজিদের ভিতরে চাউর হয়ে গিয়েছিল হামলা হয়েছে। আব্দুল বলেন, “হামলাকারীর সঙ্গে যখন লুকোচুরি খেলা চলছিল, সে সময়ই মসজিদের ভিতর থেকে ছেলেরা চিত্কার করে বলছিল বাবা ভিতরে চলে এসো। কিন্তু উপায় ছিল না।”

এ গাড়ি ও গাড়ির পিছনে লুকোচুরি খেলতে খেলতে আব্দুল পৌঁছে যান ব্রেন্টনের গাড়ির কাছে। সেখানেই ব্রেন্টনের ব্যবহার করা একটা ফাঁকা শটগান পড়েছিল। এক মুহূর্ত না ভেবে সেটাকেই হাতে তুলে নেন আব্দুল। বন্দুকটা হামলাকারীকে দেখিয়ে চিত্কার করে বলতে থাকেন, ‘এ দিকে আয়’। মসজিদের ভিতরে থাকা তাঁর ছেলেদের এবং বাকি মানুষগুলোকে বাঁচাতেই এই কৌশলটা নিতে হয়েছিল বলে জানান আব্দুল। তিনি বলেন, “আমার হাতে বন্দুক দেখে জানি না কী মনে হল, হামলাকারী নিজের বন্দুকটা মাটিতে ফেলে দিল। যেই না মাটিতে বন্দুকটা ফেলেছে সে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে তাকে তাড়া করতে শুরু করি আমার হাতে ধরা বন্দুকটা নিয়ে। আমার হাতে বন্দুকটা দেখে হামলাকারী ভয় পেয়ে গিয়েছিল।” আব্দুলের তাড়া খেয়ে গাড়ি নিয়ে পালায় ব্রেন্টন।

কিন্তু মসজিদে ফিরে এসে যে ভয়ানক দৃশ্যটা দেখতে হবে কল্পনা করতে পারেননি আব্দুল। তাঁর ছেলেরা হামলায় বেঁচে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু তত ক্ষণে সাত জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই দৃশ্য দেখে প্রচন্ড মুষড়ে পড়েছিলেন তিনি। বলেন, “বহু মানুষই হামলাকারীকে বন্দুকবাজ বলছে। কিন্তু মানুষ কখনও কাউকে আঘাত করতে পারে না। ও মানুষ নয়। ও ভীরু, কাপুরুষ।”

আব্দুল বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু সে ভাগ্য হয়নি পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদ থেকে আসা নইম রশিদের। আল নুর মসজিদে ছেলে তালহার সঙ্গে ছিলেন নইম। ব্রেন্টন যখন হামলা চালায় মসজিদে, অন্য মানুষগুলোকে বাঁচাতে তাঁকে জাপটে ধরেছিলেন। বন্দুক না নামানো পর্যন্ত তাকে চেপে ধরে রাখেন। কিন্তু ব্রেন্টনের গুলিতে গুরুতর জখম হন তিনি। পরে হাসপাতালে মারা যান। তাঁর ছেলে তালহাও হামলাকারীর গুলিতে নিহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, নইম যদি ওই সময় হামলাকারীকে আটকে না দিত তা হলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ত।

(সব গুরুত্বপূর্ণআন্তর্জাতিক খবরজানতে চোখ রাখুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE