Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
International News

মলদ্বীপে সেনা পাঠাক ভারত, অনুরোধ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নাশিদের

গত ২৪ ঘণ্টায় মলদ্বীপের পরিস্থিতি যে দিকে গড়িয়েছে, তার প্রেক্ষিতেই বিবৃতি জারি করেছেন প্রধান বিরোধী দল এমডিপি-র নেতা তথা দ্বীপরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। মলদ্বীপের সঙ্কট কাটানোর জন্য ‘খুব দ্রুত পদক্ষেপ করুক’ ভারত— অনুরোধ করেছেন মহম্মদ নাশিদ।

কলম্বো থেকে বিবৃতি দিয়েছেন মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। মলদ্বীপের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে ভারত সেনা পাঠাক, অনুরোধ নাশিদের। ছবি: এএফপি।

কলম্বো থেকে বিবৃতি দিয়েছেন মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। মলদ্বীপের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে ভারত সেনা পাঠাক, অনুরোধ নাশিদের। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
কলম্বো শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২০:৪৯
Share: Save:

নিজের দেশে প্রবল রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটাতে ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপ চাইলেন মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাশিদ। অত্যন্ত দ্রুত পদক্ষেপ করুক ভারত, অবিলম্বে মলদ্বীপে সেনা পাঠাক— অনুরোধ নাশিদের। প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যের পরে ভারতও মলদ্বীপের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দ্বীপরাষ্ট্রটির ঘটনাপ্রবাহের দিকে খুব সতর্ক ভাবে নজর রাখা হচ্ছে বলে নয়াদিল্লির তরফে জানানো হয়েছে।

এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কায় রয়েছেন মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নাশিদ। তাঁর দল মালদিভিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও (এমডিপি) শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকেই কাজ চালাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মলদ্বীপের পরিস্থিতি যে দিকে গড়িয়েছে, তার প্রেক্ষিতেই বিবৃতি জারি করেছেন প্রধান বিরোধী দল এমডিপি-র নেতা তথা দ্বীপরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। মলদ্বীপের সঙ্কট কাটানোর জন্য ‘খুব দ্রুত পদক্ষেপ করুক’ ভারত— অনুরোধ করেছেন মহম্মদ নাশিদ।

‘‘মলদ্বীপের সাধারণ মানুষের তরফ থেকে আমার বিনীত অনুরোধ: বিচারকদের এবং রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্ত করার জন্য ভারত দূত পাঠাক, সঙ্গে সেনাবাহিনীও পাঠাক।’’ টুইটারে এই কথাই লিখেছেন মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট।

আরও পড়ুন: ভারসাম্য রাখতেই প্যালেস্তাইনে মোদী

গত কাল অর্থাৎ সোমবার মলদ্বীপে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন। সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত করে যে সব বিরোধী নেতাদের আটকে রেখেছেন ইয়ামিন, তাঁদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে বলেছিল মলদ্বীপের সুপ্রিম কোর্ট। গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দেয়। যে ১২ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির পদ খারিজ করে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন, তাঁদের পার্লামেন্টে ফেরত নেওয়ার নির্দেশও জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। যে জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করা হয়েছিল, তাঁদের পুনর্বহাল করা হলে মলদ্বীপের পার্লামেন্টে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের দল। ফলে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইয়ামিনের অপসারণের তোড়জোড় শুরু হয়ে যাবে। আর দীর্ঘ দিন ধরে যে বিরোধী নেতাদের আটকে রাখা হয়েছে, তাঁদের মুক্তি দেওয়া হলে ইয়ামিন সরকারের বিরুদ্ধে চলতে থাকা আন্দোলন আরও সংগঠিত হবে। প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন তাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানতে রাজি হননি। দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন তিনি। তাঁর নির্দেশে আদালতে হানা দিয়েছে সেনা, গ্রেফতার করা হয়েছে দুই শীর্ষ বিচারপতিকে।

মহম্মদ নাশিদের সমর্থনে তথা প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের বিরুদ্ধে জনমত ক্রমশ তীব্র হচ্ছে মলদ্বীপে। ছবি: এএফপি।

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নাশিদ এই পরিস্থিতি নিয়ে প্রবল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টকে বরখাস্ত করে এবং মৌলিক স্বাধীনতা নিষিদ্ধ করে যে ঘোষণাপত্র জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন, তা মলদ্বীপে সামরিক শাসন জারি করার সামিল। এই ঘোষণাপত্র অসাংবিধানিক এবং বেআইনি। এই নির্দেশ মানার কোনও প্রয়োজন নেই, মানা উচিতও নয়।’’ নাশিদ আরও বলেছেন, ‘‘তাঁকে (ইয়ামিন) ক্ষমতা থেকে সরাতেই হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছ থেকে, বিশেষত ভারত ও আমেরিকার কাছ থেকে, মলদ্বীপের মানুষ সাহায্য চাইছে।’’ মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে ইয়ামিন সরকারের সঙ্গে সব লেনদেন বন্ধ করে দেয়, তার জন্যও অনুরোধ করেছেন নাশিদ।

আরও পড়ুন: দিল্লির সঙ্গে ভাল সম্পর্ক চায় তালিবান

ভারতের তরফে গোটা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। মলদ্বীপে এই রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভারত অত্যন্ত বিচলিত এবং পরিস্থিতির দিকে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে বলে নয়াদিল্লি জানিয়েছে।

ভারতের সামরিক হস্তক্ষেপ যিনি চেয়েছেন, সেই মহম্মদ নাশিদ মলদ্বীপের প্রথম গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কিন্তু ২০১৩-র নির্বাচনে তিনি সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হন। ক্ষমতায় আসেন আবদুল্লা ইয়ামিন। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিরোধী পক্ষের উপর ভয়ঙ্কর দমননীতি প্রয়োগ করতে শুরু করেছেন ইয়ামিন। সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত করে বিরোধী পক্ষের প্রায় সব শীর্ষনেতাকে আটকে রাখা হয়েছে। তাঁদেরই অন্যতম মহম্মদ নাশিদ। প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৬-র জানুয়ারিতে নাশিদকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছিল ইয়ামিনের সরকার। সেই থেকেই নাশিদ ব্রিটেনের রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। তবে সম্প্রতি তিনি ব্রিটেন থেকে শ্রীলঙ্কায় এসেছেন এবং নিজের দেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের উপর নজর রাখছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE